|
|
|
|
টার্মিনালের ভঙ্গুর কাচ, পরীক্ষায় আসছে নয়া যন্ত্র
সুনন্দ ঘোষ |
ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছে শক্তপোক্ত মোটা কাচ। দেখলেই বোঝা যায়, ভিতরে ভিতরে ভাঙছে। এক সময়ে সত্যিই ঝুপ ঝুপ করে ভেঙে পড়ছে কলকাতা বিমানবন্দরের দেওয়ালে লাগানো সেই কাচ।
এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়েছে। সমাধানে কখনও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে, কখনও বা কাচের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মার্কিন রসায়নাগারে। সম্প্রতি মুম্বই-এর এক সংস্থা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানিয়েছে, বিমানবন্দরের বেশ কিছু কাচে গলদ আছে। তার সামান্য অংশই এখনও পর্যন্ত ভেঙে পড়েছে। আগামী দিনে আরও কাচ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মাথায় হাত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। ঠিক কোন কোন কাচে সমস্যা, জানতে অগত্যা বিদেশ থেকে বিশেষ একটি যন্ত্র কিনছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, কাচের সামনে যন্ত্রটি ধরলে বোঝা যাবে ত্রুটি আছে কি না। এতে বিমানবন্দরে এখন কতগুলি কাচে ত্রুটি রয়েছে, তার হিসেবও মিলবে। যে সংস্থা কাচ সরবরাহ করেছে, ইতিমধ্যেই তাকে চেপে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ কাচ অবিলম্বে বদলে ফেলতে। এখানেই শেষ নয়, কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সেই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করারও ভাবনা রয়েছে। এ বার থেকে তারা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কোনও ধরনের টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না।
মার্চে চালু হওয়া নতুন টার্মিনালের দেওয়াল পুরোটাই কাচে ঢাকা। কাচের এক-একটি ব্লকের মাপ প্রায় ১০ ফুট বাই ৬ ফুট। টার্মিনাল চালুর পর থেকেই দেওয়ালের বড় বড় কাচ ভেঙে পড়তে থাকে একের পর এক। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ৫০টির বেশি কাচ ভেঙেছে। এক বার হুইলচেয়ারে বসা এক যাত্রীর পায়ের কাছে ভেঙে পড়ে কাচ। অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পান। অন্য এক ঘটনায় সিআইএসএফ-এর এক অফিসারের আঙুল কেটে যায়। |
|
বোধোদয় ২: বিমানবন্দরের কাচ পরীক্ষায় আসছে বিদেশি যন্ত্র। |
আশঙ্কা, যে কোনও মূহূর্তে কাচ ভেঙে আহত হতে পারেন যাত্রী বা কর্মীরা। বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছিল, কাচ পোক্ত করতে যে নিকেল সালফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল, তার প্রভাবেই কাচ ভাঙছে। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় বেশি নিকেল সালফাইড ব্যবহৃত হলে তা কাচকে ভঙ্গুর করে। রসায়নাগারের পরীক্ষাও একই কথা জানায়। জানা গিয়েছে, এই কাচ সরবরাহ করেছে তিনটি সংস্থা। তার মধ্যে প্রধান ‘আশাই-ইন্ডিয়া’। এক অফিসারের কথায়, “আশাই ছাড়া বাকি দুই সংস্থার সরবরাহ করা কাচ টার্মিনালের যে দিকে লাগানো হয়েছে, সেখানে কাচ ভাঙার ঘটনা কম। ভাঙছে বেশি আশাই-এর কাচ।”
সম্প্রতি মুম্বইয়ের এক সংস্থা যন্ত্র এনে দেখিয়ে গিয়েছে, বেশ কিছু কাচে নিকেল সালফাইডের পরিমাণ তুলনায় অনেক বেশি। অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “গোটা টার্মিনালে কোথায় কোন কাচে এ রকম ত্রুটি রয়েছে, তা দেখার জন্য আমরা ওই যন্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইংল্যান্ড থেকে সেই যন্ত্র সামনের মাসে আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে।” সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আশাই-কে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ কাচ বদলে ফেলার কথা। কিন্তু আশাই তা মানছে না বলেই কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাই ওই সংস্থাকে কালো-তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে বি পি শর্মা জানিয়েছেন।
আগামী দিনে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে দেশের বেশ কিছু বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হতে চলেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অবস্থায় কাচ সরবরাহকারী একটি সংস্থাকে কালো-তালিকাভুক্ত করলে তাদের বড়সড় ক্ষতি হবে। এ দিন আশাই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এক অফিসার বলেন, “আমরা বহু সংস্থায় কাচ সরবরাহ করি। আমাদের কাচের গুণগত মান যে ভাল, সে নিয়ে জাপানের এক সংস্থার সার্টিফিকেট রয়েছে। এত বেশি কাচ তৈরি করলে সমস্যা হবেই। সেটা সরবরাহের সময় বলা হয়েছিল।” |
|
|
|
|
|