যেন মোটরবাইক আরোহীদের বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে মুম্বই রোড!
বুধবার বিকেলে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন মোটরবাইক আরোহী যুবকের। রানিহাটি থেকে বাড়ি ফিরছিলেন উলুবেড়িয়ার চেঙ্গাইলের মোফাজ্জেল মিদ্দে, আমিরুল মিদ্দে এবং শেখ নায়েব। পাঁচলার ধামসিয়ার কাছে দুর্ঘটনায় পড়ে তাঁরা প্রাণ হারান। লরি এবং তেলের ট্যাঙ্কার যখন একে অন্যকে ওভারটেক করছিল, সে সময়ে দু’টি গাড়ির মাঝে পড়ে পিষে যায় মোটরবাইকটি। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিন জন।
এটা অবশ্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। হাওড়া জেলায় মুম্বই রোডে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর মত ঘটনা ঘটে চলেছে প্রায় প্রতিদিন। বিশেষ করে ২০০৬ সালে মুম্বই রোড চার লেনে পরিণত হওয়ার পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মোটরবাইক আরোহী।
কেন ঘটছে এই দুর্ঘটনা?
এ বিষয়ে পুলিশ, জাতীয় সড়ক সংস্থা-সহ বিভিন্ন মহলের মত হল, হাওড়া এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ জেলা। এখানে কয়েক বছর ধরে মোটরবাইকের সংখ্যা বাড়ছে। জেলায় জরির কাজ বা ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। পেশাগত প্রয়োজনেই তাঁরা মোটরবাইক ব্যবহার বেশি করে করছেন যাতে যাতায়াতে সুবিধা হয়।
|
যাত্রীদের সচেতনতা দরকার। পরিবারের এক জনের হেলমেট পরা
পুরো পরিবারকে সুরক্ষিত করে না। ছবি: সুব্রত জানা। |
অন্য দিকে চার লেনে পরিণত হওয়ার পর থেকে মুম্বই রোডে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বর্তমানে মু্ম্বই রোডে প্রতিদিন ৬০ হাজার ইউনিট (একটি ছোট গাড়িকে এক ইউনিট ধরা হয়। সেই অনুপাতে একটি ভারি ট্রাককে ধরা হয় তিন ইউনিট) গাড়ি চলাচল করে বলে জাতীয় সড়ক সংস্থা সূত্রের খবর।
গাড়ির এই ভিড়ের মাঝে পড়ে গিয়েই কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়ছেন মোটরবাইক আরোহীরা। বড় গাড়িগুলি যখন বেপরোওয়া গতিতে একে অন্যকে টেক্কা দিতে থাকে। তারই বলি হন মোটরবাইক আরোহীরা। কিছু ক্ষেত্রে আবার দুর্ঘটনার শিকার হয় ছোট গাড়িগুলিও।
যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায় কী ভাবে? এ বিষয়ে পুলিশের সাফ বক্তব্য: মুম্বই রোডের মত জাতীয় সড়ককে চার লেনে সম্প্রসারিত করা হয়েছে গাড়ির গতি বাড়ানোর জন্যই। আপ ও ডাউন দু’দিকে দু’টি পৃথক লেন রয়েছে। নিয়ম মেনে একই অভিমুখে বেশি গতিতে যদি দু’টি গাড়ি একে অপরকে ওভারটেক করে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে তাকে বেপরোওয়া যান চলাচল বলা যাবে না। একই বক্তব্য জাতীয় সড়ক সংস্থারও। এই সংস্থার এক কর্তা জানান, মুম্বই রোড ছয় লেনে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার পরে তো গাড়ির গতি আরও বাড়বে।
সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ছোট গাড়ি এবং মোটরবাইকের জন্য তো পৃথক লেন করা প্রয়োজন ছিল। তা-ই বা করা হচ্ছে না কেন?
জাতীয় সড়ক সংস্থার পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ছয় লেনে সম্প্রসারিত হওয়ার কাজ চলছে। এই সম্প্রসারণ প্রকল্পেই ছোট গাড়ি এবং বাইকের জন্য পৃথক লেন তৈরি হবে।
যত দিন তা না হচ্ছে, এই মৃত্যুমিছিল কি চলতেই থাকবে?
এ বিষয়ে পুলিশ অবশ্য কিছুটা দায় চাপিয়েছে বাইক আরোহীদের উপরেই। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অনেক ক্ষেত্রে কিছু যুবক প্রচণ্ড গতিতে মোটরবাইক চালান। মুম্বই রোডের মত ব্যস্ত রাস্তায় মোটরবাইক চালাতে যে ধরনের নিয়ম মেনে চলা দরকার, তা তাঁরা মানেন না। শুধু তাই নয়, হেলমেটও পরেন না অনেক বাইক আরোহী।
এ সব তো পুলিশের দেখার কথা। তাদের কী ভূমিকা?
পুলিশের দাবি, মুম্বই রোডে নিয়মিত নজরদারি চলে। হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের জরিমানা করা হয়। কিন্তু অনেক মোটরবাইক আরোহী আবার দূর থেকে ট্রাফিক পুলিশকে দেখতে পেলে সাময়িক ভাবে হেলমেট পরে ফেলেন। দূরে গিয়ে তা খুলে নেন।
তবে বুধবারের দুর্ঘটনার পর থেকে আরও কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশ (গ্রামীণ)-এর অতিরিক্ত সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “শুধু হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদেরই নয়, বেপরোওয়া ভাবে যাঁরা মোটরবাইক চালাবেন তাঁদের প্রতিও পুলিশ কড়া মনোভাব নেবে।” |