|
|
|
|
১৪ বছরের ‘পৃথ্বী’ উৎক্ষেপণ ঘিরে স্বপ্ন নতুন সচিনের
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সুনীল গাওস্করের অবসরগ্রহণের বিষণ্ণতা গেড়ে বসার আগেই সাতাশির নভেম্বরে বিশাল সব স্কোর সমেত দেখা দিয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। দু’হাজার তেরোর ১৬ নভেম্বর-পরবর্তী ক্রিকেটমহলের সর্বগ্রাসী শূন্যতা ঢাকতেও কি পৃথ্বী শ-এর মাধ্যমে নতুন সচিনের উৎক্ষেপণ ঘটল? বুধবার হ্যারিস শিল্ডে পৃথ্বীর ৫৪৬ রানের পর প্রশ্নটা উঠেই পড়ল এ কথা মনে রেখেও যে, সচিন এক শতাব্দীতে হয়তো এক জনই আসে!
সাতাশি-র সঙ্গে ছাব্বিশ বছর পরের কাহিনির একটাই তফাত— ওখানে মরাঠির বিদায়জনিত দীর্ঘশ্বাসের স্তূপ অদৃশ্য করে দিয়েছিলেন এক মরাঠি। এখানে মরাঠির অবসরে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়া অবসাদের ওষুধ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এক বাঙালি। হ্যারিস শিল্ডে বুধবার ৫৪৬ রান করেছে চোদ্দো বছরের পৃথ্বী শ। যার ঠাকুরদা আশির দশকে ভাগ্যান্বেষণে মুম্বই চলে না এলে, পৃথ্বীকে কলকাতারই কোনও স্কুলে আবিষ্কার করা যেত। মুম্বইজাত এবং সেখানকার আবহাওয়ায় পালিত বলেই রানের খিদের মধ্যে স্টাইলিশ বাঙালিয়ানা কম। রান-হিংস্র মরাঠি মনন বেশি। ৫৪৬ করে ভারতীয় রেকর্ড করে ফেলার পরেও পৃথ্বী তার মেন্টরকে ফোনে বলেছে, “স্যর ছশো তো হলই না। আরও চারটে রান হলে সাড়ে পাঁচশোটা হয়ে যেত! মিস হয়ে গেল।”
পৃথ্বী অবশ্য সচিনের মতো সারদাশ্রম স্কুলে পড়ে না। অধুনা মুম্বইয়ের স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রমের নামডাক নেই। এখন মাঠ কাঁপায় রিজভি স্কুল। এই স্কুলের হয়েই খেলে আর্মান জাফর। ওয়াসিম জাফরের ভাইপো। গত বছর যে ৪৯৮ করে এই পর্যায়ের ক্রিকেটে রেকর্ড করেছিল। পৃথ্বী তাকে ভেঙে দিল। বড় রান অবশ্য তার কাছে নতুন কোনও ব্যাপার নয়। জুনিয়র পর্যায়ে চার হাজারের বেশি রান সে করে ফেলেছে, যা একই বয়সে সচিনেরও ছিল না। বুধবারই পৃথ্বীকে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব ষোলো অধিনায়ক বেছে নিয়ে ৫৪৬-এর হাতেগরম পুরস্কার দিল এমসিএ।
|
মারমুখী পৃথ্বী। বুধবার। ছবি: পিটিআই। |
পৃথ্বীকে তাঁর কোম্পানি পিএমজি-তে আগেই সই করিয়েছেন সুনীল গাওস্কর। বলতে গেলে তাঁর কোম্পানি থেকে দেওয়া মাসোহারাই পৃথ্বীদের আয়ের প্রধান উৎস। বছর তিনেক আগে মুম্বইয়ের এই নতুন বিস্ময়-বালককে দেখতে গিয়ে জানতে পারি পৃথ্বী থাকে বালক সচিনেরও সীমানার বাইরে। বিরার-এ। যেখান থেকে চার্চগেট আসতে লেগে যায় আড়াই ঘণ্টা। এই বিরারেই জন্ম বলিউড তারকা গোবিন্দর। স্টেশনের কাছে অস্বাস্থ্যকর এক ঘিঞ্জি এলাকায়। কিন্তু গোবিন্দকে তো আর ক্রিকেট কফিন কাঁধে নিয়ে আড়াই ঘণ্টা ট্রেন জার্নি করতে হয়নি। পৃথ্বীকে করতে হয়। তাই আপাতত তাকে বিরার থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে বান্দ্রায়। ঠিক এমআইজি ক্লাবের উল্টো দিকে পৃথ্বীর নতুন আস্তানা। যাতে প্র্যাকটিসে আসতে তার সময় না যায়।
অনুরাগী আর পৃষ্ঠপোষকদের যে ছোট বৃত্ত পৃথ্বীকে ঘিরে রাখে, তা ছোট বয়সের সচিন পাননি। পৃথ্বীর পাশে এক জন প্রবাদপ্রতিম মুম্বই ব্যাটসম্যান সব সময় থেকে উৎসাহ দেন। মিডিয়াকে বলেন, “ওকে খেলতে দিন প্লিজ। এখনই ঘাড়ের ওপর পড়বেন না।” তাঁর নাম? সচিন তেন্ডুলকর। পৃথ্বীকে একসঙ্গে নিয়ে তিনি একাধিক বার নেটে ঢুকেছেন। টিপস দিয়েছেন নিজের পরবর্তী বিস্ময় প্রজন্মকে। সচিনের মতো পৃথ্বীর গ্রিপও বটম হ্যান্ড বেশি। এমসিসি ম্যানুয়াল বিরোধী। গ্লস্টারশায়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে গত বছর যখন পৃথ্বী খেলছিল, সাহেব কোচকে এখান থেকে পৃষ্ঠপোষকেরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ওর গ্রিপটা বদলাতে যাবেন না। ওটা যতই সাবেকি কোচিং ম্যানুয়্যাল অনুযায়ী না হোক, ওটা নিয়েই খেলে একটা লোক তো বিশ্বক্রিকেটে খারাপ করেনি। গ্লস্টারশায়ার কর্তৃপক্ষ অনুরোধ মেনে নেন।
পৃথ্বীর শুভানুধ্যায়ীরা অবশ্য উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন মুম্বইয়ের রঞ্জি টিমে প্রথম পঁচিশের মধ্যেও পৃথ্বীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না দেখে। তাঁদের বক্তব্য, সচিনের সময়কার নির্বাচকেরা, নরেন তামানে কি মিলিন্দ রেগে যে দূরদৃষ্টি দেখিয়েছিলেন, তা এখনকার নির্বাচকদের নেই। থাকলে পৃথ্বীকে দলে রাখা হত।
বাংলা— বাংলা কি পারে না এক বাঙালি বালক-বিস্ময়কে তার রঞ্জি টিমে জায়গা দিতে? মুম্বই থেকে তারা তো রোহন গাওস্করকে এক কথায় নিয়ে এসেছিল। এই প্রশ্ন ৫৪৬ পরবর্তী কলকাতা ময়দানেও উঠতে বাধ্য! |
|
|
|
|
|