নামেই উপ-নির্বাচন। আসলে পুরোদস্তুর ভোট-যুদ্ধ চলছে রঘুনাথপুরে। পুরসভার দু’টি ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ। তার হাতে গরম উদাহরণ, এলাকায় টানা প্রচার করছেন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। আর তৃণমূল মিছিল করছে রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে নিয়ে। কাল, শুক্রবারের উপ-নির্বাচন ঘিরে তাই ক্রমেই চড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ।
জেলার অন্যতম পুরনো এই পুরসভার উপ-নির্বাচন হচ্ছে ৯ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর গোপাল বাগদির মৃত্যু হওয়ায় সেখানে নির্বাচন হচ্ছে। আর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গত (২০১০ সাল) পুর-নির্বাচনে ভোটই হয়নি। নির্বাচনের আগের রাতে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’-র অভিযোগ তুলে বুথমুখো হননি ভোটারেরা। দুটি ওয়ার্ডই কাউন্সিলরহীন অবস্থায় রয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। |
স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের দখলে থাকা এই পুরসভার উপ-নির্বাচনের প্রচারে ঘুরেফিরে আসছে নাগরিক পরিষেবা না পাওয়া ও কিছু দুর্নীতির বিষয়। এত দিন কাউন্সিলর না থাকায় পুর-পরিষেবা সংক্রান্ত যে ক্ষোভ জমেছে ওই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মনে, তাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধীরা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, এসইউসি এবং বিজেপি। ৯ নম্বরে অবশ্য বিজেপি বাদ দিয়ে বাকি চার দল প্রার্থী দিয়েছে। দুই ওয়ার্ডের মিলিত ভোটার সংখ্যা ২১১৮। বিরোধীরা প্রচারে নিয়ম করেই বলছে, অন্য সব ওয়ার্ডে যেটুকু নাগরিক পরিষেবা দিয়েছে পুরসভা, কাউন্সিলর না থাকায় এই দু’টি ওয়ার্ড তা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত থেকে গিয়েছে।
বস্তুত, এলাকায় ঘুরলেই চোখে পড়বে, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ, বেহাল রাস্তাঘাট ও নিকাশি ব্যবস্থা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার কংগ্রেসের প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। কর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার স্লিপ বিলি করার সময় দলের রঘুনাথপুর শহর কমিটির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয়বাবু বললেন, “পরিবারে অভিভাবক না থাকলে যে অবস্থা হয়, এই দু’টি ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সেই কথাই প্রযোজ্য। বাসিন্দাদের সামান্য প্রয়োজনেও ছুটতে হচ্ছে পুরসভায়। সেখানে গিয়ে শুনতে হচ্ছে, ওয়ার্ড কমিটিকে বলুন। আবার তৃণমূল পরিচালিত ওয়ার্ড কমিটি বলছে, তাদের কিছু করণীয় নেই। যা করার করবেন পুরপ্রধান। ছুটোছুটিই সার। পরিষেবা পাচ্ছেন না বাসিন্দারা।”
১২ নম্বর ওয়ার্ডেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দরিদ্রসীমার নিচে বাস করা দুই বাসিন্দার জন্য বাড়ি নির্মাণের ঘটনাকে ঘিরে পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, “ওই প্রকল্পে যাঁদের বাড়ি তৈরি হওয়ার দরকার ছিল, তাঁরা তা পেলেন না। আর যাঁদের বাড়ি নির্মিত হল, তারা সেই সুবিধা পাওয়ার যোগ্যই নন।” পাশাপাশি, দরিদ্র মানুষের জন্য বর্ষায় ত্রিপল ও শীতকালে কম্বল পুরসভায় এলেও এই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সেগুলি পাননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওয়ার্ডের গোয়ালাপাড়া এলাকায় নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণ করেছে পুরসভা। অন্য দিকে, প্রয়োজন থাকলেও রাস্তা নির্মাণ হয়নি বাঁকড়াপাড়া এলাকায়।
একই ছবি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাঁটিপাড়া, হাড়িপাড়ায়। রাস্তা হয়নি সেখানে। কোথাও স্তূপাকৃতি আবর্জনা। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “কাউন্সিলর থাকার সময়ে তবু কিছু নাগরিক পরিষেবা মিলত। তাঁর মৃত্যুর পরে পুরসভা আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।” নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায় বলেন, “ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত ওই দু’টি ওয়ার্ডের মানুষ। পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডেরই বড় অংশের বসিন্দা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তাঁদের কর্মসংস্থান দিতেও ব্যর্থ পুরসভা।”
তবে, দুই ওয়ার্ডেই কিছু এলাকায় পাকা রাস্তা হয়েছে। নাগরিক পরিষেবা বলতে এইটুকুই। কাউন্সিলর না থাকায় কাজে কিছু সমস্যা হয়েছে মেনেও তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি সুধীর বাউরির দাবি, “ওই দুই ওয়ার্ডে বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা-সহ অন্যান্য প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। পুরপ্রধানের নজরদারিতে উন্নয়ন হয়েছে। ভিত্তিহীন অপপ্রচার করছে বিরোধীরা।” |