বাজার আগুন। জিনিসপত্রের দাম তুঙ্গে। ১০% ছাড়িয়েছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিও ৭ শতাংশের উপরে। কিন্তু তবুও এই মুহূর্তে যাঁরা অবসরের মুখে দাঁড়িয়ে, তাঁদের জন্য সময়টা বোধ হয় মন্দের ভাল।
কেন? কারণ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন এখন অগ্নিমূল্য, তেমনই সেই সমস্যা মোকাবিলা করার বেশ কয়েকটি অস্ত্রও হাতের কাছে মজুত রয়েছে। যেমন মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে আজ বহু দিন ধরেই চড়া সুদের জমানা বজায় রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মূলত সেই সূত্রে আমানতে সুদের হারও এখন তুঙ্গে। ব্যাঙ্ক এবং অন্যত্র জমায় প্রবীণ নাগরিকেরা ৯.৭৫ থেকে ১০% পর্যন্ত সুদ পেতে পারেন।
ভাল বর্ষার সুবাদে কৃষি উৎপাদন বাড়লে, পণ্যমূল্য হয়তো কিছুটা কমবে। কিন্তু বর্তমান সুদকে যদি দীর্ঘ মেয়াদে বেঁধে ফেলা যায়, তবে গ্রাহকেরা তা পেতেই থাকবেন। এবং তা পাওয়া যাবে পরে সুদ কমে গেলেও। ২-৩ মাসের মধ্যে যদি জিনিসপত্রের দাম কমে, তবে সম্ভাবনা থাকবে সুদের হার নেমে আসারও।
• সম্ভবত চলতি মাসেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে আনবে মূল্যবৃদ্ধি-সূচক বন্ড। যার সুদের একটা অংশ নির্ভর করবে মূল্যবৃদ্ধি ওঠা-নামার উপর। এর নাম ইনফ্লেশন ইনডেক্সড ন্যাশনাল সেভিংস সিকিউরিটিজ। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের।
• এখন চলছে করমুক্ত বন্ড ইস্যুর মরসুম। এতে ৯ শতাংশের কাছাকাছি পর্যন্ত সুদ মিলতে পারে। অবসরের পরও যাঁরা ২০ বা ৩০% করের আওতায় পড়বেন, তাঁরা এখানে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। তা ছাড়া, গত বছর ইস্যু করা করমুক্ত বন্ডের তুলনায় এ বার সুদ প্রায় ১% বেশি।
• শেয়ার সূচক এখন বেশ উপরে। তাই অবসরের পর যাঁরা ঝুঁকি ছেঁটে ইক্যুইটি থেকে সরে আসতে চান, তাঁরা এই উঁচু বাজারে শেয়ার বিক্রি করে সেই টাকা কোনও সুদযুক্ত স্থির-আয় প্রকল্পে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। |
বাজারের হালচাল বুঝতে এ বার কিছু সংস্থার আর্থিক ফলাফলে নজর রাখি। গত ১৫ নভেম্বর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ষান্মাসিক ফলাফল প্রকাশের পালা শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সেল-এর নিট লাভ বেড়েছে ১১৭%। হয়েছে ৫৪৩ কোটি টাকা। টাটা স্টিলের একত্রীকৃত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯১৭ কোটি টাকা। আগের বছর এই সময়ে ৩৬৪ কোটি লোকসান হয়েছিল তাদের। ওএনজিসি-র লাভ ৩% বেড়ে পৌঁছেছে ৬,০৬৪ কোটি টাকায়। কোল ইন্ডিয়ার নিট মুনাফা অবশ্য ৩,০৭৪ কোটি থেকে কিছুটা কমে হয়েছে ৩,০৫২ কোটি টাকা। সিইএসসি-র লাভ বেড়েছে ২৬%। ৫১% বেড়ে টাটা গ্লোবালের লাভ পৌঁছেছে ১৮০ কোটি টাকায়।
বরং তুলনায় খারাপ ফল করেছে বেশ কয়েকটি সরকারি ব্যাঙ্ক। অনাদায়ী ঋণের চাপে লাভ কমেছে স্টেট ব্যাঙ্কের। ৩,৬৫৮ কোটি থেকে নেমে এসেছে ২,৩৭৫ কোটি টাকায়। খারাপ ঋণ ৩৪% বেড়ে ১১,৫৬৪ কোটি টাকা হওয়ায় আগের তিন মাসে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের লোকসান হয়েছে ১,৫০৯ কোটি। আগের বছর এই সময়ে কিন্তু তাদের নিট লাভ হয়েছিল ৩৩০ কোটি টাকা। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক পিছিয়ে পড়লেও ইউকো এবং ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক অবশ্য ভাল ফল করেছে। তুলনায় বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি ভাল ফল প্রকাশ করেছে।
সব মিলিয়ে, শিল্পের চাকায় মন্থরতার কারণে ফলাফল যতটা খারাপ হবে বলে আশঙ্কা ছিল, বাস্তবে ততটা হয়নি। শিল্প হিসেবে ভাল ফলাফল করেছে তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, ইস্পাত এবং গাড়ি শিল্প। ব্যাঙ্কে আর্থিক ফলাফল মিশ্র।
কয়েক দিন নাগাড়ে নামার পর গত শুক্রবার উঠেছে শেয়ার সূচক। তবে সেনসেক্সকে ২০ হাজার এবং নিফটিকে ৬ হাজারের উপর ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ার। বাকি বহু শেয়ারের হাল বেশ খারাপ। দেশের সাধারণ লগ্নিকারীরা বড় সংখ্যায় বাজারে না-ফিরলে, বাজারের সামগ্রিক উত্থান হওয়াও শক্ত। শুধু বিদেশি লগ্নিকারীদের উপর ভরসা করলে বাজার মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এ কথা মাথায় রেখে বাজারে এখন সাবধানী হওয়া জরুরি। বিভিন্ন সংস্থার ফলাফল দেখে শেয়ার ধরা-ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ব্যাঙ্কে সুদ বাড়ায় কিছুটা চাকচিক্য হারিয়েছে ডাকঘরের ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলি। সেখানে মাসিক আয় প্রকল্পের (এমআইএস) সুদ বাড়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকেই। |