শীত পড়তেই সুন্দরবনে শুরু হয়ে গিয়েছে পর্যটন মরসুম। সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, বাসন্তী প্রভৃতি এলাকায় রান্নার গ্যাসের সমস্যা। ওই সব এলাকার গ্যাসের গ্রাহকদের অভিযোগ, সারা বছরই গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে সমস্যা থাকলেও এই সময় তা ভয়ঙ্কর আকার নেয়। কারণ সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের রান্না করার জন্য এই সময় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কালোবাজারিও বেড়ে যায়। তা ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ডোমেস্টিক সিলিন্ডারের গ্যাস অটোয় ব্যবহার করায় সমস্যা আরও বেড়েছে। যার ফলে তাঁদের মতো নির্দিষ্ট গ্রাহকেরা প্রয়োজনীয় সিলিন্ডার পাচ্ছেন না।
শুধু গোসাবা-বাসন্তী নয়, গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছে গোটা ক্যানিং মহকুমা জুড়েই। মহকুমা শাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “এমন ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, শুধু গ্যাস কম পাওয়ার সমস্যাই নয়, গ্যাস নিয়ে আর এক সমস্যাতেও নাকাল হতে হচ্ছে তাঁদের। যেমন সিলিন্ডার নেওয়ার সময় তাঁদের সাবান, বিস্কুট, ধূপের মতো জিনিস নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রয়োজন না থাকলেও তাঁরা তা নিতে বাধ্য হচ্ছেন গ্যাস না পাওয়ার কথা ভেবে। এ ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট দামের চেয়ে বেশ কিছু টাকা বেশি দিয়ে তা নিতে হচ্ছে। |
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, গোসাবায় কোনও গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্সি নেই। বাসন্তীতে একমাত্র ভারত গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর আছে। ওই ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকেই বাসন্তী ও গোসাবায় সমস্ত গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একজন সরবরাহকারী বাসন্তী থেকে গ্যাস নিয়ে গোসাবায় সরবরাহ করে থাকেন। বাসন্তীতে যে গ্যাস ৪১৪ টাকায় বিক্রি করা হয়, গোসাবায় তা বিক্রি করা হচ্ছে ৫৬০ টাকায়। এ ছাড়া সুন্দরবনে পর্যটন মরসুম শুরু হওয়ায় যে সব গ্রাহকের দু’টি করে সিলিন্ডার পাওয়ার কথা, তাদের তা না দিয়ে একটি বাইরে বিভিন্ন হোটেলে, লঞ্চে বা মিষ্টির দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় এলপিজি অটো চালু হয়েছে। অথচ অটোর সিলিন্ডার রিফিলিং করার কোনও ব্যবস্থা নেই ক্যানিংয়ে। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের ডোমেস্টিক সিলিন্ডার থেকে অটোর সিলিন্ডারে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। গোসাবার বাসিন্দা মধুসূদন নাগ, তাপসী মজুমদার, রমেশ মাইতি বলেন, সিদ্ধেশ্বর মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি বাসন্তী থেকে গ্যাস এনে গোসাবায় সরবরাহ করেন। তিনি গ্যাসের দাম যেমন বেশি নিচ্ছেন, সেই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির জিনিস জোর করে নিতে বাধ্য করছেন। নাহলে গ্যাস দিচ্ছেন না। এই নিয়ে আমরা গোসাবা থানাতেও অভিযোগ জানিয়েছি।
গোসাবা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদিও বেশি দাম নেওয়ার যুক্তি হিসাবে সিদ্ধেশ্বর মণ্ডল বলেন, “দুটো নদী পার করে সিলিন্ডার নিয়ে আসতে হয়। ফলে বহন খরচ অনেক পড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে দাম বেশি নিতে হয়। তা ছাড়া ডিস্ট্রিবিউটররা সিলিন্ডারের সঙ্গে ওই সব জিনিস বিক্রি করতে বলেছেন।”
এ ব্যাপারে বাসন্তীর ভারত গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “গ্যাসের কোম্পানি থেকেই আমাদের ওই সব জিনিস বিক্রি করতে বলেছে। আর মাসে আমাদের যে পরিমাণ গ্যাস সিলিন্ডার প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রাহকদেরও দেওয়া যাচ্ছে না।”
ভারত গ্যাসের কলকাতা জোনের সেলস ম্যানেজার ঋষিকেশ সরকার বলেন, “গ্যাস নেওয়ার সঙ্গে অন্য কোনও জিনিস কিনতে হবে, সংস্থার এমন কোনও নিয়ম নেই। যদি কোথাও এমন হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের অভিযোগ জানালে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” |