|
|
|
|
|
এই প্রজন্মের ভিভ
কিন্তু বিরাটই দীপ দাশগুপ্ত |
|
বিরাট কোহলির নতুন রেকর্ডের পর শুক্রবার রাতে ওর অনেক গুণমুগ্ধ ভক্তকেই একটা প্রশ্ন করতে দেখছি। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভিভ রিচার্ডসের মতো কি বিরাটও গ্রেট? নাকি স্রেফ বিখ্যাত ক্যারিবিয়ানের সংখ্যার রেকর্ডটা ছুঁল, শ্রেষ্ঠত্ব নয়?
দেখুন, আমি কোনও তুলনায় যাব না। ভিভের মতো এ দিন ১১৪ ওয়ান ডে ইনিংসে বিরাট পাঁচ হাজার রান করল ঠিকই, কিন্তু দু’জনের মধ্যে তুলনা হয় না। ভিভ একটা প্রজন্মের প্রতিনিধি ছিল। বিরাট আরেকটা। মাঝের সময় ক্রিকেট অনেক পাল্টেছে, নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। তা ছাড়া দু’জনের মধ্যে যুদ্ধ আদৌ হয় কি না, সেটা বলারও আমি কেউ নই। ভারতের হয়ে যতটুকু যা ক্রিকেট খেলেছি, সেই বিচারে বলতে হলে বলব, তুলনা নয়, বরং ভিভের মতো ওয়ান ডে গ্রেটদের সরণিতে এখন বিরাটকেও ঢুকিয়ে ফেলার সময় এসেছে। বিভিন্ন প্রজন্মের ওয়ান ডে সেরাদের নাম যদি করতে হয়, তা হলে ভিভ, সচিন, সৌরভদের সঙ্গে বিরাটের নামটাও মনে হয় করতে হবে। আমি তো বলব, বর্তমান প্রজন্মের ‘ভিভ’ আমাদের বিরাটই।
কেন বলছি? রেকর্ডবুক ছাড়াও আরও কয়েকটা কারণ আছে। ওকে দেখে সন্দেহ হয় ক্রিকেটে বড় রান তোলার চাপ, কঠিন উইকেট, এ সবের অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না? অস্ট্রেলিয়া সাড়ে তিনশো রান সামনে ছুড়ে দিলে অবলীলায় ছেলেটা ৫২ বলে সেঞ্চুরি করে যায়, ম্যাচ শেষ করে দেয় আট ওভার আগেই। আবার কঠিন উইকেটেও স্ট্রাইক রেটটা অনায়সে একশোর বেশি রেখে দেয়। |
বিরাট-বিক্রম। বৃহস্পতিবার কোচিতে। |
কোচির উইকেটে ব্যাট করা যে সহজ ছিল না, রোহিতকে বলতে শুনলাম। সেখানে বিরাট ৮৬ করে বেরিয়ে গেল কোনও রকম অসুবিধেয় না পড়ে। সব ধরনের স্ট্রোক খেলে। এই ছেলেকে বোলাররা ভয় পাবে না তো কাকে পাবে?
আর বাকিদের চেয়ে ও কোথায় আলাদা? একটা উদাহরণ দিচ্ছি। রোহিত শর্মা এই মুহূর্তে ওর সেরা ফর্মে আছে। কিন্তু রোহিত যে বলটায় ডিপ স্কোয়্যার লেগে ক্যাচ তুলে আউট হল, ওই একই বলে দেখলাম বিরাটকে ফাইন লেগ দিয়ে ছয় মারতে! এই মুহূর্তে বিরাট এবং রোহিত— দু’জনেই অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে চলেছে। কিন্তু গেমপ্ল্যান, আত্মবিশ্বাস কিংবা টেম্পারামেন্ট, সব জায়গাতে বিরাট এক। রোহিত দুই। কোচির উইকেটে এ দিন অত বেশি স্ট্রোক খেলা সম্ভব ছিল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২১১ খুব খারাপ স্কোরও ছিল না। কিন্তু বিরাটকে দেখলাম, তাড়াহুড়োয় না গিয়ে সিঙ্গলস-টু’জ-এ চলে যেতে। স্ট্রাইক রেট একশোয় রেখে। দরকারে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি। খুব সহজে, বিরাট এখন অন্য একটা উচ্চতায় চলে গিয়েছে। মনে রাখতে হবে, এই পর্যায়ে ওঠার সময় ওকে কিন্তু এমন কিছু পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে যখন ওর ফর্ম ছিল না। জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। অল্প বয়সে বিখ্যাত হয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
|
স্ট্রেচারে বেরিয়ে গেলেন আহত গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দশাও কি একই? |
রোহিতকে যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে আরও বেশি করে যেতে হয়েছে। একটা সময় ওকে পরের পর সুযোগ দেওয়া নিয়ে নির্বাচক-ক্যাপ্টেনের মুণ্ডুপাত প্রচুর লোককে করতে দেখেছি। কেন ওকে এত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, কী করেছে ও— এই সব। দেখে ভাল লাগছে যে, শেষ পর্যন্ত ধোনিদের ওকে নিয়ে ভাবনাচিন্তাটা জলে যায়নি। চলতি মরসুমে রোহিত এগারোশো রান করে ফেলল, ভারতীয়দের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। আমি তো বলব, এত দিন পর রোহিত নিজের প্রতিভার মর্যাদাটা দিচ্ছে। আর ধোনি যদি রোহিতকে টানা খেলিয়ে গিয়ে ওর ধুরন্ধর ক্রিকেটমস্তিষ্কের পরিচয় দিয়ে থাকে, তা হলে আরও একটা মাস্টারস্ট্রোক হচ্ছে বোলার রবীন্দ্র জাডেজাকে তুলে আনা।
চলতি মরসুমে আপাতত জাডেজারই সবচেয়ে বেশি উইকেট। ৪৯-টা। আজমলের চেয়ে দু’টো বেশি। শেষ দিকে আজমল যদি ওকে টপকেও যায়, তা হলেও জাডেজার ‘উপযোগিতা’ কিন্তু পাকিস্তান টিমে কোনও দিনই আমদানি করতে পারবে না আজমল।
উপযোগিতাটা কী? কোনও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান যদি প্রত্যেকটা ম্যাচ আট থেকে দশ ওভার করে দেয়, ক্যাপ্টেনের আর কিছু চাওয়ার থাকতে পারে? যে ছেলেটা আবার উইকেটও তুলতে পারে নিয়ম করে দু’তিনটে। ধোনি এখানেই বাকি টিমকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে। জাডেজা থাকায় টিমে একটা ব্যালান্স এসেছে। ওকে বাদ দিয়ে নামা মানে, একটা বাড়তি বোলার বা ব্যাটসম্যান খেলানো। কিন্তু কখনও সেই দু’জনকে একসঙ্গে নয়। |
মরসুম সেরার হুঙ্কার
চার্লসকে ফিরিয়ে জাডেজা। |
জাডেজা থাকায় যেমন দশটা ওভার ওকে নিশ্চিন্তে দেওয়া যাচ্ছে, তেমনই নিজে ব্যাট করতে যাওয়ার সময় ধোনি ভাবতে পারছে যে আমার পরেও এমন কেউ আছে যে অন্তত তিরিশ-পঁয়ত্রিশ করে দেবে। সুরেশ রায়নাও এ দিন তিন উইকেট পেল। জাডেজাও পেল। কিন্তু রোজ আপনি রায়নার উপর ভরসা রাখতে পারবেন না। জাডেজার উপর পারবেন। আর রায়না-যুবরাজদের এখন বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ে মন দেওয়াটা বেশি জরুরি। বিরাটদের যত দিন দিন দুর্ধর্ষ দেখাচ্ছে, তত যেন খারাপ হচ্ছে যুবরাজ-রায়নাদের ফর্ম। মনে রাখা ভাল, হাতে আর দু’টো ম্যাচ। তার পরেই কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল নির্বাচন। |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
গেল রান আউট ০
চার্লস ক ও বো জাডেজা ৪২
স্যামুয়েলস বো রায়না ২৪
ড্যারেন ব্রাভো বো শামি ৫৯
সিমন্স এলবিডব্লিউ রায়না ২৯
দেওনারায়ণ বো রায়না ৪
ডোয়েন ব্রাভো স্টা: ধোনি বো জাডেজা ২৪
স্যামি ক ভুবনেশ্বর বো জাডেজা ৫
হোল্ডার ন.আ. ১৬
নারিন ক ও বো অশ্বিন ০
রামপল ক ধবন বো অশ্বিন ১। অতিরিক্ত ৭। মোট ৪৮.৫ ওভারে ২১১।
পতন: ০, ৬৫, ৭৭, ১৪২, ১৫২, ১৮৩, ১৮৭, ২০৪, ২০৬।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৫-০-২৬-০, উনাদকট ৬-০-৩৯-০,
শামি ৬-০-২৮-১,
জাডেজা ১০-০-৩৭-৩, রায়না ১০-১-৩৪-৩,
অশ্বিন ৯.৫-০-৪২-২, রোহিত ২-০-৪-০।
|
ভারত |
রোহিত ক সিমন্স বো রামপল ৭২
ধবন ক চার্লস বো হোল্ডার ৫
কোহলি ক নারিন বো হোল্ডার ৮৬
যুবরাজ ন.আ. ১৬
রায়না ক হোল্ডার বো নারিন ০
ধোনি ন.আ.১৩।
অতিরিক্ত ২০। মোট ৩৫.২ ওভারে ২১২-৪।
পতন: ১৭, ১৫০, ১৯২, ১৯৪।
বোলিং: রামপল ৮-০-৩৯-১, হোল্ডার ৮-০-৪৮-২,
স্যামি ২-০-১৪-০,
নারিন ১০-১-৫৭-১, দেওনারায়ণ ২-০-১৫-০,
সিমন্স ৩-০-১৪-০, ব্র্যাভো ২.২-০-২০-০। |
|
|
ছবি: পিটিআই। |
|
|
|
|
|