|
|
|
|
|
|
 |
স্বাস্থ্যবিমা |
করার আগে শর্ত জানুন
স্বাস্থ্যবিমা কিনেছেন, অথচ শর্ত জানা না-থাকায় প্রয়োজনের সময়ে
তা কাজেই এল না। এমন ঘটনা আটকাবেন কী করে? লিখছেন
সঞ্জয় দত্ত |
|
এটা ঠিক যে, আগের থেকে এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন মানুষ। রোজগার যা-ই হোক, প্রথমেই অন্তত একটি স্বাস্থ্যবিমা করে রাখা যে পরিবারের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি, তা আজকাল অনুভব করছেন অনেকেই। কিন্তু বিমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সত্যিকারের একটি ভাল বিমা কিনতে পারার মধ্যে কয়েক যোজন ফারাক। কেন?
কারণ, বাজারে হাজার-একটা প্রকল্পের মধ্য থেকে বেছে নিতে হবে এমন একটিকে, যেটি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল। আর আপনি সত্যিই কতটা ভাল স্বাস্থ্যবিমা কিনতে পারলেন, তা বোঝা যাবে ক্লেম মানে ক্ষতিপূরণ দাবির সময়ে। কাজেই বিমা কেনার জন্য উদ্যোগী হওয়া মাত্রই ক্লেম করার পরিস্থিতিগুলো ভেবে নিতে হবে। যেটা করতে গেলে একই রকম সচেতন হতে হবে পলিসির নানা শর্ত সম্পর্কে। আগে শর্তগুলি ভাল করে না জেনে-বুঝে কোনও বিমা পলিসি করে ফেললে আপনার স্বাস্থ্যবিমা করার উদ্দেশ্যটাই মাটি হয়ে যেতে পারে।
ঠেকে শিখলে বিপদ
কোনও কিছু ঠেকে শিখলে নাকি সেটা মনের অন্দরমহলে এমন গেঁথে যায় যে, তাতে দ্বিতীয় বার আর ভুল হয় না। আমরা সকলেই এই নীতিকথার সরাসরি প্রমাণ অল্পবিস্তর পেয়েছি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ঠেকে শেখা ভয়ানক বিপদের। তেমনই একটি হল স্বাস্থ্যবিমা। ধরুন, আপনি স্বাস্থ্যবিমা করলেন। বছরের পর বছর মোটা টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে গেলেন। এ বার কোনও এক সময়ে বিমার টাকা ক্লেম করার মুহূর্ত আসতেই পারে। কিন্তু সেই মুহূর্তে যদি বিমা সংস্থা জানায় যে, পলিসির শর্ত না-মানায় ক্লেম খারিজ করা হয়েছে—আপনি তো তা হলে অথৈ জলে পড়বেন। অথচ শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার মতো এমন ঘটনাও কিন্তু ঘটে। অনেকেই এর শিকার হয়ে থাকেন। আপনি যাতে না- হন এবং প্রথম থেকেই সাবধান থেকে বিমার সমস্ত সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন, সে জন্যই শর্ত বুঝে নিয়ে এগোনোর প্রসঙ্গ এত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন, নজর রাখি সেই সব শর্তে।
কখন ক্লেম হয় না
এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও স্বাস্থ্যবিমা কেনার পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ না-পেরোলে ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায় না। এই মেয়াদ বিমা সংস্থাই বেঁধে দেয়। তবে সংস্থা বিশেষে তা আলাদা হতে পারে। ওয়েটিং পিরিয়ডকে অনেক সময়ে কুলিং পিরিয়ডও বলা হয়। পলিসি কেনার পর প্রাথমিক ভাবে সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে গ্রাহকের চিকিৎসা খরচ বাবদ কোনও ক্লেম মেটায় না বিমা সংস্থাগুলি। দুর্ঘটনাজনিত বা আপৎকালীন ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম হতে পারে অনেক সময়ে। আগেই বলেছি, এই কুলিং বা ওয়েটিং পিরিয়ড এক-একটি সংস্থার ক্ষেত্রে এক-এক রকম হতে পারে। |
 |
পাশাপাশি আবার একই সংস্থার বিভিন্ন ধরনের পলিসির জন্য আলাদা আলাদা ওয়েটিং পিরিয়ডও হতে পারে। যেমন অনেকেই বলে দেয়, কিছু নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে ওয়েটিং পিরিয়ড এক বা দু’বছর। অর্থাৎ বিমা প্রকল্প করার পর এক বা দু’বছর না কাটলে ওই সব রোগের চিকিৎসা-খরচ বাবদ টাকা দাবি করতে পারবেন না আপনি। আর করলেও তা দেবে না সংস্থা। আবার স্বাস্থ্যবিমা শুরুর আগে থেকেই আপনার যদি কোনও রোগ থেকে থাকে, সেগুলির জন্য তা হলে আলাদা ওয়েটিং পিরিয়ড নির্দিষ্ট করা থাকতে পারে।
আগে থেকেই কোনও অসুস্থতা থাকলে
নতুন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প করার আগে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে জানাতে হয়, আপনার কোনও পুরনো রোগ বা অসুস্থতা আছে কি না। কোনও অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও যদি সংস্থা আপনার বিমা করতে রাজি হয়, তা হলে জানবেনসেখানে শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট ওয়েটিং পিরিয়ডও অবশ্যই আছে। প্রি-এগজিস্টিং ডিজিজ বা বিমা করার আগেই থাকা রোগ সাধারণত পলিসির প্রথম চার বছরের মধ্যে বিমার সুবিধা পায় না। অবশ্য সংস্থা বিশেষে এই মেয়াদ ভিন্ন হতে পারে। তাই আপনার ক্ষেত্রে এ রকম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আগে ওই সংক্রান্ত শর্তগুলির খুঁটিনাটি বুঝে নিন। না হলে ক্লেম আটকে যেতে পারে।
কোন রোগে স্বাস্থ্যবিমা হয় না
এমন অনেক রোগ আছে, যেগুলি স্বাস্থ্যবিমার আওতায় পড়ে না। এগুলি এক্সক্লুডেড বা বিমার সুবিধা থেকে বাদ। যেমন যুদ্ধজনিত আঘাত, কসমেটিক সার্জারি, গর্ভপাত, প্রসূতির চিকিৎসা বা রোগনির্ণয় বাবদ খরচ সাধারণত কোনও স্বাস্থ্যবিমা দেয় না। বিষয়টি না-জেনে ক্লেম করলে হতাশ হতে পারেন।
খরচের ঊর্ধ্বসীমা
চিকিৎসা করাতে গেলে নানা রকম খাতেই খরচ হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যবিমার শর্ত হিসাবে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও খাতে খরচের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হতে পারে। এটা সাধারণত হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের ঘরভাড়া, অস্ত্রোপচার ইত্যাদির ক্ষেত্রে করা হয়। যেমন ধরুন, কোনও বিমা সংস্থা একটি চোখের ছানি কাটাতে ২০ হাজার টাকা সাব-লিমিটের শর্ত সংবলিত পলিসি এনেছে। এর মানে হল, ছানি কাটাতে আপনার মোট খরচের অঙ্ক ২০ হাজার পেরিয়ে যেতেই পারে। কিন্তু বিমা সংস্থা আপনাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার এক পয়সাও বেশি দেবে না। আবার একই রকম ভাবে হতে পারে আপনার মোট বিমামূল্য (সাম অ্যাশিওর্ড) ১০ লক্ষ টাকা এবং চিকিৎসাকেন্দ্রের ঘরভাড়া বাবদ দিনে ওই বিমামূল্যের ২ শতাংশ ধার্য করেছে সংস্থা। তা হলে বিমা সংস্থা আপনাকে দেবে ১০ লক্ষ টাকার ২ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা। আপনি যদি এমন কোনও হাসপাতালে ভর্তি হন, যেখানে ঘরভাড়া এর চেয়ে বেশি, তা হলে বাড়তি খরচ আপনাকেই মেটাতে হবে। বিমা সংস্থা তা দেবে না।
খরচে ভাগ-বাটোয়ারা
এই শর্তটি সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন থাকবেন। এর মানে হল, চিকিৎসা বাবদ মোট খরচ দু’ভাগে ভাগ হবে আপনার ও বিমা সংস্থার মধ্যে। তবে ভাগ যে সমান সমান হতে হবে, তার কোনও মানে নেই। আসলে আপনি হয়তো স্বাস্থ্যবিমা করে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছেন যে, কোনও খরচই আপনাকে বইতে হবে না। অথচ শর্তে বা পলিসির নিয়মে যে লেখা আছে ‘কো-পে’ বা খরচ ভাগের শর্তসেটা আপনি খেয়াল করলেন না। ফলে পরে চাপের মুখে পড়বেন। কারণ এই শর্তে স্পষ্ট করে বলা থাকে, হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়ার পর মোট যে খরচ হয়, তার একটা অংশ বিমাকারী হিসেবে আপনাকে বইতে হবে। এই অনুপাত সাধারণত ১০ থেকে ২৫ শতাংশ হতে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে যদি ধরি, পলিসির কো-পে ২৫ শতাংশ এবং আপনার ক্লেম প্রায় ১০,০০০ টাকা, তা হলে আপনার ভাগে পড়বে ২,৫০০ টাকা। মানে সেটা আপনাকে দিতে হবে। আর বিমা সংস্থা দেবে ৭,৫০০ টাকা।
আপনাকে আগে যা দিতে হবে
বেশির ভাগ স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে এই শর্তটি থাকে। ডিডাক্টেবেল্স হল মোট খরচের সেই অংশ, যা আপনাকে দিতে হবে বিমা সংস্থা বাকিটা মেটানোর আগেই। সাধারণত এই শর্তটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা গ্রাহককেই দেয় বিমা সংস্থাগুলি। অর্থাৎ গ্রাহকরা চাইলে এই শর্তটি মানতে পারেন, অথবা না-ও মানতে পারেন। যদি মানেন, তা হলে কত টাকা নিজের পকেট থেকে গুনবেন, সেটাও ঠিক করতে পারেন গ্রাহক নিজেই। আর বিমাকারী এই শর্তটি মেনে নিয়ে বিমা করতে রাজি হলে পরিবর্তে প্রিমিয়ামের অঙ্ক কিছুটা কমিয়ে দেয় বিমা সংস্থা। |
লেখক আইসিআইসিআই লম্বার্ড জেনারেল ইনশিওরেন্স-এর আন্ডার রাইটিং অ্যান্ড ক্লেমস-এর প্রধান
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
 |
|
|