বাঁকুড়ার ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন শুক্রবার
কাউন্সিলর পাবেন, এতেই খুশি বাসিন্দারা
প্রায় দু’বছর হল কাউন্সিলর মারা গিয়েছেন। কাউন্সিলরের অভাব প্রতিপদে টের পান ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। জঞ্জাল থেকে নিকাশি, শংসাপত্র থেকে ছোটখাটো সমস্যাকাউন্সিলর না থাকায় কার কাছে যাবেন, বুঝতে পারেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিপদে ছুটতে হয় পুরসভায়।
এই অবস্থায় শুক্রবার, ২২ নভেম্বর বাঁকুড়ার পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন হচ্ছে। হোক না উপ-নির্বাচন, ওয়ার্ড দখলের লড়াইয়ে কোনও দলই বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়তে নারাজ। লড়াই এখানে চতুর্মুখী। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিআই এবং বিজেপিএই চার দলই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। ২০১০ সালের পুর-নির্বাচনে এই ওয়ার্ডটি তৃণমূলের দখলেই ছিল। ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলার সুকুমার হালদার সিপিআই প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়লাভ করেছিলেন। এই সাফল্যকে ধরে রাখাটাই তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জেলার রাজনৈতিক মহলের মত। এই ওয়ার্ডে সুকুমারবাবুর স্ত্রী লতিকারানি হালদারকেই প্রার্থী করেছে শাসকদল।
কাউন্সিলর-হীন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবর্জনার স্তূপ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের কথা মাথায় রাখলে এই উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের জয় স্বাভাবিক বলে মনে করছেন ওয়ার্ডের বহু বাসিন্দা। তবে, শাসকদলের ভিতরেই কিছু কাঁটা খচখচ করছে। দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের পাশাপাশি তাই কিছুটা সংশয়ে প্রার্থী নিজেও। লতিকাদেবীর কথায়, “মানুষ আমাদেরই সমর্থন করছেন। কিন্তু, আমাদের দলেরই মুষ্টিমেয় কিছু কর্মী সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছে।” তৃণমূল নেতাদের একাংশের অভিযোগ, কাউন্সিলরের অনুপস্থিতির সুযোগে গত প্রায় দু’বছর একশ্রেণির দলীয় কর্মী ওয়ার্ড কমিটি গড়ে পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের অপব্যবহার করেছেন। লতিকাদেবী বলেন, “এই সব কর্মীর কাজকর্মে কিছু সাধারণ মানুষের আমাদের দলের প্রতি ভুল ধারণা হচ্ছিল। তাই ওই কর্মীদের আমরা প্রচারে অংশ নিতে দিইনি।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, উপ-নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়েও বাঁকুড়ার পুরপ্রধান, তৃণমূলের শম্পা দরিপার সঙ্গে দলের একাংশের মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য শম্পাদেবীর মনোনীত লতিকাদেবীকেই দল এখানে প্রার্থী করেছে। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে, একেবারে স্থানীয় নির্বাচন হলেও শম্পাদেবীর কাছে এটা ‘মর্যাদার লড়াই’। তাঁর পছন্দের প্রার্থী জেতেন কি না, দেখতে আগ্রহী দলের অনেকেই। শম্পাদেবীর অবশ্য মন্তব্য, “কোনও লড়াইকেই আমরা সহজ করে দেখি না। এ ক্ষেত্রেও দেখছি না। তবে আমার বিশ্বাস বিপুল ভোটে জিতব।”
ওয়ার্ড দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। অনেক ভেবেচিন্তে কেঠারডাঙা এলাকার বাসিন্দা দিলীপ দত্তকে তারা প্রার্থী করেছে। দিলীপবাবু ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা না হলেও এই এলাকার মানুষের বহুদিনের পরিচিত মুখ তিনি। প্রায় দু’দশক ধরে বাঁকুড়া টাউন কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তিনি কাজ করছেন। অতীতে দিলীপবাবুক সিপিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গত পুরভোটের সময় দলত্যাগ করেন। কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দিলীপবাবুকে এলাকার মানুষ খুব ভাল করে জানেন। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। প্রার্থী হিসেবে তাই তাঁর কোনও বিকল্প হতে পারে না। তিনি নিশ্চই ওই এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করবেন।” প্রার্থীকে জেতাতে জোর কদমে প্রচারও চালাচ্ছে কংগ্রেস। প্রতিদিনই পথসভা বা বাড়িবাড়ি গিয়ে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন কংগ্রেসের জেলা নেতারা।
ওয়ার্ড সেজেছে নানা দলের পতাকায়।
এই ওয়ার্ডে সিপিআইয়ের প্রভাব খুব খারাপ নয়। তাই আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন সিপিআই প্রার্থী শ্যামসুন্দর দত্ত। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল ভোটে জিততে সন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা পন্থা অবলম্বন করছে। কিন্তু এই সব করে মানুষের বিশ্বাস আদায় করা যায় না। মানুষ আমাদের পাশেই আছেন। ভোটের ফলে তা প্রমাণিত হবে।” তৃণমূল সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী করেছে অচিন্ত্য মহান্ত।
টানা দু’বছর কাউন্সিলর না থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হলেও কাউন্সিলর না থাকায় সেগুলির তদারকি সে ভাবে হয়নি। জঞ্জাল সাফাই নিয়মিত না হওয়ায় বেশ কিছু জায়গায় আবর্জনার স্তূপ জমেছে। পাশাপাশি ছোটখাটো সমস্যা বা শংসাপত্র আনতেও তাঁদের পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হত এত দিন। অবশেষে উপ-নির্বাচন হওয়ায় সেই সমস্যা কাটতে চলেছে বলেই তাঁরা মনে করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু দাস, বাপি ঘোষরা বলেন, “অনেক আগেই উপ-নির্বাচন হওয়া উচিত ছিল। কাউন্সিলরের না থাকায় ওয়ার্ডের লোকজন নানা অসুবিধায় পড়েছেন। নতুন কাউন্সিলর যেই হোন, আমাদের হয়রানি কিছুটা হলেও কমবে।”

ছবি: অভিজিৎ সিংহ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.