“ভাল গান গাইতে গেলে শৈশব থেকেই ভালবাসতে হবে গানকে। গান শুনে সুরের সাধনা করতে হবে।”—শিক্ষক মান্না দে’র এই কথাগুলোর উপরেই জীবন প্রতিষ্ঠিত করেছেন হাসনাবাদের ভেবিয়ার পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে শিশুদের গান শেখানোই জীবনের ব্রত করে নিয়েছেন তিনি।
১৯৮৪ সালে বসিরহাটের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিলেন মান্না দে। পীযূষ তখন বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্র। চিঠিপত্রে আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল মান্না দে’র সঙ্গে। কিন্তু অনুষ্ঠানে অত বড় শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহস হয়নি। মান্না দে পরে বলেছিলেন, “বসিরহাটে যখন গান করতে গিয়েছিলাম, আমার সঙ্গে দেখা করলে না কেন?”
|
সেই কথাগুলো আজও ভুলতে পারেননি পীযূষ। তাঁর কাছে গান শিখতে চান বলে মান্না দে-কে পীযূষ চিঠি লিখেছিলেন। তিনি। তখন অবশ্য আর এক শিক্ষকের কাছে গান শিখছেন তিনি। সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন চিঠিতে। মান্না দে রাজি হননি। বলেছিলেন, যাঁর কাছে শিখছেন, তাঁর কাছেই মন দিয়ে গান শিখতে।
তার বেশ কয়েক বছর পরে অনেক অনুরোধের পর ২০০৩ সালে পীযূষকে গান শেখাতে রাজি হন মান্না। ২০১০ সাল অবধি টানা সাত বছর চলে সঙ্গীত শিক্ষা। পীযূষ জানান, মান্নাবাবু তাঁকে বাপিন বলে ডাকতেন। আর তিনি মান্না দে-কে ডাকতেন কাকাবাবু বলে। তাঁর ভাইপো সুদেব দে-র সূত্রে মান্না দে’র সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, তাই। কলকাতায় এলে তাঁর আনা বসিরহাটের নলেন গুড় আর পাটালি গুড় খেতে ভালবাসতেন খুব। |
বছর পঞ্চাশের পীযূষের স্মৃতিতে ভিড় করে আসে কত কথা। কাকাবাবু নেই, সেই কথাটা ভাবতে পারেন না। বলেন, “সেই সময়ে আমাকে গান শেখানোর জন্য দু’আড়াই ঘণ্টা করে পরিশ্রম করতেন কাকাবাবু। এখনও যখন সকালে রেওয়াজ করতে বসি, মনে হয় কে যেন বলছেন, চেষ্টা করে যা। চেষ্টার কোনও বিকল্প নেই। দেখবি, এক দিন ঠিক তুই গলায় নিজের সুরটা প্রতিষ্ঠিত করতে পারছিস। |