অর্থের অভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে দিন আনি, দিন খাই পরিবারে বেড়ে ওঠা ভারত সেরা হওয়ার স্বপ্ন।
মেমারির বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়। বয়স নয় বছর। স্থানীয় সুলতানপুর প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এই ছাত্রী ৬-১৪ নভেম্বর তামিলনাড়ুর জওহরলাল ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব নয় জাতীয় দাবা চাম্পিয়ানশিপে ১২৭ জন প্রতিযোগীর মধ্যে নবম স্থান পেয়েছে। কিন্তু এই সাফল্য কী ভবিষ্যতেও আসবে? আর্থিক অনটনের মুখে পড়া মুখোপাধ্যায় পরিবারের প্রশ্ন এখন এটাই।
বৃষ্টির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছয় বছর বয়সে দাবা খেলায় হাতেখড়ি হয় এই মেয়ের। ইতিমধ্যেই সে একাধিক জাতীয় স্তরের দাবা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২০১১ সালে এশিয়ান স্কুল দাবার ব্রোঞ্চ পদক। ২০১২ সালে কমনওয়েল্থ দাবা প্রতিযোগিতাতেও ভাল ফল করে এই খুদে দাবাড়ু। চলতি নভেম্বরের অনূর্ধ্ব নয় জাতীয় দাবায় এগারোটি ম্যাচ খেলে সাতটাতে জিতেছে সে। দুটি গেম ড্র করেছে। হার হয়েছে দুটি গেমে। সব মিলিয়ে আট পয়েন্ট পেয়ে প্রতিযোগিতায় নবম হয় বৃষ্টি। |
মেয়ের সাফল্য স্বভাবতই খুশি তাঁর বাবা-মা। কিন্তু এই সাফল্যই বাড়িয়েছে তাঁদের চিন্তা। কারণ, মেমারিতে দাবা শেখার কোনও সুযোগ নেই। আগে প্রায় প্রতি দিনই তাকে কলকাতার একটি দাবা ক্লাবে দাবা খেলতে যেতে হত। বর্তমানে কলকাতার এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে গুডরিক জাতীয় অকাডেমিতে দাবা শিখছে সে। এর জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে বৃষ্টির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বৃষ্টির বাবা দেবাশিস মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁর পক্ষে মাসে মেয়ের দাবা খেলার এই খরচ বহন করা সম্ভব আর সম্ভব হচ্ছে না। এই খুদে দাবাড়ুর মা অপরূপা মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী দু’দফায় ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর নিজের গয়না বেচেছি। জমি জায়গা বিক্রি করে মেয়েকে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখে চলেছি। কিন্তু রসদ ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। সরকারি কোনও সাহায্য না পেলে হয়ত আমার মেয়ে বেশি দিন দাবার বোর্ডের সামনে বসতে পারবে না।” ইতিমধ্যেই সাহায্য চেয়ে মেমারির বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডল ও জেলা থেকে নির্বাচিত রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবানাথের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা।
যদিও মেমারির বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি এই খুদে দাবাড়ুকে ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপরে তাঁরা আর যোগাযোগ করেননি। যোগাযোগ করলে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। |