|
|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
মাথায় ঝুঁকি, পকেটে লাভ
সেক্টর ফান্ড বলে, ঝুঁকিতে মেওয়া ফলে। আর আমি বলব, ওজন বুঝে চলুন।
কারণ লাভ হলে ভাল। কিন্তু না-হলে ক্ষতিটাও কিন্তু সইতে হবে। লিখছেন
নীলাঞ্জন দে |
|
শেয়ার বাজার নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের (ইক্যুইটি ফান্ড) বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। বাজার চাঙ্গা থাকায় ডাইভার্সি-ফায়েড ফান্ডের (যাদের তহবিল বিভিন্ন শিল্পের ছোট-বড় নানা সংস্থার শেয়ার কেনে) মূল্য তো লাফিয়ে বাড়ছেই। সেই সঙ্গে রিটার্নের ভিত্তিতে দ্রুত শিরোনামে উঠে আসছে আরও এক ধরনের ফান্ড। যাদের তহবিল দিয়ে নির্দিষ্ট একটি শিল্পের (সেক্টর) অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার কেনা হয়। সেই কারণে যাদের সেক্টর ফান্ড বলে। এই ফান্ডে লগ্নির এটাই সব থেকে উপযুক্ত সময়। তাই আজ আলোচনার বিষয়বস্তু এরাই।
কী রকম?
ধরুন, আপনি এমন একটি সেক্টর ফান্ড পছন্দ করলেন, যেটি শুধু প্রযুক্তি (টেকনোলজি) ক্ষেত্রেই লগ্নি করে। মানে, ফান্ডের তহবিল দিয়ে শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারই কেনা হবে। যেই আপনি ওই টেকনোলজি ফান্ড কিনলেন, সেই মুহূর্তে আপনার লগ্নি-ভাগ্য জুড়ে গেল দেশের প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রের ভাল-মন্দের ভার বইবে প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। আর সেই ভাল-মন্দের প্রতিফলন হবে ফান্ডে। তাদের শেয়ার দর যত উঠবে, তত ফান্ডের মূল্য বাড়বে। আর দর যত পড়বে, তত মূল্য কমবে ফান্ডের এবং লোকসানের মুখ দেখবেন আপনি।
লাভ কেমন?
পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সেক্টর ফান্ড আপনাকে রাজা করে দিতে পারে। কারণ এখানে উঁচু রিটার্নের সুযোগ রয়েছে। সমস্ত তহবিল যেহেতু নির্দিষ্ট শিল্পেই খাটানো হয়, তাই সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নতি হলে বা ব্যবসা বাড়লে অন্য কিছু ভাবার দরকার পড়ে না। লগ্নি করা সব সংস্থার শেয়ার দরই কম-বেশি ওঠে। ফলে বাড়ে ফান্ডের তহবিল। সংস্থা বাছাই ভাল হলে, ফান্ডের মূল্য ঈর্ষণীয় হতে পারে। |
|
এখন রিটার্ন
(গত এক বছরের এবং ৬ নভেম্বরের ন্যাভের ভিত্তিতে) |
টেকনোলজি ফান্ড |
৪০.৬% |
ফার্মা ফান্ড |
১৯.৭% |
এফএমসিজি ফান্ড |
১১.৭% |
|
সাবধান!
একই সঙ্গে অবশ্য ‘ঘোর বাস্তব’ এটাই যে, ফান্ড দুনিয়ার অন্যতম ঝুঁকির জায়গা এই সেক্টর ফান্ড। এর রিটার্ন যেমন এক দিকে ভরিয়ে দিতে পারে আপনার ঝুলি, তেমনই আবার সবসুদ্ধ ডোবাতেও পারে। তবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার ঝুঁকি বইবার উপযুক্ত কল্জের জোর ও রিটার্নের খিদের উপর। আমি শুধু আশঙ্কার জায়গাগুলো দেখিয়ে দেব, যাতে পরে হাত কামড়াতে না-হয় আপনাকে।
• এখানে একটি মাত্র শিল্পের লোকসান পুরো ফান্ডকে ডোবাতে পারে। ফান্ড ম্যানেজার যে-শিল্পকে বাছলেন (ধরুন এফএমসিজি বা ভোগ্যপণ্য ক্ষেত্র), কোনও কারণে তা খারাপ করতে শুরু করলে, ওই শিল্পের সব সংস্থার শেয়ার দরই কম-বেশি পড়ার সম্ভাবনা। ফলে গোটা তহবিলই লোকসানের মুখে পড়বে। তা এড়িয়ে যাওয়ারও কোনও পথ থাকবে না। এটা ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে হয় না। সেখানে তহবিল বিভিন্ন ধরনের শিল্পের শেয়ারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে, কোনও একটির শেয়ার দর পড়লেও, আর একটির মুনাফা দিয়ে লোকসান পুষিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যেমন, ১৯৯৭-২০০০ সাল নাগাদ ডট-কম বুম বা ডট-কম বাব্ল-এর কথাই ধরুন। সে সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির খুব বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় প্রচুর মানুষ আইটি ফান্ডে টাকা রাখেন। কিন্তু পরে ওই সব সংস্থার শেয়ার দর যখন হুড়মুড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন বিপুল লোকসান হয়েছিল তাঁদের।
• সেক্টর ফান্ড পরিচালনা করা ও তার মূল্য বাড়ানো ফান্ড ম্যানেজারদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তহবিলের পুরো টাকা লগ্নি করতে হয় মাত্র একটি শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে। ফলে ফান্ডের মূল্য বাড়াতে বিভিন্ন রকম কৌশল নেওয়ার সুযোগ এখানে অনেকটাই কম।
• বৈচিত্রের অভাব বড় সমস্যা তৈরি করে। ভারতের ফান্ড বাজারে সেক্টর ফান্ড বললেই উঠে আসে হাতে গোনা কয়েকটা শিল্পের নাম। মূলত প্রযুক্তি, ওষুধ ও ভোগ্যপণ্য। হালে অবশ্য কিছু সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (পরিকাঠামো), ক্যাপিটাল গুড্স (মূলধনী পণ্য) ও সার্ভিস (পরিষেবা) সেক্টর ফান্ড চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে।
ভেবে এগোন
সেক্টর ফান্ড দুর্বল মনের লগ্নিকারীদের জন্য নয়। তাই তা কেনার আগে কতকগুলি বিষয় মাথায় রেখেই এগোন।
• প্রথমে নিজের ঝুঁকি বইবার ক্ষমতা যাচাই করুন।
• ভেবে দেখুন লোকসানে আপনি কতটা ভেঙে পড়তে পারেন। ঘুরেই বা দাঁড়াতে পারেন কত তাড়াতাড়ি।
• যদি ১০০% নিশ্চিত থাকেন যে, কোনও শিল্প ক্ষেত্র ভাল ফল করছে তা হলেই এগোন। না-হলে একাধিক শিল্পে তহবিল খাটায় এমন ফান্ডেই ভরসা রাখুন। সেখানে বড়জোর কোনও একটি ক্ষেত্রে একটু বেশি লগ্নির ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে।
• তবে শেয়ার বাজার যদি এখনকার মতো চাঙ্গা থাকে, তা হলে কিন্তু পকেট যথেষ্ট ভরে নিয়েই আপনার বাজার থেকে বেরোনোর সম্ভাবনা। |
লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|