অসহায় গ্রাহক
লাগাতার চুরিতে জেরবার টেলি-পরিষেবা
খনও চুরি যাচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার, ফিডার বা পাওয়ার কেবল। কখনও বা চুরি হয়ে যাচ্ছে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি, জেনারেটর ইত্যাদি। ধারাবাহিকভাবে সরকারি টেলি-পরিষেবা সংস্থা বিএসএনএলের বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ বা বিটিএসগুলিতে চুরির ঘটনায় পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মত সংশ্লিষ্ট সংস্থার জেলা আধিকারিকদের। গত সাড়ে চার মাসে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় থাকা এক্সচেঞ্জগুলিতে ১০ বারের বেশি চুরির ঘটনায় লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তেমনি দিনের পর দিন পরিষেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সব কটি ঘটনার পর সংস্থার পক্ষে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও একটি চুরির ঘটনারও কিনারা হয়নি বলে দাবি করেছেন জেলা বিএসএনএলের জেনারেল ম্যানেজার সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষয়টি জেলাপ্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। কিন্তু চুরি আটকাতে না পারলে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সত্যিই খুব সমস্যার।”
বিএসএনএল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সরকারি টেলি-পরিষেবা সংস্থা বিএসএনএলের বিরুদ্ধে পরিষেবা নিয়ে এই জেলার গ্রাহকদের নানান অভিযোগ লেগেই থাকে। প্রায়শই জেলার বিভিন্নপ্রন্তের টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলি হঠাত্‌ হঠাত্‌ কোনও কারণে বসে (খারাপ হয়ে) গিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা তৈরি করে থাকে। সেটা ল্যান্ডফোন, মোবাইল পরিষেবা বা ইন্টারনেট পরিষবা যাই হোক না কেন। মোবাইল গ্রাহকদের ক্ষেত্রে অন্য বেসরকারি টেলিপরিষবা সংস্থার আওতায় নিজেদের নিয়ে যাওয়াটা সম্ভব। কিন্তু সরকারি প্রতিটি অফিস, থানা, হাসপাতাল, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক ও পঞ্চায়েতগুলি যেহেতু বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে থাকে, তাই পরিষেবা বিঘ্নিত হলে তার প্রভাব সাধারণ মানুষকেই ভোগ করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে বেসরকারি টেলি-পরিষেবা সংস্থাগুলি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরিষেবা দিতে সক্ষম সেখানে সরকারি টেলি-পরিষেবা সংস্থা বিএসএনএল কেন পারবে না? বিএসএনএলের জেলা আধিকারিকেরা বলছেন, পরিষেবা স্বাভাবিক না রাখতে পারার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জেলার বিভন্ন বিটিএসগুলাতে (এক্সচেঞ্জ) ধারাবাহিক যন্ত্রাংশ চুরি। অন্য বেসরকারি টেলি-পরিষেবা সংস্থা হলে তাদের অধিকারিকদের পক্ষে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনে যে ভাবে তদবির করা সম্ভব, সরকারি সংস্থা হওয়ার জন্য সে সব করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কী প্রতিবন্ধকতা তা অবশ্য পরিষ্কার করে কিছু বলেননি ওই আধিকারিকেরা।
ওই সংস্থার অপর এক জেলাআধিকারিক এজিএম (প্রশাসন) অরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে নলহাটি থানার কয়থা, লোহাপুর, সাঁইথিয়া থানার আমোদপুর, রামপুরহাট থানার চাকপাড়া, মহম্মদবাজার থানার দেউচা, সিউড়ির খটঙ্গা, সদাইপুর থানার চিনপাই, মহম্মদবাজারের গণপুর, দুবরাজপুরের তরুলিয়া, বোলপুরের মকরমপুর বিটিএসে লক্ষ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, সব ক্ষেত্রেই বিঘ্নিত হয়েছে পরিষেবা। কোথাও ৭ দিন কোথাও বা মাস খানেক সময় লেগেছে পরিষবা স্বাভাবিক করতে। বিশেষ করে গত মাসে বোলপুরের মকরমপুরে বিটিএসের (যে কেন্দ্রটির উপরে শান্তিনিকেতনের মূলভবন ও মেলা মাঠের এলাকা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার টুজি ও থ্রিজি পরিষেবা নির্ভর করে) ৯৬০ মিটার ফিডার কেবল চুরি গিয়েছিল। সেখানকার পরিষেবা এখনও স্বাভাবিক করা যায়নি। জেলা অধিকারিকেরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ স্থানীয় প্রশাসন এমন অশ্বাস দিতে পারছেন না যে, আবারও চুরি হবে না ওখানে। এ ছাড়া পরিষেবা বিঘ্নিত করতে এবং অন্য সংস্থাকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্য অন্তর্ঘাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আধিকারিক। উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ায় এ বার পুজোয় যখন কীর্ণাহারে এসেছিলেন, তার ঠিক আগের দিন অর্থাত্‌ ষষ্ঠীর দিন সন্ধা্যার মুখে সিউড়ি-দুবরাজপুর রাস্তার বিটিএস থেকে বহরমপুর ‘এমটিএস’ (মেইন ট্রান্সিভার স্টেশন) যাওয়ার লাইনটি কে বা কারা কেটে দিয়েছিল। জানার পরে তড়িঘড়ি সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লাইনটি মেরামত করে দেওয়া হয়েছিল। তবে কারণ যাই থাক জেলা পুলিশ সুপারকে প্রতিটি ঘটনার লিখিত বিবরণ, ক্ষতির পরিমান জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। পুলিশ সুপারও সংশ্লিষ্ট থানাকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন একটি চিঠি বিএসএনএলের দফতরেও এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” অর্থাত্‌ যে সংস্থার উপরে গোটা জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতর ল্যান্ডলাইন ও ইন্টারনেট পরিষেবা নির্ভরশীল, সেই সংস্থার চুরি আটকানো না গেলে আদৌ কি পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে প্রশ্ন খোদ দফতরেই! সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা বাজপড়ে বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

বিএসএনএল বিভ্রাট
• ৭ জুলাই। স্থান: নলহাটির কয়থা।
চুরি: দু’টি সেট ব্যাটারি ও অন্য যন্ত্রাংশ।
ক্ষতি: প্রায় ৩ লক্ষ।
• ১১ জুলাই। স্থান: লোহাপুর।
চুরি: দু’টি সেট ব্যাটারি ও সমস্ত ডেটাকার্ড।
ক্ষতি: প্রায় ৬ লক্ষ।
• ১৯ জুলাই। স্থান: সাঁইথিয়ার আমোদপুর।
চুরি: ব্যাটারি, ডেটাকার্ড, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ।
ক্ষতি: প্রায় ১০ লক্ষ।
• ২৭ অগস্ট। স্থান: রামপুরহাটের চাকপাড়া।
চুরি: ৬টি ফিডার কেবল।
ক্ষতি: প্রায় ৯৬ হাজার।
• ২৭ অগস্ট। স্থান: মহম্মদবাজারের দেউচা।
চুরি: ফিডার কেবল, পাওয়ার কেবল।
ক্ষতি: প্রায় ৪৮ হাজার।
• ২৮ অগস্ট। স্থান: সিউড়ির খটঙ্গা।
চুরি: ফিডার কেবল।
ক্ষতি: প্রায় ৩৬ হাজার।
• ২ সেপ্টেম্বর। স্থান: সদাইপুরের চিনপাই।
চুরি: ফিডার কেবল, কার্ড, ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
ক্ষতি: প্রায় ১১ লক্ষ।
• ৩ সেপ্টেম্বর। স্থান: মহম্মদবাজারের গণপুর।
চুরি: ব্যাটারি ও ডেটাকার্ড।
ক্ষতি: প্রায় ১০ লক্ষ।
• ৩ সেপ্টেম্বর। স্থান: দুবরাজপুরের তরুলিয়া মোড়।
চুরি: কার্ড, ব্যাটারি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
ক্ষতি: প্রায় ১১ লক্ষ।
• ২ অক্টোবর। স্থান: বোলপুরের মকরমপুর।
চুরি: ফিডার কেবল।
ক্ষতি: প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার।
সূত্র: জেলা বিএসএনএল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.