তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই এড়াতে কড়া পুলিশ পাহারায় জাহাজ থেকে মাল খালাস করা শুরু হল। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ডায়মন্ড হারবার বন্দরে ওই কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে প্রায় সব মাল খালাস করা যাবে বলে মনে করছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ কর্তারা।
রবিবার রাতে ডায়মণ্ড হারবারে আব্দালপুর এলাকায় ‘এমভি সাইগন প্রিন্সেস’ নামে একটি জাহাজ নোঙর করেছিল। মালয়েশিয়া থেকে কাঠের গুঁড়ি নিয়ে ভারতে আসে সেটি। টি পি রায়চৌধুরী প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা জাহাজের মাল খালাসের বরাত পেয়েছে। তাদের তরফে তৃণমূলের একটি সংগঠনের শ্রমিকদের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়েছিল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই বরাত নিয়েই তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী বিবাদে জড়িয়ে যায়। তার একটি ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদারের অনুগামী, অন্যটি ডায়মন্ড হারবারের উপ-পুরপ্রধান পান্নালাল হালদার ও আইনজীবী নেতা তুষার হালদারের অনুগামী। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাল খালাসের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ পেয়েছিল পান্নালাল অনুগামী গোষ্ঠীর শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু তারা কাজ শুরু করলে অপর গোষ্ঠী হামলা চালায়। তারা পান্নালাল গোষ্ঠীর শ্রমিকদের মেরে-ধরে মাল পরিবহণকারী একটি বার্জ ছিনতাই করে রায়চকের দিকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পুলিশের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। |
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের তরফে দীপক ও পান্নালালের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়। পুলিশকর্তারা দুই গোষ্ঠীর শ্রমিকদের নিয়ে মীমাংসা বৈঠকও করেন। পান্নাবাবু ও দীপকবাবু দু’জনই ওই বৈঠক এড়িয়ে যান। সন্ধ্যা পর্যন্ত রফাসূত্রও বেরোয়নি। এর পরেই পুলিশ ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ পাওয়া শ্রমিক সংগঠনকে মাল খালাস করতে বলে। মাঝরাত থেকে কাজ শুরু হয়। বুধবার সকালে আব্দালপুরে গিয়ে দেখা যায়, কড়া পুলিশ পাহারায় ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে কাঠের গুঁড়ি বার্জে তোলা হচ্ছে। পরে বার্জগুলি গন্তব্যের দিকে রওনা দিচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সর্ংঘষ এড়াতে সকাল থেকে ডায়মন্ড হারবার জেটি ও আব্দালপুরে কড়া নজরদারি রয়েছে। কয়েকটি ভুটভুটিও আব্দালপুর এলাকা নদীপথে টহল দিচ্ছে। পান্নাবাবু অবশ্য দাবি করেন, “আমার সঙ্গে বন্দরের শ্রমিক সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। অযথা মিথ্যা প্রচার করে ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।” দীপকবাবুরও দাবি, “ওখানে শ্রমিকদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। আমি কোনও ভাবেই ওতে জড়িত নই।”
ডায়মন্ড হারাবার জেটি থেকে তিন কিলোমিটার পরে তিনটি বন্দর আছে। মাসে গড়ে চার-পাঁচটি বিদেশি জাহাজ সেগুলিতে নোঙর করে মাল খালাস করে। ২০০০ সালের পর থেকে সেগুলিতে তৃণমূল ও সিটু নিয়ন্ত্রিত দু’টি শ্রমিক সংগঠন ছিল। তৃণমূলের সংগঠন পান্নালালবাবুর অনুগামীরা চালাতেন। ২০০৮ সালের পরে সিটুর শ্রমিক সংগঠনটিও দখল করে তৃণমূল। বিধায়কের অনুগামীরা সেটির রাশ হাতে নেন। |
কাজ চলছে কাকদ্বীপের চার নং জেটিতে। বুধবার। |
ডায়মন্ড হারবার তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০০৮ সালের পর থেকে এক গোষ্ঠী একটি জাহাজের মাল খালাস করলে পরের জাহাজে খালাসের কাজ করত অন্য গোষ্ঠী। দুই সংগঠনের মধ্যে এ রকমই একটি অলিখিত চুক্তি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দুই গোষ্ঠী বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনটি বন্দরের দখল দখল নেওয়া নিয়ে কাজিয়া চলছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই পাহারা দিয়ে মাল খালাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিষয়টি প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদেরও জানানো হয়েছে।” |
বুধবার ছবি তুলেছেন দিলীপ নস্কর। |