|
|
|
|
নজিরবিহীন ঘটনা ইস্টবেঙ্গলে |
ফালোপা আর আর্মান্দোকে একই মঞ্চে সংবর্ধনা দিলেন কর্তারা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ছাঁটাই হওয়া কোচ আর তাঁর জায়গায় আসা নতুন কোচ পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছেন! একে অন্যকে নিজের চেয়ার এগিয়ে দিচ্ছেন, বসার জন্য!
নতুন কোচ প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন প্রাক্তন কোচকে। বলে দিচ্ছেন “উনি প্রফেসর। সম্মানীয় ব্যক্তি। ডার্বি জিতলে ওকেই উৎসর্গ করব।” পাল্টা প্রশংসাও আসছে। “পাঁচটা আই লিগ দেশে তো কারও নেই। উনিই সেরা কোচ ভারতের। ইস্টবেঙ্গল সুরক্ষিত।”
ক্লাব কর্তারা দু’জনের হাতে একই মঞ্চে তুলে দিচ্ছেন পুষ্পস্তবক, স্মারক। যা দেখে চিডি, মোগা, খাবরারা হাততালি দিচ্ছেন। বিস্ময়ের হাসি মুখে ঝুলিয়ে।
যে ফুটবলাররা কয়েক দিন আগে বিদ্রোহী হয়েছিলেন, কোচ অপসারণের জন্য। সেই কোচের বিদায়ের দিনে তাঁরই হাতে ‘চাঁদা তুলে’ কিনে আনা ঘড়ি তুলে দিয়ে সেই ফুটবলাররাই বলছেন, “আপনাকে আমরা মিস করব। আপনি আমাদের হৃদয়ে সারা জীবন অক্ষয় হয়ে থাকবেন!”
নজিরবিহীন এবং নাটকীয় এই ঘটনা দেখল বহু চমকপ্রদ ঘটনার সাক্ষী ময়দান। ছাঁটাই মার্কোস ফালোপা আর তাঁর জায়গায় কোচ হয়ে আসা আর্মান্দো কোলাসোকে পাশাপাশি বসিয়ে বুধবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল মাঠে যা হল, তা ভারতে তো বটেই— বিশ্ব ফুটবলে কখনও হয়েছে কি না তা নিয়ে ফেসবুক, টুইটারে তর্কের ঝড় উঠেছে। ময়দান জুড়ে নানা বিতর্ক। ইস্টবেঙ্গল ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বলছিলেন, “ইস্টবেঙ্গলই এটা করতে পারে। কারণ আমরা সবাইকে সম্মান দিই।” |
সৌজন্য। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুই কোচ। ছবি: উৎপল সরকার। |
মিষ্টির প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বা পার্ক সার্কাসে গাড়ি থেকে কোচকে নামিয়ে দিয়ে, “আপনার আর কাল থেকে চাকরি নেই” এটা ছিল মোহনবাগানের রেওয়াজ। কিন্তু তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর গত কয়েক বছরে বাগানে নতুন ট্রেন্ড, ফুলের তোড়া, স্মারক আর বিমানের টিকিট ধরিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে হাসিমুখে কোচ বিদায়। বর্তমান কোচ করিম বেঞ্চারিফাকেও এই কায়দায় বিদায় করা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। মোহনবাগানে অবশ্য দুটো প্রেস কনফারেন্স হয়। একটা বিদায়ের। অন্যটা আগমনের। কিন্তু বিদায়ী আর আগমনীর সুর একই মঞ্চে তারা ঘটাতে পারেনি কখনও। গঙ্গাপারের তাঁবুকে ডার্বির তিন দিন আগেই তাই হারিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।
ভদ্রলোক মার্কোস ফালোপা বিদায়ী ভাষণে বলছিলেন, “ক্লাব ছাড়ছি, কিন্তু বন্ধুত্ব ছাড়ছি না। ডার্বির সময় ব্রাজিলে থাকব। নেটে, ইউটিউবে ম্যাচ দেখব। ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য চাইব।” ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার থেকে টিমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অ্যালভিটো ডি কুনহা সবাই বললেন, “ফালোপার ছেলে সুস্থ থাকুন, ভাল হয়ে উঠুন এটা চাই।” কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে ফালোপা একবারও তাঁর ছেলের জন্য ব্রাজিল ফিরে যাচ্ছেন বলেননি। ছেলে আমেরিকো ফালোপাও হাসিমুখে বসে ছিলেন। স্মারক নিলেন। ছবি তুললেন। তা হলে কেন বিদায় নিতে হল ফালোপাকে? সেটা অবশ্য কিছুটা বোঝা গেল, ফুটবলারদের সঙ্গে বিদায়ী কোচের ছবি তোলার সময়। চিডি, মোগা, সুয়েকারা প্রাক্তন কোচের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনই মনে করেননি। গ্যাঁট হয়ে বসে ছিলেন চেয়ারে। মোগা প্রাক্তন কোচের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গেলেও চিডি-সুয়েকা তা-ও করেননি। ক্লাব সূত্রের খবর, ফালোপা নাকি যাওয়ার আগে আর্মান্দোকে সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছেন, টিমের কয়েক জন ‘বেয়াড়া’ ফুটবলার সম্পর্কে।
নতুন কোচ আর্মান্দো অবশ্য আজ বৃহস্পতিবার থেকেই নেমে পড়ছেন অনুশীলনে। ডার্বির প্রস্তুতিতে। তাঁর আগে প্রাক্তনের সঙ্গে পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলে গোয়ান কোচ জেনে নিয়েছেন, ড্রেসিংরুমের পরিবেশ। টিমের ভাল-মন্দ। কোলাসো বলে দিলেন, “ডেম্পোর ফর্মুলাতেই চলব ইস্টবেঙ্গলে। আই লিগ আর ফেড কাপ ছাড়া বাকি টুর্নামেন্টে খেলবে জুনিয়ররা। কর্তারা আমাকে বলেছেন, আপনার কাজে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।” ইস্টবেঙ্গল তঁবু থেকে বেরোনোর সময় যা শুনে ফালোপা বলে গেলেন, “কোলাসোর জন্য গুডলাক রইল।” |
|
|
|
|
|