|
|
|
|
বদলের রাজ্যে টিকে থাকার লড়াই ১৩ নম্বরে
কাজল গুপ্ত |
পরিবর্তনের হাওয়াতেও ২০১০-এর পুর-নির্বাচনে হাতে গোনা কিছু ভোটে কোনও মতে আসন টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল সিপিএম। কিন্তু জয়ী হওয়ার পরে কাউন্সিলর মারা যান। সেই ওয়ার্ডের দায়িত্ব নেন পুর-কর্তৃপক্ষ। আড়াই বছর বাদে এ বার সেই ওয়ার্ডে উপনির্বাচন হতে চলেছে। এক দিকে সিপিএমের আসন ধরে রাখার লড়াই, কিংবা কংগ্রেস ও বিজেপির নতুন খাতা খোলার চেষ্টা এবং শাসক দলের আসন দখলের ‘প্রেস্টিজ ফাইট।’ এটাই সল্টলেকের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের বিশেষত্ব।
গুরুত্ব যা-ই থাক না কেন, প্রশ্ন উঠেছে কাউন্সিলর মারা যাওয়ার পরে আড়াই বছর নির্বাচন হল না কেন? একযোগে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির অভিযোগ, সরকারের নির্বাচন করার কোনও সদিচ্ছাই ছিল না। বারবার প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও কাজ হয়নি। এর জেরে স্বাভাবিক পুর-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, নির্বাচন করানোর দায় ও দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ বিষয়ে তাঁদের করণীয় সেরকম কিছুই নেই।
আড়াই বছরে পুর-পরিষেবা প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, বেহাল রাস্তা, আলোর অভাব, পানীয় জলের সঙ্কট, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ এলাকায় গেলেই বোঝা যাচ্ছে। পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলে এমন পরিস্থিতি কেন হল? শাসক দলের অবশ্য দাবি, গত দু’বছরে ওই
ওয়ার্ডে ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে পার্ক, শিশু উদ্যান-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজে। তবে নির্বাচিত কাউন্সিলর না থাকায় কিছু সমস্যা হলেও সল্টলেক পুর-কর্তৃপক্ষ ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব হাতে নিয়ে
কাজ করে চলেছেন বলে দাবি
শাসক দলের।
২০১০-এর পুর-নির্বাচনে বিধাননগর পুরসভার ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৬টি, সিপিএম ৯টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের গীতা বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। ফলে সিপিএমের আসন সংখ্যা হয় ৮টি। এফডি, এফসি, এফই ও এফএফ এই চারটি ব্লক নিয়ে এই ওয়ার্ড।
এ বারের নির্বাচন মূলত চতুর্মুখী। তৃণমূলের প্রার্থী বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, নতুন মুখ এনেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের প্রার্থী আইনজীবী সৌম্যজিত্ রাহা এবং কংগ্রেসের প্রমিতা সাহা। বিজেপি অবশ্য অভিজ্ঞতাকেই গুরুত্ব দিয়েছে। তাঁদের প্রার্থী প্রাক্তন বায়ুসেনা অফিসার গ্রুপ ক্যাপ্টেন দেবাশিস পালিত।
এলাকায় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, প্রয়াত প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী, সিপিএম নেতা রবীন দেব, বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহ, মন্ত্রী রচপাল সিংহ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির বসবাস। ফলে ওই ওয়ার্ড এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনের ঝড়েও এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল সিপিএম। এ বারের নির্বাচন তাই শাসক দলের কাছে কার্যত ‘প্রেস্টিজ ফাইট।’
নির্বাচনী প্রচারেও সেই লড়াই দেখা গিয়েছে। এক দিকে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অন্য দিকে অরুণাভ ঘোষ, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতো রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব ওই ওয়ার্ডে সমাবেশ করেছেন। ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাণীব্রতবাবু বলেন, “সমগ্র রাজ্য জুড়ে যে উন্নয়ন চলছে, এই ওয়ার্ডেও উন্নয়নের সেই ধারা বজায় রাখা হবে। কিন্তু বিরোধীদের এমনই অবস্থা যে, এলাকা থেকে কোনও প্রার্থী খুঁজে পায়নি।
ওঁরা কী করে ওয়ার্ডের পরিচালনা করবেন!” পাল্টা দাবিতে সিপিএম প্রার্থী সৌম্যজিত্বাবুর দাবি, “পুর-নির্বাচনের আইনে এমন কোনও বিধান নেই যে, ওয়ার্ডের মধ্যেই থেকেই কাউকে প্রার্থী করতে হবে। তা ছাড়া, সল্টলেকে শাসক দলের পাঁচ জন কাউন্সিলর অন্য ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত। তাঁদের প্রার্থীর মুখে এমন অপপ্রচার মানায় না।”
|
|
|
|
|
|