এসআই কম, পরিদর্শন হচ্ছে না স্কুলে-স্কুলে
বসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশনের ফাইল আটকে গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছুটি অনুমোদন হচ্ছে ঢিমেতালে। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা মঞ্জুর হতে সময় লাগছে বিস্তর। কখনও প্রকল্পের টাকা ফিরেও যাচ্ছে। স্কুল পরিদর্শনও প্রায় শিকেয় উঠেছে। রাজ্যে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের (এসআই) পদে লোক কম থাকায় এমনই সব সমস্যা হচ্ছে অভিযোগে সরব হয়েছেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক সংগঠনের একাংশ।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলির জন্য ৯৯৯ জন এসআই থাকার কথা। রয়েছেন ৬২১ জন। সমস্যাটা বাড়িয়ে তুলেছে এসআই-দের দফতরে কর্মীর অভাব। সেখানে এসআই-সহ অন্তত ৬ জন থাকার কথা। কিন্তু কার্যত তা নেই। ফলে, নানা কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে নিয়মিত স্কুলপরিদর্শনও।
বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন, ‘নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক বিদ্যালয় সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক সমর চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বিপুল সংখ্যক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ শূন্য থাকায় স্কুল পরিদর্শন ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে। আমরা সংগঠনের তরফে সরকারের কাছে বার বার শূন্যপদ পূরণের ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজনের কাজে যোগ দেওয়ার কথা। পর্যায়ক্রমে আরও নিয়োগ হবে।”
কী করেন এসআই-রা?
পড়াশোনার মান বজায় থাকছে কি না তা দেখতে মাঝেমধ্যেই স্কুল পরিদর্শন করতে হয় তাঁদের। নজরদারি করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরার উপরে। কর্মরতদের বেতনের বিল বানানোর পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশনের কাগজপত্র তৈরি করতে হয়। শিক্ষকদের ছুটির আবেদনপত্র অনুমোদনের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব এসআই-এর দফতরের। স্কুলগুলি পড়ুয়াদের নিয়ম মেনে মিড-ডে মিল খাওয়াচ্ছে কি না, তার মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করে এসআই-কে পাঠাতে হয় বিডিও এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে।
সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় স্কুলগুলির পরিকাঠামো উন্নতির কাজ তদারক করা, বিভিন্ন প্রকল্পের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব সামলানো, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণ, পুরনো ভবন সম্প্রসারণের অর্থ বরাদ্দ করা, প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের বৃত্তি বিতরণ, স্কুলছুটের হিসেব রাখার দায়িত্বও রয়েছে এসআইদের। তার বাইরে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঝেমধ্যেই ভোটার তালিকার কাজও করতে হয়। একটি চক্রের দায়িত্বে থাকেন এক জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক। একটি চক্রে অন্তত ৫০টি প্রাথমিক স্কুল থাকে। গোটা রাজ্যে ৭২৯টি চক্র রয়েছে। কিন্তু এসআই তুলনায় কম। মুর্শিদাবাদেই যেমন ৪১টি চক্রের জন্য এসআই রয়েছেন ২৫ জন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেককেই একাধিক চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হয়।
ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। একাধিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, “দীর্ঘ দিন আগে সার্ভিস বুক পাঠানো হলেও অবসর নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেনশন সংক্রান্ত ফাইল আটকে থাকা, সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্পের টাকা এসআই অফিসের তরফে তদারকির অভাবে ফিরে যাওয়া, ওই প্রকল্পেই টাকা মঞ্জুর হতে সময় লাগা-সহ নানা ঝামেলা হচ্ছে। শিক্ষকদের ছুটির আবেদনপত্র তৈরিতেও সমস্যা হচ্ছে।” প্রায় একই অভিযোগ মিলেছে নদিয়াতেও। সেখানে ৩৭টি চক্রের জন্য এসআই আছেন ২৪ জন। খোদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অর্চনা সরকার ঘোষ সরকার বলেন, “এসআইয়ের ঘাটতি থাকায় স্কুল পরিদর্শন ঠিকমতো হচ্ছে না। অনেককেই প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার ব্যবধানের দু’টি চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব।”
মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকার এক এসআই মানছেন, “আমার অধীনে দু’টি চক্রে স্কুলের সংখ্যা প্রায় দেড়শো। তাই নিয়ম করে স্কুলগুলিতে পরিদর্শনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অফিসে কোনও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও নেই। সব কাগজপত্র নিজের হাতে সামলাতে হয়।” এসআই-দের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতি’র রাজ্য সম্পাদক কালীপদ সানার বক্তব্য, “শিক্ষা দফতরে এসআই কম থাকার বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করি, সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.