বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে এক শালপাতা ব্যবসায়ীর খুনের ঘটনাকে ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। বারিকুল থানার বড় পূর্ণাপানি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল থেকে বুধবার সকালে বিজয় মাঝি (৪৪) নামের ওই ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে সিংহলহর গ্রামে তাঁর বাড়ি। সোমবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ থাকা ওই ব্যবসায়ীকে কারা খুন করেছে তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে বিজয়বাবুকে খুন করা হয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশসুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ওই ব্যক্তির মাথায় ক্ষতচিহ্ন দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা খুনের ঘটনা। তবে কী কারণে কারা তাঁকে খুন করেছে তা স্পষ্ট নয়। সবদিক খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে।”
একসময়ে মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য ছিল এই এলাকায়। জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি বদলানোর পরে গত কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় কার্যত খুনের ঘটনা ঘটেনি। তবে এই খুনের পিছনে মাওবাদীদের হাত নেই বলে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান। নিহতের স্ত্রী সুলেখা মাঝির অভিযোগ, “ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই পরিকল্পনা করে কেউ আমার স্বামীকে খুন করেছে।” যদিও পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট ভাবে তিনি কারও নামে অভিযোগ দায়ের করেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চাষাবাদের পাশাপাশি বিজয়বাবু শালপাতা কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, পাঁচ বছরের একটি ছেলে ও তিন বছরের এক মেয়ে রয়েছে। নিহতের স্ত্রী জানান, সোমবার সন্ধ্যায় বিজয়বাবু বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। রাতে তিনি বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকেরা চিন্তায় পড়েন। মঙ্গলবার তাঁর সন্ধানে সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু কোথাও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সুলেখাদেবী বলেন, “এ দিনই পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করতে যাব ভেবেছিলাম। তার আগেই এই খবর পেলাম।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বড় পূর্ণাপানির রাস্তা লাগোয়া জঙ্গলে এক ব্যক্তির দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বারিকুল থানার ওসি শ্যামাপ্রসাদ প্রধান বিশালবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। দেহের পাশে প্রচুর রক্তের দাগ থাকায় পুলিশের অনুমান, ওই জায়গাতেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। বারিকুলের জঙ্গলে এই খুনের ঘটনার খবরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
পুলিশ সুপার বলেন, “ওই ব্যক্তিকে কেউ ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে কি না, জানার চেষ্টা চলছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী সংস্রব নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।” |