কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে চাষের জমিতে নতুন আলুর বীজ ফেলা। তার ঠিক আগেই খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিল বর্ধমান জেলা কৃষকসভা। সিপিএমের এই কৃষক সংগঠন সূত্রে খবর, চলতি মাসের বিভিন্ন দিনে সংগঠনের প্রতিটি জোনাল কমিটিতে খেতমজুরদের নিয়ে কাজ বন্ধ রেখে ‘দাবি দিবস’ পালন করে প্রতিটি বিডিও দফতরে বিক্ষোভ দেখাবেন খেতমজুরেরা।
বাংলার শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বর্ধমানে খেতমজুরদের অর্থের সঙ্গে মজুরি বাবদ চাল দেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। গত বছর পর্যন্ত খেতমজুরদের দৈনিক মজুরি ৮০ টাকা ও ২ কেজি চাল। গত বছরই মজুরি বেড়ে হয় ১০০ টাকা। সঙ্গে দেওয়া হয় ২ কেজি করে চাল। জেলা কৃষকসভার দাবি, খেতমজুরদের দৈনিক মজুরি বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করতে হবে। শুক্রবার কৃষকসভার জেলা সম্পাদক আবদুর রেজ্জাক মণ্ডল বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে খেতমজুরদের মজুরি বাবদ ১৯৩ টাকা পাওয়া উচিত। সরকারের বেঁধে দেওয়া এই মজুরি জেলার সর্বত্র কার্যকর করার জন্যই আন্দোলনে নামছি আমরা।” যদিও সরকারের মজুরির মধ্যে চাল দেওয়ার কথা বলা নেই। কৃষকসভার দাবি, ২ কেজি চালের দাম বাদ দিলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে অনেকটাই কম পান বর্ধমানের খেতমজুরেরা। সাধারণত, বড় চাষি ও খেতমজুরের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি ঠিক হয়।
এমনিতেই কৃষি সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জন্য লাভ কমছে চাষে। এর উপর খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে কৃষকদের উপরই চাপ পড়বে না? এই প্রশ্নের উত্তরে কৃষকসভার কালনা জোনাল কমিটির সদস্য বীরেন ঘোষ বলেন, “এটা ঠিক যে, চাষে যেভাবে খরচ বাড়ছে তাতে তেমন লাভ মিলছে না। তবু খেতমজুরদের পরিবারের অবস্থার কথা ভেবেই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” তিনি জানান, কালনা ১ ও ২ ব্লকে ‘দাবি দিবস’ পালন করা হবে ২১ নভেম্বর। এ ছাড়াও এই দুই ব্লকে ২৭টি বামপন্থী সংগঠনের ডাকে মূল্যবৃদ্ধি-সহ নানা ইস্যুতে ৩০ নভেম্বর ও ১লা ডিসেম্বর পালন করা হবে গণ অবস্থান কর্মসূচি।
যদিও কৃষকসভার আন্দোলন কর্মসূচিকে মোটেও গুরুত্ব দিতে রাজি নয় জেলা তৃণমূল। তাঁরা এই কর্মসূচিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে ব্যাখা করছে। তৃণমূলের দাবি, নানা কারণে খেতমজুরদের বড় অংশের আস্থা হারিয়েছে সিপিএম। মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনকে সামনে রেখে কৃষক সভার মাধ্যমে জেলার রাজনীতিতে মাটি খুঁজছে সিপিএম। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “৩৪ বছর শাসনক্ষমতায় থাকার সময় সিপিএম এই দাবি করেনি। এখন করছে। তাই এই দাবিকে আমি রাজনীতিই বলব।” তৃণমূলের জেলা কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের সভাপতি রাজকুমার পান্ডে বলেন, “মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামনে রেখে সিপিএম চাইছে খেতমজুর ও কৃষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব গ্রামে গ্রামে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে তার লাভ ওঠাতে।” যদিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে জেলা কৃষকসভা। |