বিনোদন সিনেমার ভালমন্দ, বিচারকের
আসনে সোশ্যাল মিডিয়া

যেন সাপলুডো! কখন মাথায় তুলবে, কখন আছড়ে ফেলবে, বোঝাই দায়!
চলচ্চিত্র জগতের কাছে এই নতুন মাথাব্যথাটি হলেন শ্রীলশ্রীযুক্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট! সিনেমার ভাল-মন্দ নির্ধারণে যার গুরুত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে।
প্রথম বেশ কয়েক বছর হলি-বলি-টলি সকলেই ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউব নিয়ে বেশ আহ্লাদিত ছিল! নিখরচায় এমন প্রচারের মঞ্চ, দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের এমন মাঠ এর আগে তারা পায়নি। এখন উল্টো দিকটাও ক্রমশ সামনে আসছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং যেমন লক্ষ্মীর আশীর্বাদ আনতে পারে, তেমনই ভাগ্য ডোবাতেও পারে বুঝছে ইন্ডাস্ট্রি।
রণবীর কপূরের সাম্প্রতিক ছবি ‘বেশরম’-এর কথাই ধরা যাক। নেট দুনিয়ায় ছবির ট্রেলার ঠিক যতটা প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, হলফেরত দর্শকের ক্ষোভ উগরোতেও সেই ইন্টারনেটই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে। এমনকী টুইটার হ্যাশট্যাগে ‘বেশরম’-এর থেকেও খারাপ ছবি কী কী রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করতে বসেছেন টুইট-নাগরিকরা। ফলে যে দ্রুততায় ছবিটি সম্পর্কে আগ্রহ ছড়িয়েছিল, সেই একই দ্রুততায় নেতিবাচক মনোভাব ছড়িয়ে পড়তেও দেরি হয়নি।
এটা শুধু বেশরম-এর ক্ষেত্রেই নয়। নেটিজেনদের গুরুত্ব বুঝে ইদানীং সংবাদ-সাইটগুলোতে নিয়মিত শুরু হয়ে গিয়েছে ছবির ‘টুইট রিভিউ’। অর্থাৎ প্রথম দিনের প্রথম শো চলতে চলতেই সমালোচক প্রতি মুহূর্তে আপডেট দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু পেশাদার সমালোচক কেন! আম দর্শকও পিছিয়ে নেই। কোনও ছবি মুক্তির আগে হয়তো ব্যাপক ‘হাইপ’ তৈরি করেছে। শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহ কানায় কানায় ভর্তি। যেমন যেমন ছবির গল্প এগোচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘আপডেট’ হচ্ছে স্টেটাস। কেউ লিখছেন, “প্রথমার্ধ অসম্ভব খারাপ।” কেউ বা আবার, “দশ মিনিটের বেশি দেখা যায় না।” ফল? ছবির মুক্তির প্রথম দিনে যে ক’জন মানুষ সেটি দেখলেন, তার থেকে বহু গুণ বেশি মানুষ ছবিটি না দেখেই গোটা ইতিবৃত্ত জেনে গেলেন। যাঁরা ছবিটি অন্তত একটি বার দেখতে যেতেন, তাঁরাও অনেকেই আর গেলেন না। এমনটাই হয়েছিল অজয় দেবগন অভিনীত ‘হিম্মতওয়ালা’র ক্ষেত্রে। এবং এ ক্ষেত্রেও টুইটার হ্যাশট্যাগে একের পর এক হাস্যকর মন্তব্য ছড়িয়ে পড়েছিল দুর্বার গতিতে।
গত ক’বছর ধরেই ছবির প্রাক্-মুক্তি প্রচার থেকে ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাসিন্দাদের পাশে রাখতে তৎপর প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতারা। এখন তাঁদের এই নেতিবাচক সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। কিন্তু নেট দুনিয়ার প্রভাব যে হারে বাড়ছে, তাতে তাকে এড়িয়ে চলার কোনও সুযোগ থাকছে না। অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “মধ্যবিত্ত দর্শক, যাঁদের জন্য ছবি বানানো হচ্ছে, তাঁদের আজ কাল প্রেক্ষাগৃহে টেনে আনাটাই সমস্যার। সৌজন্যে আধুনিক টিভি। তাঁদের আকর্ষণ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার এখন একটা অন্যতম মাধ্যম তো বটেই।”
বাস্তবিক। কাজের চাপে, সংসারের দায়িত্ব সামলে কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সদস্যদের উপস্থিতি প্রায় সর্বক্ষণের। সেই মাধ্যম ব্যবহার করা মানে এক সঙ্গে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। এবং পুরো ব্যাপারটাই নিখরচায়। খোদ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের বাসিন্দারাও স্বীকার করছেন, বিশেষ করে ছোট বাজেটের ছবিগুলোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফেসবুক, টুইটার। “কারণ, বড় বাজেটের ছবি যত সহজে প্রচারের অন্যান্য দামি কৌশল ব্যবহার করতে পারে, ছোট বাজেটের ছবি তা পারে না। সে ক্ষেত্রে বিনামূল্যে প্রচারের বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোই,” বললেন ‘নেটিজেন’ তোর্সা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘শিপ অব থেসিয়াস’, ‘দা গুড রোড’-এর মতো অল্প বাজেটের ছবিগুলি শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া পাবলিসিটির জন্যই কতটা পরিচিতি পেয়েছিল,
তা এখনও স্মৃতিতে টাটকা তাঁর মতো আরও বহু ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাসিন্দার। এমন ভাবেই বাজার মাত করেছিল আট কোটি টাকা বাজেটের ‘পান সিংহ তোমর’। টুইটারে প্রচার চালিয়ে মুক্তির আগেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল ছবিটি। বক্স অফিসে ৩৮ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার ব্যবসা করে ‘পান সিংহ তোমর’।
ভার্চুয়াল প্রচারকে নেকনজরে দেখছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনিও। বললেন, “ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের যে পেজ আছে, তাতে আগামী ছবির প্রচার নিয়ে নানা ধরনের কাজ চলে। ছবি, ক্লিপিংস, ইত্যাদি সবই দেওয়া হয়।” এবং তা যে যথেষ্ট মুনাফাও আনে, সে ব্যাপারে একশো ভাগ বিশ্বাসী তিনি। বিষয়টির সঙ্গে কিছুটা একমত হলেও পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়াকে শুধুই প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে নারাজ। তাঁর মতে, “ছবি নিয়ে মানুষের মতামত জানতে ও আমার মতামত তাঁদের জানাতে এগুলোই তো কার্যকরী মাধ্যম।” কিছু দিন আগে মুক্তি পায় তাঁর ‘নায়িকা সংবাদ’। আগে থেকেই ছবির স্থিরচিত্র নিয়ম করে ‘ওয়াল’-এ পোস্ট করেছিলেন তিনি।
শুধু বলিউড বা টলিউড নয়, হলিউডও বেশ ক’বছর ধরে ভরসা রাখছে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে। ‘প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটি’, ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড ডেডলি হ্যালোজ পার্ট টু’, ‘টোয়াইলাইট’, ‘ইনসেপশন’ প্রত্যেকেই প্রচারপর্বে জোরদার ব্যবহার করেছিল সোশ্যাল মিডিয়াকে। ফল? মারকাটারি ব্যবসা।
অতএব? ঝুঁকি আছে জেনেও সোশ্যাল মিডিয়াকে ত্যাগ করার জায়গা কই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.