শেষ প্রচারে মরিয়া ভাবটা প্রকট হয়ে উঠল।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত বহরমপুর শহরের রাস্তায় শেষ লগ্নের প্রচারে সে কথাটাই মালুম হল কংগ্রেস, তৃণমূল এমনকী বামফ্রন্টের প্রচার দেখে। কখনও রোড-শো, কখনও পথসভা, পরক্ষণেই হাতজোড় করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়ে মাসি-পিসি, চাচা-চাচি সম্বোধনে ভোটভিক্ষা।
সেই প্রচারে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরি থেকে শাসক দলের সুব্রত সাহা সকলেই সামিল।
অধীর এ দিন চরকি পাক দিলেন কাশিমবাজার থেকে আমড়াতলায়। কখনও রোডশো করলেন গির্জাপাড়ায়। তারপরেই ছুটলেন রাজ্য রেশম গবেষণা কেন্দ্রের আবাসনে। শেষ দুপুরে হাসপাতালের পিছনে মুসলমানপাড়ায়।
প্রচারে পিছিয়ে নেই তৃণমূলের প্রাক্তন ও বর্তমান দুই মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর ও সুব্রত সাহা। সকালে দুই মন্ত্রীই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধুপুরে পথসভা করেন। সভা শেষে সেখান থেকে রোডশো করেন সুব্রত। হুমায়ুন পৌঁছে যান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুঞ্জুঘাটার পথসভায়। সভা শেষ করে তাঁরা কাজি নজরুল ইসলাম সরণির কান্দি বাসস্ট্যান্ডের কাছে। সেখান থেকে তাঁরা পুরভোটের শেষ প্রচার মিছিল রওনা করিয়ে দেন গোরাবাজারের দিকে। বামফ্রন্টের প্রার্থী ও কর্মীরা শেষলগ্নের প্রচার সেরেছেন ভোটারদের বাড়ি গিয়ে সর্বত্র। তাঁদের প্রচারেও মরিয়া ভাবটা কিন্তু চোখ এড়ায়নি। |
হুমায়ুন থেকে সুব্রত সবার গলায় রেলের উড়ালপুল নিয়ে অজস্র অভিযোগ। তাঁরা বলেন, “রেল প্রতিমন্ত্রী এই শহরের। অথচ তিনি আজও বহরমপুর শহরের চুয়াপুর ও পঞ্চাননতলা রেলগেটের উপর উড়ালপুল তৈরি করতে পারলেন না কেন?” অধীরের পাল্টা, “উড়ালপুল তৈরির খরচের অর্ধেক রাজ্যের ও অর্ধেক কেন্দ্রের দেওয়ার নিয়ম। রাজ্য সরকার এক পয়সাও দেয়নি। সব টাকাই রেলের। শিলান্যাসও হয়েছে। রেলগেটের দু’ পাশের দোকানঘরও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিহিংসা পরায়ণ তৃণমূল সরকার কয়েক মাস ধরে অনুমোদন না দিয়ে উড়ালপুলের নকশা আটকে রেখেছে।”
বস্তি এলাকায় গিয়ে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, “গঙ্গার ধারের বস্তির জমি পুরসভার নয়। ওই জমি রাজ্য সরকারের। বাম সরকার ৩৪ বছরে ও তৃণমূল সরকার আড়াই বছরে বস্তির মানুষদের পাট্টা না দিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করছে। যা শুনে সরকারি মুখপাত্র হয়ে মন্ত্রী সুব্রত প্রচার করছেন, “পুরসভার মদতে গড়ে তোলা বহুতলে জল উঠছে সাবমারসিবেল পাম্পে করে। ফলে একতলা দোতলা বাড়ির লোক জল পাচ্ছে না সাধারণ নলকূপ থেকে। এ দিকটা ভেবেছে কংগ্রেসের পুরসভা?”
পুরসভা দখল করতে যুযুধান দু’ পক্ষই শহরটাকে নিজেদের মতো করে ভাগ করে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছে। ২৮ ওয়ার্ডের পুরসভা ৭টি এলাকায় ভাগ করেছে কংগ্রেস। মনোজ চক্রবর্তী, অপূর্ব সরকার, আবু তাহেরদের মতো বিধায়করা এক একটি এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন। তৃণমূল ভাগ করেছে ৫টি এলাকায়। ওই সব এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন মন্ত্রী সুব্রত সাহা, প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরদের মতো দলীয় নেতৃত্ব। সি পি এমের বহরমপুর শহর জোনাল সম্পাদক সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আলাদা করে এলাকা ভাগাভাগি করিনি। ২৮টি ওয়ার্ড ধরেই লড়ছি।” লড়ছেন তো বটে তারপর? সব পক্ষই বলছে, “দেখুন না কি হয়!” |