|
|
|
|
প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, জোর জল্পনা ঘাটালে |
ব্লক সভাপতির পদ ছাড়তে চান অজিত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
দলীয় কোন্দলের জেরে ব্লক সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে। রবিবার ঘাটাল শহরের টাউন হলে দলের সাধারণ সভায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সামনেই এ কথা ঘোষণা করেন অজিতবাবু। তাঁর কথায়, “দলের মধ্যে কোন্দল ক্রমশ বাড়ছে। এতে শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই বাড়ছে দুর্নীতি। দলেরই একটি গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর কর্মীদের মারধর করছে, খুনের হুমকি দিচ্ছে। দলীয় বৈঠকে এ নিয়ে বহুবার আলোচনা সত্ত্বেও এ সব বন্ধ হয়নি। তাই আমি ব্লক সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যথাসময়ে আমার সিদ্ধান্ত দলের জেলা সভাপতি-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেব।”
সেই ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন অজিতবাবু। এলাকায় তৃণমূলের দলীয় সংগঠনও এখন জোরদার। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতি, এলাকার ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ঘাটাল ব্লকের দু’টি পুরসভাই তৃণমূলের দখলে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অজিতবাবুর এমন সিদ্ধান্তে সকলেই হতবাক। এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই। তিনি বলেন, “এ দিন আমার পাশেই বসেছিলেন অজিতদা। উনি ইস্তফা দিতে চান শুনে প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি নিজে অজিতদা-র সঙ্গে দেখা করব। কার, কোন কথায় আঘাত পেয়ে উনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন, জানতে চাইব। সেই সঙ্গে উনি যাতে ব্লক সভাপতি পদে থেকে দলকে আগামী দিনেও এগিয়ে নিয়ে যান, তার আর্জি জানাব।” |
|
অজিত দে। —নিজস্ব চিত্র। |
সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অজিতবাবুর এমন সিদ্ধান্তে শুভেন্দুবাবু নিজেও বিস্মিত। তমলুকের তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, “অজিতদাকে আমি বহুদিন চিনি। উনি খুব ভালমানুষ। দলের যখন দুর্দিন, তখন থেকে উনি দলের সঙ্গে রয়েছেন। তাহলে সুদিনে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন, বলতে পারব না।” এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ অজিতবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই বিধায়ক শঙ্করবাবুর ‘ঠান্ডা লড়াই’ চলছে। শঙ্করবাবু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সম্প্রতি দলের মধ্যে অজিতবাবুর গুরুত্বও কমছিল। এ দিন ইস্তফার কথা জানানোর সময় তিনি নিজে বলেন, “দলে আমার কোনও কথার মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না।” এই পরিস্থিতিতেই অজিতবাবু ব্লক সভাপতির দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।
এ দিন তৃণমূলের সাধারণ সভায় বিধায়ক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের পুরপ্রধান বিভাস ঘোষ, উপপুরপ্রধান উদয়শঙ্কর সিংহ রায়, স্থানীয় নেতা পঞ্চানন মণ্ডল, দিলীপ মাঝি, মন্টু বাউরি প্রমুখ। সম্প্রতি ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী সব তৃণমূল সদস্যরাও ছিলেন। সভার শুরুতেই স্বাগত ভাষণ দিতে গিয়ে অজিতবাবু পুরনো দিনের কথায় ফিরে যান। তিনি বলেন, “ঘাটালে যখন দলের সংগঠন শুরু হয়, তখন আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। একটা পার্টি অফিস পর্যন্ত ছিল না। এখন দলের সুদিন। সবাইকে মাথা ঠান্ডা করে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে।” এরপরই আচমকা তিনি দলের কোন্দলের কথা বলে ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।
অজিতবাবু শেষমেশ ইস্তফা দেন কিনা, দিলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব তা গ্রহণ করে কিনা, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|