অবাধ গাঁজা চাষ চলছে কোচবিহারের ছিটমহলগুলিতে
কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চান জেলাশাসক
ধান খেতের পর শুরু গাঁজার খেত। বিঘার পর বিঘা জমি, বাড়ির উঠোনে, আনাচে-কানাচে গাঁজা গাছচার-পাঁচ ফুটের। পাতা ধরেছে প্রচুর। দিনহাটার শিবপ্রসাদ মুস্তাফি ছিটমহলের এটাই ছবি। পোয়াতের কুঠি, করলা, দক্ষিণ মশালডাঙার একাংশ থেকে শুরু করে মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশি ছিটমহলগুলিতে চলছে অবাধে গাঁজা চাষ। অবাধে কারণ, ভারতীয় প্রশাসন বাংলাদেশি ছিটমহলে যেতে পারে না। আবার সীমান্ত টপকে বাংলাদেশের প্রশাসনের পক্ষে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। গাঁজা চাষ রুখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন ও আবগারি দফতর। কিন্তু ছিটমহলের সামনে গিয়ে আটকে যাচ্ছে তারা।
ধানের পাশাপাশি গাঁজা চাষ। ছিটমহলে ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে একটি চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলাশাসক মোহন গাঁধী। তিনি বলেন, “আইনগত কারণে আমরা বাংলাদেশি ছিটমহলে গিয়ে গাঁজা চাষের বিরুদ্ধে অভিযান করতে পারছি না। বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরকে চিঠি দেব, যাতে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” তিনি জানান, জেলার অন্যত্র যেখানে গাঁজা চাষ হয়েছে, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। মাথাভাঙার জোরপাটকি এলাকায় গাঁজা চাষের সাত বিঘা জমি চিহ্নিত করে নষ্ট করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “আমাদের ছিটমহলের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। জেলার অন্যত্র গাঁজা চাষের খবর পেলেই অভিযান চালানো হবে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, কোচবিহারে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। তার বেশিরভাগই দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙায়। আইনত তা বাংলাদেশের হওয়ায় সেখানে ভারতীয় প্রশাসনের ঢোকার অনুমতি নেই। আবার এলাকা সীমান্তের এ পারে হওয়ায় বাংলাদেশের প্রশাসনেরও সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। ফলে ছিটমহলগুলিতে কোনও আইনের শাসনই নেই। জায়গাগুলি অপরাধমূলক কাজের আখড়া বলেও মাঝে মধ্যে অভিযোগ ওঠে। ওই এলাকার বাসিন্দাদেরও চরম কষ্টে দিন কাটাতে হয়। তাঁদের পরিচয়পত্র না থাকায় বাইরে কোথাও যেতে পারেন না। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য পরিচয় লোকাতে হয়। ভারতীয় কারও পরিচয় নিয়ে স্কুলে ভর্তি হতে হয়। অসুস্থ হলে ভারতীয় কারওর পরিচয় নিয়েই হাসপাতালে যেতে হয় তাঁদের। এলাকার গরিব মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় জমি। ধান বা আলু চাষ করে যে আয় হয় তাতে সংসার চালানো অসম্ভব। আর সেই অভাবের তাড়নাতেই তাঁরা গাঁজা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন বলে দাবি বাসিন্দাদের।
দিনহাটার একটি ছিটমহলের এক বাসিন্দা জানাচ্ছেন, কোচবিহারে গাঁজা চাষের একটি চক্র রয়েছে। এই জেলায় এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা গাঁজার বীজ দেয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের। ফলনের পর তারাই সেগুলি কিনে নেয়। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় ২০০ হেক্টরের বেশি জমিতে গাঁজা চাষ হয়েছে। উর্বর জমির মালিক যে চাষিরা, তাঁদের বেছে নিয়ে গাঁজা চাষের উৎসাহ দেয় কিছু দুষ্কৃতী। এক বিঘা জমিতে ২৫০-৩০০টি গাঁজা গাছ হয়। একটি গাছ থেকে প্রায় ৮০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায়। গাছ পরিণত হলে পাতা তুলে বিশেষ পদ্ধতিতে সেগুলি শুকিয়ে এক কিলোগ্রাম করে প্যাকেট করে ওই চক্রের সদস্যেরা।
গাছে থাকা অবস্থায় হাজার থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাজ থেকে তা কিনে নেয় চক্রের সদস্যেরা। প্যাকেট হয়ে যাওয়ার পর সেগুলি মোটর বাইক, ভুটভুটি বা বাসে পাচার হয়ে যায়। সে কাজও করে ওই চক্রই। ১ কেজি গাঁজা তিন হাজার টাকারও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। তার পরে সেগুলি দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে পাচার করা হয়। সেই কাজে আবার যারা যুক্ত থাকে তারা প্রতি কেজি ছ’ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করে। ছিটমহলের এক বাসিন্দা বলেন, “জমি চাষ করেই তো সংসার চালাতে হয়। ধান চাষে তেমন লাভ নেই। তাই বাধ্য হয়ে গাঁজা চাষে নেমেছি।”
জেলা আবগারি আধিকারিক মিলন বিশ্বাস বলেন, “আমরা সব রকম চেষ্টা করছি। গাঁজা চাষ রুখতে অভিযান চালানোর পাশাপাশি গ্রাম পঞ্চায়েতকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। ছিটমহলের কিছু সমস্যা আছে। সে সব নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।” ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেছেন, “কোনও সংগঠনের পক্ষে ছিটমহলে গাঁজা চাষ বন্ধ করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন ছিটমহল বিনিময়।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.