ক্যাট্টেগাট সাগরের জল কেটে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলেছে মোটরবোট। ডেনমার্ক ও সুইডেনের ভূখণ্ড দিয়ে ঘেরা, উত্তর মহাসাগর-বাল্টিক সাগরের মাঝে ক্যাট্টেগাট সাগর। গন্তব্য অ্যানহল্ট নামের একটা ছোট্ট দ্বীপ। বিশ কিমি মতো যাওয়ার পর মনে হল, সাগরের জলে যেন কেউ বেড়া দিয়ে রেখেছে। আর একটু এগোতেই স্পষ্ট হল ছবিটা। বেড়া নয়, জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে একের পর এক হাওয়া-কল। একটা-দু’টো নয়, ১১১ খানা!
সমুদ্রের হাওয়ায় প্রবল গতিতে ঘুরে চলেছে হাওয়া-কল। তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। আর জলের নীচে মাটিতে পাতা তার বেয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে ডেনমার্কের ঘরে ঘরে।
তিন দিক সমুদ্রে ঘেরা ভারতে কি এমনটা করা যায় না? ডেনমার্কের বিদ্যুৎ ও পরিবেশ-মন্ত্রী মার্টিন লিডেগার্ড বললেন, “অবশ্যই হতে পারে। ভারতের মতো বিরাট দেশে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরাও চাই, ভারতকে সাহায্য করতে।” গত এপ্রিলে দিল্লিতে ‘ক্লিন এনার্জি মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সে’-এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ঘোষণা করেছেন, ভারত ২০১৭ সালের মধ্যে সৌর, বায়ু বা জল-বিদ্যুতের মতো অপ্রচলিত শক্তির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে চায়।
ভারতে এখন ২০ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি বায়ু-বিদ্যুৎ তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ফ্রেজারগঞ্জেও বায়ু-বিদ্যুৎ তৈরি হয়। কিন্তু দেশের তিন দিকে আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর থাকলেও, জলের মধ্যে এখনও হাওয়া-কল বসানো হয়নি। |
ক্যাট্টেগাট সাগরের বুকে হাওয়া-কলের বেড়া। ছবি: নিজস্ব চিত্র। |
নয়াদিল্লি অবশ্য এ বার সেই পথেই হাঁটতে চাইছে। কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত, সমুদ্রের মাঝখানে হাওয়া-কল বসিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য জাতীয় স্তরে একটি পৃথক সংস্থা তৈরি হবে। যার নাম হবে ‘ন্যাশনাল অফশোর উইন্ড এনার্জি’।
কোথায় এ ধরনের প্রকল্প হতে পারে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রকের উপদেষ্টা, পশ্চিমবঙ্গের অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন অধিকর্তা এস পি গণচৌধুরী বলেন, “পূর্ব উপকূলে না হলেও তামিলনাড়ু বা গুজরাত উপকূলে সমুদ্রের মাঝখানে এমনটা হতেই পারে। কারণ সারা বছরই সেখানে যথেষ্ট হাওয়া থাকে।”
ডেনমার্ক কিন্তু এখনই অনেক এগিয়ে। সে দেশের চাহিদার ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎই আসে হাওয়া-কল থেকে। ক্যাট্টেগাট সাগরে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে তৈরি ‘উইন্ড এনার্জি ফার্ম’ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ বছরে চার লক্ষ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারে তা। ডেনমার্কের মতো ছোট দেশে যা হতে পারে, তা কি ভারতে সম্ভব নয়?
মার্টিন বলেন, “সুইডেন, নরওয়ের মতো ছোট ছোট স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলি এখন বিদ্যুতের গ্রিডে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। যখন যে দেশে হাওয়া বয়, উৎপন্ন বিদ্যুৎ একে অপরকে পাঠিয়ে সাহায্য করে। ভারতেও সে ভাবে অত্যাধুনিক গ্রিড তৈরি হতে পারে।” সমুদ্রে সারা বছর পর্যাপ্ত হাওয়া। যত হাওয়া, তত বিদ্যুৎ। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না। এক কণাও কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশছে না বাতাসে। গণচৌধুরী বলেন, “প্রথমে অনেক খরচ করতে হলেও, পরে খুব সহজেই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।” |