সম্পাদকীয় ২...
সুপরামর্শ
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এবং ব্যক্তিমানুষ হিসাবে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু বিশিষ্টতা আছে, শত্রুমিত্র-নির্বিশেষে ইতিমধ্যে সকলেই তাহা খেয়াল করিয়াছেন। তাঁহার একটি বড় গুণ, যে কোনও বিষয়েই তিনি নিজের মতো করিয়া ভাবিতে চাহেন। দৃষ্টান্ত: মহাকরণের সংস্কার। কাজটি জরুরি ছিল, বহু-প্রতীক্ষিত ও বহু-আলোচিতও। কিন্তু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যে দুঃসাহসে এই বিপুল যজ্ঞে ঝাঁপাইয়া পড়িলেন, তাহা রাজনীতিকদের মধ্যে সতত সুলভ নহে। অবশ্য তাঁহার দুঃসাহস বহু ক্ষেত্রেই নিরুপদ্রব বা সুখকর নহে। কলিকাতাসুদ্ধ সাদা-নীলে রাঙাইয়া দেওয়া বা ট্রাফিক সিগন্যালে দিবারাত্র রবীন্দ্রসংগীত বাজাইবার সিদ্ধান্ত চমকপ্রদ হইলেও তাহার উদ্দেশ্যবিধেয় বোধগম্য নয়। কিন্তু এই দুঃসাহসী নিজস্বতার মধ্য হইতে মাঝেমধ্যে কিছু নূতন সম্ভাবনা সৃষ্ট হয়, তাহাও অস্বীকার করা চলে না। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সকল বিধায়কদের ডাকিয়া বলিলেন, বিধানসভা ভবনের গ্রন্থাগারে গিয়া প্রত্যেককে নিয়মিত পড়াশোনা করিতে। যে সব বিষয় লইয়া বিধানসভায় আলোচনা তর্কাতর্কি হয়, তাহার আরও গভীর ও প্রসারিত জ্ঞান আহরণের লক্ষ্যেই তাঁহার এই পরামর্শ। কিন্তু আরও একটি প্রচ্ছন্ন লক্ষ্য রহিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রীর ধারণা, বিধায়করা যদি দেশের সংসদীয় ব্যবস্থা, বিধানসভার মাহাত্ম্য ইত্যাদির ইতিহাস পড়েন, তাঁহাদের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটিবে। বিধানসভায় আসিবার সুযোগের গুরুত্ব তাঁহারা বুঝিবেন। অশালীন আচরণ, ঝগড়াঝাঁটি কমাইবেন। সব মিলাইয়া আইনসভার চরিত্র একটু সংস্কৃত হইয়া উঠিবে।
তাঁহার ধারণা মূল্যবান। পড়াশোনা একটি সাধু অভ্যাস: নূতন কথা নহে। তবে কি না, রাজনীতিতেও যে পড়াশোনার প্রয়োজন, সেই সুবুদ্ধির কথাটি কোনও রাজনীতিকের মুখ হইতে শোনা নূতন ঘটনা বটে। গণতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশের সহিত, রাজনীতির তৃণমূলীকরণের সহিত একটি ধারণা প্রচলিত হইয়াছে, রাস্তায় নামিয়া যে যত ভিড় জমাইতে পারেন, তাঁহারাই সার্থক রাজনীতিক। বিধানসভার চত্বরেও তাই রাস্তার রাজনীতির প্রসার হয়। বিষয়জ্ঞান তুচ্ছ করিয়া চড়া সুরের স্লোগান প্রাধান্য পায়। ভাষণে শস্তা হাততালির মশলা থাকিলেই চলে, সারবস্তু লাগে না। এই সমবেত জ্ঞানবিমুখতায় রাজনীতি হইতে ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি এবং সার্বিক প্রেক্ষিতবোধ বিদায় লইতে বসিয়াছে। অথচ এই রাজনীতিকরাই আবার নেহরু, অম্বেডকর কিংবা শ্যামাপ্রসাদের উত্তরাধিকারী বলিয়া আত্মজাহির করেন, ভুলিয়া যান যে সেই বরেণ্য রাজনীতিকরা লোকসভায় কিংবা বিধানসভায় না থাকিলে পাণ্ডিত্য-জগতেই পদচারণা করিতেন।
পণ্ডিত হওয়া নিশ্চয়ই আম-রাজনীতিকের পক্ষে কঠিন। তবে তথ্য-অভিজ্ঞ হওয়ার কাজটি দুঃসাধ্য নয়। তাহা জনপ্রতিনিধিত্বের অন্যতম দায়ও বটে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন এক বার বলিয়াছিলেন, আমাদের ভাবিয়া দেখা উচিত, ভারতের সংবিধানই কি ভারতীয়দের উপযোগী নয়, না কি ভারতীয়রাই ভারতের সংবিধানের উপযোগী নয়। কেবল সংবিধান-মতেই নিজেদের চালনা করিতে হইলেও রাজনীতিকদের জানাবোঝার পরিসরটি বাড়ানো দরকার। তাহাতে আস্ফালন-প্রবণতাও কমিবার সম্ভাবনা, ‘উন্নততর’ বিতর্ক-বক্তব্য-অবস্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রও অধিক অর্থবহ হওয়া সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ প্রশংসার্হ। ‘পাল্টাইতে হইবে’, ‘মানুষের কথা ভাবিতে হইবে’ ইত্যাদি চর্বিতচর্বণের বদলে একটি স্পষ্টাক্ষর পরামর্শ দিয়াছেন তিনি। সুপরামর্শ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.