|
|
|
|
|
|
পণ্য বাজার
|
রুপোয় মুনাফা
সোনার সঙ্গে একই বাক্যে এর নাম উঠলেও, লগ্নির জগতে রুপো যেন
কিছুটা দুয়োরানি। কিন্তু ঠিক মতো লগ্নি করতে পারলে তা এনে দিতে পারে
বড় মুনাফা। কী ভাবে? আসুন সেটাই দেখি। লিখছেন
অরিন্দম সাহা |
|
লগ্নির গন্তব্য অথবা গয়না তৈরির জন্য সোনা নিয়ে আমরা যত কথা বলি, রুপো নিয়ে তুলনায় তত নয়। বরং এই ধাতুটির প্রতি আমাদের ব্যবহার যেন কিছুটা দুয়োরানির মতোই। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই চেহারাটা অল্প হলেও পাল্টাচ্ছে। বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে খুব ধীরে হলেও কদর বাড়ছে রুপোর।
লগ্নি করব কেন?
গয়না বা বিভিন্ন স্মারক ছাড়াও, শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় বলে রুপোর দামে ওঠা-পড়া খুব বেশি। যেমন দেশে কয়েক বছর আগেও প্রতি কেজি রুপো ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। ফলে স্বভাবতই এতে ঠিক মতো লগ্নি করতে পারলে বড় মুনাফার সুযোগ রয়েছে।
একই সঙ্গে দামের বেশি ওঠা-পড়ার কারণে রয়েছে বাড়তি ঝুঁকিও। ফলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা ঝুঁকি নিতে আগ্রহী, তাঁদের কাছে রুপো লগ্নির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, যে জিনিসের দামে যত বাড়া-কমা দেখা যায়, লগ্নিকারীদের কাছে সেই জিনিসের চাহিদা তত বেশি। ফলে অনেক নতুন লগ্নিকারীই এখন রুপো কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
বিনিয়োগের রকমফের
• লগ্নিকারী চাইলে রুপোর কয়েন, বার, বিভিন্ন ধরনের ছোট জিনিস কিনে রাখতে পারেন।
• চাইলে কিনতে পারেন গয়নাও।
• তবে মনে রাখতে হবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুপো কালো হয়ে যায়। ফলে গয়না কিনেও পরবর্তী ক্ষেত্রে তা বিক্রি করলে ততটা দাম না-ও পাওয়া যেতে পারে।
• এমসিএক্স এবং এনসিডিইএক্স-এর মতো এক্সচেঞ্জগুলিতে পণ্য বাজারে রুপোয় লগ্নির রাস্তাও খোলা রয়েছে।
• দেশে সোনার মতো রুপোয় কিন্তু এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) ব্যবস্থা চালু হয়নি। ফলে লগ্নিকারীদের সামনে কাগুজে রুপো কেনার সুযোগ এখনও পর্যন্ত নেই। |
|
পণ্য বাজারে রুপো
• ১ কেজি, ৫ কেজি, ৩০ কেজি ইত্যাদি বিভিন্ন ওজনে রুপো বিক্রি করা হয় এখানে। তবে ৩০ কেজির রুপোই সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়।
• চুক্তি করার সময়েই দামের প্রায় ১০% মার্জিন হিসাবে দিতে হয়। অর্থাৎ ৫২,৫০০ টাকা দরে যদি ৩০ কেজি রুপো কিনতে চুক্তি করেন, তা হলে মোট চুক্তি-মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারীকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা প্রথমেই দিতে হবে।
• কমোডিটি ট্রেডিং-এর প্রত্যেকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করার জন্য একটি ন্যূনতম সংখ্যাকে বেছে নেওয়া হয়। যা সেই নির্দিষ্ট পণ্যের ‘টিক সাইজ’। রুপোর টিক সাইজ ১ টাকা। মূলত লাভ-ক্ষতি হিসেব করার সময়ে কাজে আসে ‘টিক সাইজ’। নিয়ম অনুযায়ী, দাম সব সময়ে টিক সাইজের গুণিতকে বাড়ে বা কমে। কিন্তু তা ভগ্নাংশ হয় না। রুপোর ক্ষেত্রে তা ১ টাকার কম হবে না। ফলে সেই অনুসারে লগ্নিকারীর লাভ-ক্ষতি হিসাব হয়।
• টিক সাইজ ১ টাকা হওয়ার কারণে রুপোর দাম ১ টাকা বাড়লে বা কমলে লগ্নিকারীর ৩০ টাকা লাভ বা ক্ষতি হতে পারে। এ বার এক দিনে রুপোর দাম যত বাড়বে বা কমবে, বিনিয়োগকারীর লাভ বা লোকসানের অঙ্ক ততই বেশি হবে।
• ৩০ কেজি রুপোর ক্ষেত্রে সাধারণত চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যদি লগ্নিকারী বাজার থেকে বেরিয়ে না- যান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে বাধ্যতামূলক ভাবে ধাতুটি হাতে নিতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমদাবাদ থেকে ওই রুপো ডেলিভারি দেওয়া হয়।
মাথায় রাখুন
• রুপোর দামে কিন্তু প্রচুর অস্থিরতা দেখা যায়। এখন দেশে প্রতি কেজি রুপোর দর ৫০ হাজার টাকার আশেপাশে।
• ইতিহাসে কৃত্রিম ভাবে ধাতুটির দাম বাড়ানোর নজির রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে আমেরিকায় হান্ট ভাইয়েরা ৭ বছর ধরে বাজার থেকে রুপো কিনতে থাকায় এক সময়ে ধাতুটির দাম ট্রয় আউন্সে রেকর্ড ৫০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। যা ধরা পড়ার পর রুপোর দাম ৫০% পর্যন্ত পড়ে যায়।
সফল লগ্নির শর্ত
• ভারতের বাজার সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কিন্তু বিদেশের অনেক বাজার ২৪ ঘণ্টাই খোলা। সে ক্ষেত্রে পর দিন দেশে বাজার খোলার সময়ে ধাতুটির দাম খুব বেড়ে বা কমে যাওয়া বিচিত্র নয়। তাই বিশ্বের অন্যান্য বাজারে ধাতুটির দরের দিকে নজর রাখুন।
• ভারতে বেশির ভাগ রুপোই আমদানি করা হয়। ফলে বিদেশের দরের উপর পণ্যটির দাম অনেকটাই নির্ভর করে। নজরে রাখুন তা-ও
• মনে রাখবেন বিদেশে রুপোর দাম ১০ সেন্ট বাড়লে বা কমলে দেশে দর প্রায় ২০০ টাকা বাড়ে বা কমে।
• আবার ডলারের দাম ১০ পয়সা বাড়লে বা কমলে, রুপোর দর প্রায় ৭০ টাকা বাড়ে বা কমে। |
লেখক পণ্য বাজার বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|