রাজস্ব আদায় কি জিটিএ-র হাতে, কথা আজ
বিনয় তামাঙ্গ সহ ধৃত সব নেতা-কর্মীর দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজ্যের কাছে আর্জি জানাল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বুধবার বিকেলে সল্টলেকের গোর্খা ভবনে ওই বৈঠকের গোড়াতেই মোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে ওই অনুরোধ জানানো হয়। মোর্চার প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানান, পাহাড়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময়ে অন্তত ১২০০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের সিংহভাগই জেলে রয়েছেন। সকলের পরিবারের লোকজন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, গত অক্টোবর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পাহাড়ে আর বন্ধ হবে না বলে তাঁরা যে ঘোষণা করেছেন, সে কথাও উল্লেখ করেন মোর্চা প্রতিনিধিরা। এর পরে সার্বিক প্রেক্ষাপটের কথা মাথায় রেখে ধৃতদের মুক্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফরের পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্কের বরফ কিছুটা গলেছিল। এ দিনের আলোচনায় দু’পক্ষই নরম মনোভাব দেখিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। বৈঠক শেষে সরকার ও র্মোচাদু’পক্ষ থেকেই পৃথক ভাবে দাবি করা হয়, আলোচনা হয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে নবান্নে কেন্দ্র, রাজ্য ও জিটিএ-র ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ওই বৈঠকে থাকবেন।
এ দিনের বৈঠকে জিটিএ-র প্রতিনিধিত্ব করা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা যথারীতি আরও ক্ষমতা ও আরও অর্থের দাবি করলেও রাজ্য সরকার যে সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, তার ইঙ্গিত মুখ্যসচিবের কথায় মিলেছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, “জিটিএ-তে বিভিন্ন দফতরের ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখেছেন মোর্চা নেতৃত্ব। এই ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। কী করে আরও ভাল করে জিটিএ কাজ করতে পারে, সে জন্য জিটিএ আইনে কিছু সংশোধন চেয়েছেন তাঁরা। রাজ্যও চায়, একটি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে জিটিএ কাজ করুক। সেই ব্যাপারে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।”
মুখ্যসচিব আরও জানান, জিটিএ-র পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার চেয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যসচিব মোর্চা নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজস্ব আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় সরকার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। জিটিএ প্রতিনিধিদের মুখ্যসচিব জানান, রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হলে বিভিন্ন আথির্ক সাহায্য জিটিএ আর পাবে না। মুখ্যসচিব তাঁদের আরও জানান, মোর্চার প্রস্তাব সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে পেশ করা হবে।
মোর্চার প্রতিনিধি দলের অন্যতম নেতা ততা কার্শিয়াঙের বিধায়ক রোহিত শর্মা বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে আমাদের অগ্রাধিকার তালিকার প্রথমে ছিল ধৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়টি। কারণ, জিটিএ-এর ৪৫ জন নির্বাচিত সদস্য-সদস্যার মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেলে রয়েছেন। রাজ্যের প্রতিনিধিরা বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে স্পষ্ট আশ্বাসও দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী। কারণ, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।” সেই সঙ্গে ওই আলোচনায় পাহাড়ের অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ, কয়েকটি দফতরের সম্পদ জিটিএ-কে হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবিও করা হয়েছে। জিটিএ পাহাড়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেমির কর্মী নিয়োগের জন্য যে সাব অর্ডিনেট সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে তা দ্রুত অনুমোদনের জন্যও রাজ্যকে অনুরোধ জানান মোর্চা প্রতিনিধিরা।
সরকারি সূত্রের খবর, ওই বোর্ড গঠনের প্রস্তাব বর্তমানে রাজ্যের আইন দফতরের বিবেচনাধীন। সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জিটিএ-র কাজকর্মে যাতে আরও গতি আনা যায়, সে জন্য অতি মাত্রায় তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মোর্চা প্রতিনিধিদের। বৈঠকে রাজ্যের তরফে এটাও বলা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত জিটিএ-এর যাবতীয় কাজ মোর্চার আন্দোলনের জেরে বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের হয়রানি হয়েছে। নানা সরকারি প্রকল্পের কাজও করা যায়নি ঠিকঠাক। সেই বকেয়া কাজ শেষ করার উপরে জোর দেওয়ার জন্যও জিটিএ প্রতিনিধিদের অনুরোধ করেছে রাজ্য।
মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে যাতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট তাড়াতাড়ি হয়, সে জন্য রাজ্যকে উদ্যোগী হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে রাজ্য সরকার আপাতত গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ভোট করিয়ে পরে পঞ্চায়েত আইন সংশোধনের পরে ত্রিস্তর ভোটের পক্ষপাতি। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “সব বিষয়েই খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী উন্নয়নে গতি আসবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা তাড়াতাড়ি জেল থেকে ছাড়া পাবেন।” তিনি জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল হস্তান্তর সহ বেশ কয়েকটি বিষয়টি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হবে। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতাতেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
রোশন গিরি জানান, জিটিএ-র কার্যনির্বাহী সদস্যদের প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে জিটিএ যুবাদের জঙ্গমহলের আদলে পুলিশে নিয়োগ করার দাবিও জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের তহবিলে এখনও পড়ে থাকা ৫০ কোটি টাকা জিটিএ-কে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.