সব্জি, ছানার পর এবার নলেন গুড়।
সীমান্তের দুই জেলা নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ থেকে টাটকা নলেন গুড় কলকাতার বাজারে পৌঁছে দিতে বরাদ্দ হল আস্ত একটি কামরা। বুধবার থেকে অতিরিক্ত ওই ‘নলেন গুড়ের কামরা’ চালুও হয়ে গিয়েছে বলে রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নলেন গুড়ের ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখেই অতিরিক্ত একটা কামরা চালু করা হল। শীতকাল জুড়ে গুড়ের মরসুম যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত ওই কামরা থাকবে। তারপর মরসুম শেষ হওয়ার পর বুকিং বন্ধ হয়ে গেলে তখন কামরাটিও খুলে নেওয়া হবে।” অশোকবাবু বলেন, “নলেন গুড়ের জন্য অতিরিক্ত কামরার ৫৩১৭৬ লালগোলা-শিয়ালদহ প্যাসেঞ্জার লালগোলা থেকে ছাড়বে সকাল ৬.৪০ মিনিটে। সেটা শিয়ালদহ পৌঁছবে দুপুর ১২.৩৫ মিনিটে। ফলে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা অনায়াসে ওই ট্রেনে গুড় নিয়ে কলকাতায় চলে আসতে পারবেন।”
তবে রেল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ এই প্রথম নয়। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে গুড়ের জন্য কামরা দেওয়ার জন্য তত্কালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই এলাকার বাসিন্দা। গরিব গুড় চাষি ও ব্যবসায়ীদের কষ্ট দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি সেই অনুরোধ রেখেছিলেন। গুড়ের জন্য বিশেষ কামরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাতে ওই এলাকার গুড় চাষি ও ব্যবসায়ীদের লাভ হয়েছিল।” কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল বলেন, “এলাকা থেকে জিতে আসার পরে বাসিন্দারা সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। সে সময়ে আমিও বিষয়টি রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলাম। তিনি আমার আবেদন শুনেছিলেন।”
নলেন গুড়ের জন্য একটা আলাদা কামরা বরাদ্দ করার কারণ কী? রেল দফতর সূত্রে জানানা হয়েছে, সব্জি ও ছানা ব্যবসায়ীদের মতো রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর শরনাপন্ন হয়েছিলেন নলেন গুড়ের ব্যবসায়ীরাও। তারপর তাঁর উদ্যোগেই এমনটা চালু হয়েছে। অধীরবাবু বলছেন, “নদিয়া মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা যাওয়ার জন্য ট্রেনই একমাত্র নির্ভরযোগ্য পরিবহণ। সড়কপথের অবস্থা ভাল নয়। তাছাড়া দেবগ্রাম, পলাশি সহ দুই জেলার বেশ কিছু এলাকায় এই সময়ে প্রচুর খেজুরের রস হয়। সেই গুড়ের ভাল বাজারও আছে। সময়মতো সেই গুড় কলকাতার বাজারে পৌঁছে দিতেই এমন ব্যবস্থা।”
রেলের এই উদ্যোগে কলকাতায় গুড় নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেকটাই কমে যাবে বলে জানিয়েছেন নলেন গুড়ের ব্যবসায়ীরা। দেবগ্রামের ব্যবসায়ী আকবর আলি বলেন, “যাক, বাইরে গুড় নিয়ে যাওয়ার খরচ এবার থেকে অনেকটাই কমে গেল। কলকাতা বা লাগোয়া বাজারে গুড় নিয়ে তাড়াতাড়ি পৌঁছনোও যাবে।”
পলাশি গুড় ইউনিয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ আজাদ শেখ বলছেন, “এই এলাকাতে ভাল নলেন গুড় হয় পলাশি, দেবগ্রাম ও পাগলাচণ্ডী এলাকাতে। গুড়ের মরসুমে এই এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ কুইন্টাল গুড় কলকাতায় যায়। এই সমস্ত এলাকাগুলোই রেল স্টেশনের খুব কাছে। ফলে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সুখবর।” আজাদবাবু বলছেন, “সড়কপথে কলকাতায় প্রতি কুইন্টাল গুড় নিয়ে যেতে খরচ হয় দুই থেকে আড়াইশো টাকা। ট্রেনে নিয়ে গেলে সেই খরচ প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে।”
নদিয়ার উদ্যান পালন আধিকারিক রাহুল মারিক বলেন, “নদিয়াতে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। শীতের মরসুমে গুড় তৈরি করে ভাল আয়ও করেন এখানকার মানুষ। নলেন গুড়ের ভাল বাজারও রয়েছে। রেল দফতরের এই উদ্যোগে উপকৃত হবেন খেজুর গুড়ের কারবারিরা।” |