একপাশে কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে কালিম্পঙের পাহাড় থেকে নেমে আসা মূর্তি নদী। পরিষ্কার আকাশপটে ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। চারদিক সবুজে সবুজ। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের এমনই পরিবেশে গড়ে উঠেছে রাজ্য পর্যটন দফতরের নব নির্মিত মূর্তি রিসর্ট। গত ২৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটিগাড়ার সভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রিসর্টের উদ্বোধন করেন। কিছু পরিকাঠামোগত কাজের জন্য পর্যটকদের কাছে তা অধরা ছিল। অবশেষে আগামীকাল, শনিবার সরকারিভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে মূর্তি রিসর্ট। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের সমস্ত দফতর এবং ওয়েবসাইট থেকেই এই রিসর্টের বুকিং করা যাবে।
অত্যন্ত আধুনিক মানের এই রিসর্ট দ্রুত দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে সমাদৃত হবে বলে পর্যটন দফতরের আশা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মূর্তির এই নতুন রিসর্ট রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে নতুন পালক জুড়তে চলছে।” রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ভীষ্মদেব দাশগুপ্তও ওই রিসর্টকে গিরে পর্যটন প্রসারের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, “মালবাজার টুরিস্ট লজের পরে গরুমারা জাতীয় উদ্যান কেন্দ্রিক এই রিসর্ট পর্যটন দফতরের প্রথম। আমরা শনিবার থেকে রিসর্টটি পুরোপুরি খুলে দিচ্ছি। পর্যটকদের সমস্ত ধরণের সুযোগ সুবিধা, চাহিদার কথা মাথায় রেখেই রিসর্টটি তৈরি করা হয়েছে।” |
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, এতদিন মূর্তিতে রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের ‘বনানী’ বন বাংলো ছাড়া সরকারি উদ্যোগে কোনও বাংলো, রিসর্ট বা অতিথি নিবাস ছিল না। মূর্তির একপাশে গরুমারা জাতীয় উদ্যান, অন্যদিকে চাপড়ামারি অভয়ারণ্য থাকায় পর্যটকদের কাছে মূর্তি আকর্ষণীয়। ২০০৯ সালে রাজ্য পর্যটন দফতর এই রিসর্ট তৈরির পরিকল্পনা নেয়। সেই কাজও শুরু হয়। প্রথমে ঠিক করা হয়, কটেজ মডেলেই গোটা রিসর্টটি তৈরি করা হয়। সেই মতন নকশাও তৈরি করা হয়। মোট ২৭টি কটেজ রিসর্টটিতে তৈরি করা হয়েছে। তারমধ্যে ১০টি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাঠের নকশা করা, ১০টি তাঁবুর ছাদ যুক্ত কটেজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজও রয়েছে।
প্রায় আড়াই একর জমির উপর রিসর্টটি গড়া হয়েছে। শুধু থাকার কটেজ নয়, রেঁস্তোরা, পানশালা, কনফারেন্স হলও তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ২০০ আসন বিশিষ্ট কনফারেন্স হলটি অনেকটা থিয়েটারের ধাঁচে তৈরি হয়েছে। রেঁস্তোরায় ৫০ জনের উপরে একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। বনানী বনবাংলোর ঠিক পিছনের অংশে রিসর্টটি তৈরি হয়েছে। ‘লনে’ তৈরি হয়েছে নকশা করা রাস্তা-সহ হাতি, গন্ডারের মত ডুয়ার্সের অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রাণীর মডেলও। থাকছে রকমারি বাহারি গাছের বাগানও। সাত সকালে কটেজ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য বাড়তি আকর্ষণ বলে পর্যটন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করে রিসর্টটি তৈরি করা হয়েছে।
পর্যটন দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি বর্তমানে বড় বড় বহুজাতিক সংস্থাগুলি নিজেদের বৈঠক, আলোচনার জন্য প্রকৃতির মাঝে থাকা বিভিন্ন রিসর্ট, বাংলোকে বেছে নিচ্ছে। সংস্থার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক এবং ঘোরানোর ব্যবস্থা এই ধরণের রিসর্টে করা হয়। সেদিক মাথায় রেখেই রিসর্টটির কনফারেন্স হল, রেঁস্তোরা এবং পানশালা তৈরি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “ডুয়ার্সের মূর্তি বরাবরই পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কেন্দ্র। পর্যটন দফতরের এই রিসর্ট চালু হলে মূর্তি বন বাংলোর উপর চাপ অনেকটাই কমবে।”
এ ছাড়া ডুয়ার্স বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে দ্রুত রিসর্টটিতে একটি আলাদা ‘ট্রাভেল ডেস্ক’ও খোলা হচ্ছে। ভীষ্মদেববাবু জানান, লাটাগুড়ি এবং চালসা থেকে রিসর্টটি ২০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে। এখানে এসে অনেকেই গরুমারা, চাপড়ামারি ছাড়াও ঝালং, বিন্দু, সামসিং, জল্পেশের মত এলাকাগুলি যাতে সহজেই পর্যটকেরা বেড়াতে পারেন, সেই জন্য ট্রাভেল ডেস্কটি চালু করা হচ্ছে। |