|
|
|
|
লাগে টাকা দেব আমরাই |
হাতখরচ চালাতে টিউশনির বদলে রুপোলি পর্দা। গ্ল্যামার প্লাস টাকা। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী। |
বাবার থেকে যে পকেটমানি পাওয়া যায়, তাতে পাউরুটি-ঘুগনির বেশি কিছু জুটবে না।
টিউশন পড়িয়ে কিছু রোজগার করতে পারলে বড়জোর ডিমের ডেভিল যোগ করা যেতে পারে।কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা কিংবা ভাল রেস্তোরাঁয় ইটিং আউট? সে তো আকাশকুসুম স্বপ্ন!
না, এঁদের কাছে নয়। মাসে দু’দিন তাজ কী গ্র্যান্ডের ফুড ফেস্টিভ্যাল। মাঝে মাঝেই আইনক্সের গোল্ড ক্লাসে সিনেমা। মাসে একবার করে অ্যারোমাথেরাপি বা স্পা সবই সম্ভব। আর এ সবের জন্য বাবার দেওয়া পকেটমানির অপেক্ষা করতে হয় না।
“এখন যে কেউ ফিল্ম আর টিভির প্রোডাকশনে কাজ করে মাসে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকা আরামসে রোজগার করতে পারে। সেটাও কলেজের ফাঁকে ফাঁকে করলেই চলে,” বলছিলেন সুশোভন মণ্ডল। আর্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের সুশোভন টিভি শোয়ের সেট ডিজাইনে সাহায্য করেন। মাসের শেষে কুড়ি হাজার দিব্যি চলে আসে পকেটে। “পেন্টিংয়ের রঙের যা দাম, তার পুরোটা পকেটমানিতে হয় না। আর একটা ব্যাপার, আর্ট ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের কিন্তু সেট ডিজাইনে বেশ চাহিদা। সে দিক থেকে আমি একটা পেড ইন্টার্নশিপ করে নিচ্ছি ধরে নিতে পারেন,” যোগ করলেন সুশোভন। নিজের টাকা দিয়েই একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনার প্ল্যান ছকে নিয়েছেন এ মাসেই।
ছেলেমেয়ের এ হেন খরচের বহর দেখে মধ্যবিত্ত বাবা-মা চমকে যেতে পারেন। কিন্তু এটাই সত্যি। তাঁরা যে যৎসামান্য হাতখরচা দেন, তা দিয়ে এ সব হয় না। হয় উপরি রোজগারে। শুধু তাই নয়। সেই রোজগার আসে একেবারে রুপোলি পর্দার জগৎ থেকে। |
|
অলংকরণ: সুমিত্র বসাক। |
এই মুহূর্তে বহু ছাত্রছাত্রীই এই কলকাতায় বসে সিনেমার নানা বিভাগে কাজ করে যথেষ্টর চেয়ে বেশি টাকায় পার্স ভরছেন। কেউ লেখেন ফিল্মের সাবটাইটেল। কেউ প্রোমো কাটেন। কেউ সেট ডিজাইনে সাহায্য করেন। তো কেউ কাজ করেন পরিচালকের সহকারী হিসেবে।
পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে কাজটাও শেখা হল, আবার মোটাসোটা পকেটমানির ব্যবস্থাও হয়ে গেল। “আমার মনে হয় না যারা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিনেমায় কাজ করছে, তারা শুধু টাকার জন্যই করছে বলে। সিনেমার সঙ্গে যুক্ত সবারই কিন্তু ক্রিয়েটিভ দিকটাই বেশি করে টানে। এই যে আমি সিনেমার সাবটাইটেল লিখি, সেটা অবশ্যই টাকার জন্য। কিন্তু এটা তো আমি সারা জীবন করব না। আমি এডিটিংয়ের ছাত্রী, তাই সফ্টওয়্যারগুলো নিয়েও স্পষ্ট ধারণা আছে। সাবটাইটেল লেখার ফলে এডিটিং প্রোগ্রামগুলোয় অভিজ্ঞতা বাড়ে। পরবর্তী সময়ে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারব,” বললেন অন্নপূর্ণা বসু। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সম্পাদনা বিভাগের এই ছাত্রী, পড়ার পাশাপাশি বাংলা ছবির সাবটাইটেল লেখেন। আর সে টাকায় মাঝেমাঝেই চলে বন্ধুদের
সঙ্গে ‘ইটিং আউট’ আর ছোট ছোট ট্যুর। হেসে যোগ করলেন, “নিজের নামটা টাইটেল কার্ডে দেখার লোভটাও বেশ টানে।”
শুধু টাইটেল কার্ডে নাম নয়, সেন্ট জেভিয়ার্স-এ মাস কমিউনিকেশনে অনার্স করতে করতেই ‘কেয়ার করি না’ সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র কৃষ্ণেন্দুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ফারহান। বললেন, “ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় মৈনাক ভৌমিককে ‘বেডরুম’ সিনেমায় অ্যাসিস্ট করি। পরের বছর ‘কেয়ার করি না’-য় অভিনয়ের অফারটা পাই। সে তো হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো ব্যাপার। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ করাটা তো ভালই। অভিজ্ঞতাও হয়ে গেল, আবার গিটারের স্ট্রিংয়ের জন্য বাবা-মায়ের কাছে হাত পাততে হল না। পুরো উইন-উইন সিচ্যুয়েশন।”
একই মত অগ্নিজিতা মুখোপাধ্যায়ের। কী করে যেন যোগাযোগ হয়ে গিয়ে মণিরত্নমকে অ্যাসিস্ট করেছিলেন অনেক দিন আগে। এখন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুটিয়ে বাংলা ছবিতে ক্যামেরা বিভাগে অ্যাসিস্ট করেছেন। বললেন, “এটাই তো ভাল, আমি যে স্ট্রিমে পড়ছি তাতেই তো কাজ করছি। সুতরাং এক্সপেরিয়েন্সটা হয়েই যাচ্ছে। কলেজ থেকে বেরোনোর আগেই প্রফেশনাল কাজের অভিজ্ঞতা পেয়ে যাচ্ছি। অনেকের থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে শুরু করতে পারছি কেরিয়ার। এতো এমন নয় যে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে ক্যাফেটেরিয়াতে কাজ করছি। আর টাকা পাওয়ার প্রসঙ্গে বলব, পকেটমানি নিয়ে চিন্তা সরে গেলে তো ভালই লাগে। নিজের ইচ্ছা মতো বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে খেতে পারি, পছন্দ মতো ডিভিডি কিনতে পারি,” বললেন অগ্নিজিতা মুখোপাধ্যায়।
একটা সময় ছিল মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলেমেয়ে বাড়িতে ছাত্র পড়িয়ে পকেটমানি জোগাড় করত। এখন তার থেকে অনেক ধাপ এগিয়ে পকেট মানির সোর্স। একই সঙ্গে টাকা আর রুপোলি পর্দার গ্ল্যামার।
অভিজ্ঞতা আর পেটমোটা পার্স। বাবা-মার কাছে ঝুলোঝুলি না-করে একুশ বছরেই নিজের টাকায় আইনক্স গোল্ড ক্লাস।
জেন ওয়াই তা হলে ভালই ব্যালেন্স করে চলতে পারে।
তাঁদের জন্য ‘জিনি’ আসার দরকার নেই। আশ্চর্য প্রদীপের সলতে পাকিয়ে আলো জ্বালিয়ে নিচ্ছে নিজে হাতেই।
|
মাসে কীসে কত |
• সাব-টাইটেল লেখক:
১৫-২০ হাজার টাকা
•
পরিচালকের সহকারী:
২০-২৫ হাজার টাকা
•
সহকারী সেট ডিজাইনার:
২০-২২ হাজার টাকা |
• ক্যামেরা বিভাগে সহকারী:
১০-১৫ হাজার টাকা
• সহকারী চিত্রনাট্যকার:
১৫-২০ হাজার টাকা
• জুনিয়র আর্টিস্ট:
৫-৮ হাজার টাকা |
|
|
|
|
|
|