সতীর্থদের বলেছিলাম, স্কোরটা বলিস না: পৃথ্বী
দেবাশিষ সেন • মুম্বই |
কুসংস্কার না মুম্বইকর ব্যাটিং পাঠশালার রীতি-নীতি? শুনে হাসছে পৃথ্বী পঙ্কজ শ। বলছে, “কিছুই না। মনঃসংযোগ ধরে রাখতেই ব্যাট করার সময় সতীর্থদের বলি স্কোর জানাবি না।”
খুদে ক্রিকেটার ব্যাট করার সময় স্কোর জানতে না চাইলেও তার স্কোর জানতে এ দিন হুড়োহুড়ি। বুধবারই স্কুল ক্রিকেটে ভারতীয় রেকর্ড গড়ে পৃথ্বী ঢুকে গিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। মুম্বইয়ের স্কুল ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট হ্যারিস শিল্ডে এ দিন পৃথ্বী করল ৫৪৬। যা সাজানো গোটা পঁচাশি বাউন্ডারি এবং পাঁচ ছক্কায়। রিজভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলের এই উঠতি প্রতিভার ৩৩০ বলে ছ’ঘণ্টা সাত মিনিটের ইনিংস দেখতে আজাদ ময়দানের বেরোনেট ক্রিকেট ক্লাবের মাঠে সকাল থেকেই উপচে পড়েছিল দর্শক-সাংবাদিকদের ভিড়। বরিভলির ফ্রান্সিস ডি’অ্যাসিস স্কুলের বিরুদ্ধে পৃথ্বীর এই ‘ম্যামথ রান’ চুরমার করে দিল এই টুর্নামেন্টেই আরমান জাফরের ৪৯৮ রানের রেকর্ড।
ফ্রান্সিস ডি’অ্যাসিস স্কুলের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ২৫৭ রানে নট আউট ছিল পৃথ্বী। এ দিন সকালে এক সেশনেই সে তোলে ২০৭ রান। দ্বিতীয় উইকেটে সত্যলাষ জৈনের (১৬৪) সঙ্গে পৃথ্বীর ৬১৯ রানের পার্টনারশিপ কপালে চোখ তুলে দিয়েছে ক্রিকেট সমালোচকদের অনেকেরই।
|
তাঁর প্রধান ক্রিকেট-পথপ্রদর্শক বাবার সঙ্গে পৃথ্বী। ছবি: দেবাশিষ সেন। |
এ দিন ব্যাট করার সময় পাঁচশো করার আগে অবধি নিজের রান জানতে না পারলেও পাঁচশো করার পরেই টিমমেটরা মাঠে জল খাওয়াতে গিয়ে তাকে রান বলে দেয়। আর তার পরেই মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে তার। এই সময় বার দু’য়েক সুযোগও দিয়ে ফেলেছিল বিপক্ষ বোলারদের। কিন্তু তার পরেই সামলে নেয় নিজেকে।
সচিনের আদ্যন্ত ভক্ত এই ক্রিকেটারের প্রিয় শট আবার কভার ড্রাইভ। এ দিনের অতিমানবিক ইনিংস সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া, “কোনও প্ল্যান ছিল না। লুজ বলগুলোর জন্য অপেক্ষা করে গিয়েছি। আর সিঙ্গলস নিতে ভুলিনি। তবে শেষের দিকে একটু ক্লান্ত লাগছিল। তার জন্য প্রচুর জল খাচ্ছিলাম খানিক পরে পরেই।”
চার বছর বয়স থেকে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। ছেলের ইনিংস দেখতে এ দিন মাঠে এসেছিলেন বাবা পঙ্কজ অশোক শ। পৃথ্বীর ইনিংস দেখে খুশি হলেও ভিতরে ভিতরে শঙ্কিত ছেলেকে ঘিরে সাংবাদিকদের হামলে পড়ায়। এক সময় তাঁদের বলতেও বাধ্য হলেন, “বেশি হইচই করবেন না। ওকে খেলতে দিন। এখনও অনেক রাস্তা যেতে হবে ওকে।”
আর রিজভি স্প্রিংফিল্ড স্কুলে পৃথ্বীর কোচ রাজু পাঠক বলছেন, “খুব বাধ্য ছেলে। নিজেকে ঠিকঠাক ধরে রাখতে পারলে ও কিন্তু লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।” আর পৃথ্বী? সে দেখাচ্ছে তার বাবাকে। বলছে, “বাবা জানতই না আমি ক্রিকেট খেলি। বন্ধুর মুখ থেকে আমার ক্রিকেট প্রেম জানতে পেরে আমাকে ভর্তি করে দেন কোচিং ক্যাম্পে। তার পর থেকে বাবা সব সময় আমার পাশে আছেন।” |
এক নজরে পৃথ্বী |
নাম পৃথ্বী শ বয়স ১৪ বছর জন্ম বিরার স্কুল রিজভি স্প্রিংফিল্ড শ্রেণি নবম ক্রিকেটে হাতেখড়ি ৪ বছর বয়সে।
অধিনায়কত্ব মুম্বই অনূর্ধ্ব ১৬ দল, স্কুল দল।
বিদেশে প্রশিক্ষণ ২০১২-এ ম্যাঞ্চেস্টারে তিন মাসের বিশেষ শিবির। গ্লস্টারশায়ারের দ্বিতীয় টিমে খেলা।
পৃথ্বীর ৩৩০ বলে ৫৪৬ রানের ইনিংসে ৮৫টি বাউন্ডারি ও ৫টি ওভার বাউন্ডারি। ক্রিজে ছিল ৩৬৭ মিনিট। |
রেকর্ড |
১৩ জানুয়ারি ২০১০-এ আনন্দবাজারে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন। সবিস্তার... |
• হ্যারিস শিল্ডে ৫৪৬ রান যা সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে কোনও ভারতীয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর।
• যে কোনও ধরনের ক্রিকেটে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। পৃথ্বীর আগে শুধু হাজারিবাগে জন্মানো ব্রিটিশ আর্থার এডওয়ার্ড জিউন কলিন্স যিনি ১৩ বছর বয়সে স্কুলের ম্যাচে ৬২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন (১৮৯৯) এবং অস্ট্রেলীয় চার্লস ইয়েডি, যিনি তাসমানিয়ার ব্রেক-ও’-ডে ক্লাবের হয়ে ওয়েলিংটন ক্লাবের বিরুদ্ধে ৫৬৬ অপরাজিত থাকেন (১৯০২)। |
|
পুরনো খবর: মুম্বই ক্রিকেটের বিস্ময়কিশোর এখন এক বাঙালি |
|