একটু উষ্ণতার জন্য |
বনফায়ার, বারবিকিউ, থিম-য়ে শীত পার্টি জমজমাট। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় |
শহরে শীতের হাওয়া। আর শীত মানেই তো পার্টি!
তবে সাদামাঠা পার্টিতে জেন ওয়াইয়ের মন আর ভেজে না। পার্টিতেও ইদানীং থিমের ভরপুর আনাগোনা। এমনটাই বলছিলেন হোমমেকার অরুণিমা।
“কলকাতায়, আমার সব বন্ধুকে নিয়ে শীতের পার্টিতেই থিম পার্টি করি আমরা। এ বারে হিন্দি বা বাংলা যে কোনও ছবির চরিত্রের পোশাকে আমরা নিজেদের সাজাব,” বলেন তিনি। বরের পকেট-মানি থেকেই বন্ধুদের এই শীত পার্টির আয়োজন করে থাকেন তিনি।
বন্ধুতাকেও কখনও কখনও ছাড়িয়ে যায় পার্টির মায়াবী আবেগের মুগ্ধতা। ‘‘গত বারের ক্রিসমাস পার্টি আমার জীবনটাকেই বদলে দিয়েছে। অনিরুদ্ধর সঙ্গে সেদিনই আমার প্রথম আলাপ। সারা রাত একসঙ্গে নেচে, গেয়ে কাটিয়েছিলাম। একমাত্র পার্টি বলেই প্রথম আলাপে এত কাছাকাছি এসে গিয়েছিলাম আমরা,” এম.এ.-র ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী রাত্রির কথাতেই স্পষ্ট শীত পার্টিতেই সে কী ভাবে খুঁজে পেয়েছিল বসন্তের শিহরন। |
|
শীতের মায়াবী নিশি যা খুশি করার জন্যে একদম আদর্শ। তবে ইন্ডাস্ট্রির লোকজন নয়, লাইক মাইন্ডেড বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করতে চান অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। যাতে পরের দিন সকালের পার্টিচর্চা পেজ থ্রি-র পাতায় পৌঁছে না যায়।
নিজেদের বাড়ির ছাদেই পার্টি জমান অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য। ক্লাবের পার্টিগুলো ভাল লাগে না তাঁর। বাড়ির ছাদেই লাইভ বারবিকিউ কাউন্টার করে দুপুর থেকে সাঁঝলগনের পার্টি করেন সাহেব। হিমঝরা চাঁদনি আলোই হোক বা শীতদুপুরের সাঁঝলগন শীতের পার্টির ক্ষেত্রে প্রাইভেট পার্টিই সকলের পছন্দ।
|
বাড়িতে শীত পার্টি |
বাড়ির শীত পার্টির আলো, আগুন, রেড ওয়াইন আর বারবিকিউয়ের ঝলসানো জৌলুস আপনার চোখেও ধাঁধা লাগিয়ে দিতে পারে। কেমন করে? জেনে নিন ঋতা ভিমানির কাছ থেকে
|
আলো |
যেখানে পার্টিটা হবে তার চারপাশে মশাল বা চাইনিজ লন্ঠন দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। বাড়িতে শিফন বা সিন্থেটিক কাপড় থাকেই। সেগুলোই চার দিক থেকে ঝুলিয়ে দিলে আলো আর শিফনের কম্বিনেশনে ঝলসে উঠবে পার্টির পরিবেশ। শীতের মায়াকে জমাট করতে বাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিক চেয়ার বা গার্ডেন চেয়ারের মধ্যে মধ্যে রেখে দিতে পারেন গন্ধ ছড়ানো মোমবাতি।
|
বনফায়ার |
এক বিখ্যাত ইভেন্ট কোম্পানির ম্যানেজার নীত পল বলছেন, “শীতের পার্টি মানেই বনফায়ার। শীতকাঁপুনি থেকেও নিস্তার পাওয়া যাবে। আবার গেস্টদের আগুন জ্বালানোর কাজে ইনভলভ করে একটা ঘরোয়া পরিবেশও তৈরি করা যাবে। এর জন্যে কাঠ, কয়লা, কেরোসিন আর আগুন জ্বালাবার ট্রে হলেই চলবে। ”
যদিও ঋ তা ভিমানির পরামর্শ, “বনফায়ার পার্টির মাঝখানে না করে চার পাশে ছোট ছোট আকারে করলে পার্টির চেহারাটাই বদলে যাবে।”
|
বাড়িতে বারবিকিউ |
বাড়িতে সহজ উপায়ে বারবিকিউ করার টিপস দিলেন অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ির আভেন, বারবিকিউ স্ট্যান্ডে বা ইলেকট্রিক তন্দুরে কাঠকয়লা দিয়ে মাংস বা মাছ ঝলসানোর জন্যে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বারবিকিউয়ের জন্যে ধোঁয়াটা খুব জরুরি। আভেনের ক্ষেত্রে খই ছড়িয়ে ধোঁয়া তৈরি করে নিতে পারেন।
এর পরে আসে ম্যারিনেশন। বারবিকিউয়ের ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত জরুরি। মাংস হলে আট ঘণ্টা ম্যারিনেট করতে হবে। আর মাছের ক্ষেত্রে সেটা দু’ঘণ্টাতেই চলবে। দই দিয়েই সাধারণত ম্যারিনেট করা হয়। বাজারে এখন নানা ধরনের বারবিকিউ সস পাওয়া যায়। পছন্দমতো সস দিয়েও ম্যারিনেট করা যেতে পারে।
বিবি সরকারের সাবধানবাণীও মনে রাখাটা জরুরি। কয়লার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে যাওয়ার পরে যে লাল আগুন তৈরি হয়, তাতে মাংস পোড়াতে হবে। গনগনে আগুনে মাংস পোড়ালে মাংসের ওপর ভাগটা পুড়ে গিয়ে ভিতরটা কাঁচা থেকে যাবে। বারবিকিউয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হল আগুন।
লাল আগুনে মাংস ঝলসানোর কিছুটা পরে তেল বা ঘি মাখিয়ে কম আগুনে বারবিকিউ করলে পুরো মাংসটা সঠিক ভাবে তৈরি হবে। সঙ্গে ব্রেড, সবজি, ফল আর মেয়োনিজ দিয়ে ডিপ বানিয়ে মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে
|
গান |
“পার্টি মানেই ঝিঙ্কু গান নয়। আজকাল বরং লাইভ মিউজিকের বেশি চল,” বলছেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
বনফায়ারের মেঠো আমেজের সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারে লোকসঙ্গীত। কলকাতার অধিকাংশ বারবিকিউ পার্টির পরিচালক নীত পল জানাচ্ছেন, আগুনে পোড়া রাত্রি আর শীতের আকাশের মেঠো সুরের মৌতাত খুব ভাল জমে।
|
খানা |
লোকে এখন নিজের পছন্দের প্ল্যাটারটা নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিতে ভালবাসে। অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য তাই বাড়িতে রাখেন লাইভ পাস্তা কাউন্টার। যে যার পছন্দের সস, সব্জি বেছে নিতে পারেন। রাখা
যেতে পারে নানা রকম স্যালাড। ইচ্ছে মতো সেদ্ধ মাংস, মেয়োনিজ বা সব্জি দিয়ে যে যার মতো বানিয়ে নিয়ে খেতে পারেন।
শীতের পার্টি, অথচ ডেজার্ট ছাড়া! “ডেজার্ট খুব ইম্পর্ট্যান্ট,” বক্তব্য ঋতা ভিমানির। শীতের পার্টিতে গরমাগরম জিলিপি, বেকড সন্দেশ লা-জবাব।
|
পিনা |
ক্যালোরির দিক থেকে এই ড্রিঙ্কটা অনেক সেফ বলে রেড ওয়ানই অভিনেত্রী স্বস্তিকার সব চেয়ে প্রিয়। আর ঋতা ভিমানি বলছেন শীতের মরসুমে পার্টির চার্ম গরম ওয়াইন বা মাল্ড। নানা বাহারি ফল দিয়ে এই সুধাপান মনের জানলা খুলে দেবেই। তবে বারবিকিউ পার্টিতে ককটেল বা স্কচ চলে না, এটা মাথায় রাখতে হবে।
“পার্টিতে পানীয় নিয়েই নানা রকম খেলা খেলি আমরা। আমাদের ছাদের বারবিকিউ পার্টি কিন্তু দুপুর থেকে শুরু হয়ে সন্ধে পর্যন্ত চলে। শ্যুটার্স রাউন্ড, বিয়ার পঙ-এর মতো মজার খেলা আমাদের পার্টির প্রধান আকর্ষণ।’’
|
সাজ-পোশাক-মেক আপ |
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বলছেন, “লাল, হলদে, কমলা, বালির রং হল শীতের বারবিকিউ পার্টির রং। ছেলেদের পোশাকেও কেবল কালো নয়, ব্রাউন, বেজ রঙের পোশাকের চল এ ক্ষেত্রে বেশি।”
মেয়েদের ক্ষেত্রে লেয়ারিংটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, একটা স্প্যাগেটি পরলেন। তার ওপর নেটের ফুল টপ। তার উপর পরা যেতে পারে রঙিন লেদারের জ্যাকেট। লেয়ারিঙের সময় মনে রাখতে হবে পোশাকের রংগুলো যেন একেকটা একেক রকম হয়। একটু অন্য রকম চাইলে নি-লেন্থ ড্রেস পড়ে হাই বুটসও পরা যেতে পারে। কেউ চাইলে ডেনিমের সঙ্গে স্নিকার্সও পরতে পারেন। ছেলেদের ক্ষেত্রেও নানা রঙের লেদার জ্যাকেট চলতে পারে। এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে পরতে পরেন লং জ্যাকেট আর হ্যাট।
নো মেক-আপ লুকস-ই শীত পার্টিকে জমজমাট করবে। ন্যুড লিপস্ আর স্মোকি আইস এই পার্টির জৌলুস বাড়াবে। চুল না খুলে রাখতে চাইলে মাথায় ব্যান্ডানা বাঁধতে পারেন। আপনার লুকটাই বদলে যাবে।
|
অ্যাক্সেসরিজ |
বনফায়ার আর বারবিকিউয়ের শীত পার্টিতে এখন গ্লো আই গ্লাস-এর খুব কদর। উজ্জ্বল নিয়ন রঙের এই চশমা চোখের শেপের চেয়ে বড় আকারের হয় যা পার্টিতে চোখে রঙের ফোয়ারা তোলে। কলকাতার এক নামজাদা পার্টি স্টোরের কর্ণধার সুবীর দাস জানালেন নানা ধরনের গ্লো প্রোডাক্টস, প্লেট, গ্লাস, গলার হার, দুলের খুব চল এখন। এগুলো প্রত্যেকটাই নিয়ন রঙের হওয়ায় অন্ধকারের পার্টিতে রঙের চমক আনে।
|
আঁচ লাগান বারবিকিউয়ের |
• শুধু স্কচ বা ককটেলই এই পার্টির ড্রিঙ্ক নয়
• এই পার্টিতে আগুন তো জ্বলবেই। সিন্থেটিক পোশাক তাই কোনও ভাবেই চলবে না
• খোলা আকাশের নীচে মাংস পোড়ালেই বারবিকিউ পার্টি হয় না। মাইক্রোওয়েভেও বারবিকিউ করা যায়
• বারবিকিউ পার্টি মানেই ফুল ভলিউমের হিন্দি গান আর নাচ নয়
• রাতেই নয়। দুপুরেও করতে পারেন এই পার্টি
• ওভার ড্রেসিং নয়। সুন্দর অথচ অভিজাত হোক আপনার সাজ
• স্কার্ফ ব্যবহার করুন। স্টাইলও হল। পার্টি ফিলটাও রইল |
|
|