সম্পাদকীয় ২...
বহিরাগত নয়
শ্চিমবঙ্গের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তৎপর হওয়া দরকার, এই মূল্যবান কথাটি রাজ্যপাল তথা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এম কে নারায়ণনের মুখে আবার শোনা গেল। তিনি কিছু কাল আগে অধ্যক্ষ ও অধ্যাপক নিগ্রহে লিপ্ত ছাত্রদের উপর লাঠ্যৌষধি প্রয়োগের নিদান হাঁকিয়াছিলেন। ইদানীং অবশ্য তিনি সেই পরামর্শ প্রত্যাহার করিয়াছেন। তবে উপর্যুপরি শিক্ষক-অধ্যাপক নিগ্রহের ঘটনায় তিতিবিরক্ত হইয়াই যে তিনি ওই মন্তব্য করিয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। এই রাজ্যের কলেজে কলেজে যে ভাবে কখনও ছাত্র-সংসদ দখলের নামে, কখনও গণ-টোকাটুকিতে বাধা দিবার ‘প্রতিবাদে’ ছাত্রদের হাতে অধ্যাপক নিগ্রহের একের পর এক ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা ন্যক্কারজনক এবং ধিক্কারযোগ্য। অথচ শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ঘটনাগুলির নিন্দায় সে ভাবে মুখর হন নাই, বরং কখনও কখনও সেগুলিকে পরোক্ষ ভাবে প্রশ্রয় দিয়াছেন। ইদানীং অবশ্য তেমন প্রশ্রয় কমিয়াছে। কিন্তু তাহা যথেষ্ট নহে। শিক্ষা ক্ষেত্রে শান্তি ও স্থিতি ফেরানো জরুরি।
এই প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি রাজ্যপাল বলিয়াছেন, কলেজে শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে অধ্যক্ষ, শিক্ষকশিক্ষিকাদের কথা শুনিয়া চলাই যথেষ্ট, এ জন্য বাহিরের কাহারও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নাই। এই বাহিরের হস্তক্ষেপ কোন পথে, কী ভাবে, কাহাদের হাত ধরিয়া আসে, রাজ্যবাসীর তাহা অজানা নয়। বামফ্রন্টের আমলে ইহা আসিত বাম দলগুলির বহিরাগত কর্মীদের মারফত। বর্তমান জমানায় আসিতেছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বহিরাগত কর্মীদের মারফত। পরিবর্তন বলিতে ‘পোশাকের রং’। অতীতেও যেমন, এখনও তেমনই, এই বহিরাগতরা দলের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য হইতে পারেন, পুরপিতা হইতে পারেন, বিধায়ক, সাংসদও হইতে পারেন। অথচ কলেজের সহিত তাঁহাদের কোনও সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হইতেও যোজনপ্রমাণ দূরত্বে থাকা উচিত। অথচ তাঁহারাই কলেজের পরিচালন সমিতি দখল করিয়া আছেন। সম্প্রতি হুগলির তারকেশ্বরে চাঁপাডাঙা কলেজে এমনই পরিচালন সমিতির কর্তা নির্বাচনে শাসক দলেরই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর বোমা-গুলির লড়াই আতঙ্কিত পড়ুয়া ও শিক্ষকদের দরজা বন্ধ করিয়া স্বেচ্ছাবন্দি থাকিতে বাধ্য করে। কলেজে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু হইবার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়িবে, এমন আশঙ্কা প্রবল।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আরও বাড়াইবার কথা শিক্ষামন্ত্রীও বলিতেছেন। তবে তাঁহার ধারণা, ইতিমধ্যেই যথেষ্ট শৃঙ্খলা রহিয়াছে, তাহার পরিমাণ একটুখানি বাড়ানো দরকার, এই যা। এই শৃঙ্খলারক্ষার প্রশ্নে তিনি বা তাঁহারা ‘অনেক দূর আগাইবেন’, এমন আশাবাদ কিংবা অঙ্গীকারের কারণ অবশ্য বুঝা গেল না। কেননা যে-সব কলেজে শৃঙ্খলাহীনতার ঘটনা ঘটিয়াছে, বিশেষত শাসক দলের অনুগামীদের বিরুদ্ধে সেই হাঙ্গামায় জড়িত থাকিবার অভিযোগ উঠিয়াছে, সেখানে শাস্তিবিধানের দৃষ্টান্ত বিরল। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা কোথায়ও সত্য সত্যই তিরস্কৃতও হইয়াছে কি? শৃঙ্খলা কি আপনাআপনি কায়েম হইয়া যাইবে? আর, শৃঙ্খলার প্রশ্ন সরাইয়া রাখিলেও, কেবলমাত্র নীতি হিসাবেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের কেন প্রবেশাধিকার দেওয়া হইবে, কেনই বা রাজনৈতিক দল সেখানে সক্রিয় থাকিবে, তাহার কোনও সদুত্তর ‘পরিবর্তন’-এর নেতা ও নেত্রীদের কাছে আছে কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.