হাতে সময় সামান্য। তার মধ্যে ব্যবস্থা না-নিলে প্রযুক্তির প্যাঁচে কুপোকাত হতে পারে এ দেশের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। সে ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়বে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি।
আজকের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। বিশেষত এই এটিএম-নেট ব্যাঙ্কিং-কোর ব্যাঙ্কিংয়ের যুগে। সেখানে ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির এক বিশাল সংখ্যক শাখায় কম্পিউটারের কাজকর্ম এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে উইন্ডোজ-এক্সপি সফটওয়্যারের উপর। সেই উইন্ডোজ-এক্সপি, আগামী এপ্রিল মাস থেকে যে-সফটওয়্যারের জন্য আর কোনও প্রযুক্তিগত সহায়তা তাদের তরফ থেকে মিলবে না বলে ঘোষণা করে দিয়েছে বিল গেটসের সংস্থা।
মাইক্রোসফটের দাবি, ইতিমধ্যেই উইন্ডোজ-এক্সপির তুলনায় অনেক উন্নত নতুন প্রযুক্তি বাজারে এনে ফেলেছে তারা। ফলে ঝাঁপ বন্ধ হবে ওই পুরনো সফটওয়্যারের। আর ঠিক এখানেই ফ্যাসাদে পড়েছে ব্যাঙ্কগুলি। কারণ, পুরনো মডেলের যন্ত্রাংশ না-পেলে যেমন ওই গাড়ি চড়া মুশকিল হয়ে পড়ে বা অকেজো হয়ে যায় বাজার থেকে রিফিল উধাও হওয়া কলম, এপ্রিলের পর থেকে ঠিক তেমনই দশা হবে পুরনো সফটও্যার চালিত কম্পিউটারগুলির। |
আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা অ্যাসেন্টিয়াস কনসাল্টিংয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, সারা দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ৩৪,১১৫টি শাখায় এখনও কম্পিউটার চলছে উইন্ডোজ এক্সপি-তে ভর করে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে তা না-বদলালে, ভোগান্তি পোহাতে হবে গ্রাহকদের।
মাইক্রোসফট-ই জানাচ্ছে, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও ‘আপডেট’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিতান্ত সাধারণ একটি লেনদেন করতেও নিদেনপক্ষে আধ ঘণ্টা সময় বাড়তি লাগবে। অন্তত ৫৫% গ্রাহক সঠিক পরিষেবা পাবেন না। ঝুঁকি বাড়বে সাইবার হানায় আক্রান্ত হওয়ার। সমস্যা হতে পারে গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে সরকারি টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রেও। নেহাত সামান্য গোলমালের কারণেই দিনে ১,১০০ কোটি টাকা হারাতে পারে ব্যাঙ্কিং শিল্প। অথচ অ্যাসেন্টিয়াসের সমীক্ষা বলছে, এই শিয়রে শমন পরিস্থিতিতে এ দেশে এখনও ব্যাঙ্কিং শিল্পের ৪০- ৭০% কম্পিউটার চলছে পুরনো প্রযুক্তিতে।
মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ার উইন্ডোজ ব্যবসার প্রধান অমরীশ গোয়েলের দাবি, ব্যাঙ্ক-সহ অনেক সংস্থাকেই বহু দিন ধরে নয়া প্রযুক্তি চালু করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ৪৫টি ব্যাঙ্কের মধ্যে অধিকাংশই এ নিয়ে তৎপর হয়নি। যেমন, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ১.৩৫ লক্ষ কম্পিউটারই এখনও পুরনো প্রযুক্তি আঁকড়ে রয়েছে। কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আবার পাল্টা দাবি, সরকারি ব্যবস্থায় কোনও কিছু দ্রুত বদলানো সব সময়ে সম্ভব নয়। অর্থের সংস্থানও থাকে না সব ক্ষেত্রে। ফলে কিছুটা সময় লাগবেই। তবে সময়সীমার কথা মাথায় রেখে কাজ শুরু হয়েছে।
ব্যাঙ্কগুলি টাকার কথা বললেও সমীক্ষা অনুযায়ী, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পুরনো প্রযুক্তিতেই বেশি। কম্পিউটার পিছু ১৯ হাজার টাকা। সেখানে নতুন প্রযুক্তি বসানোর খরচ ছ’ হাজার। কিছু ব্যাঙ্ক অবশ্য ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তি-কাঠামো ঢেলে সাজতে শুরু করেছে। বদলাচ্ছে খোলনলচে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ও কানাড়া ব্যাঙ্ক সময় থাকতেই নয়া সফটওয়্যার ব্যবহার প্রায় পাকা করে ফেলেছে। |