শুরুটা আগেই নন্দনের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এ বার শেষটাও বেরিয়ে এল। রবিবার সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে সমাপ্তি অনুষ্ঠানের আসর বুঝিয়ে দিল, যথার্থ মানুষের উৎসব হয়ে ওঠার পথে আরও এক ধাপ এগোল কলকাতার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
কলকাতার উৎসবের উদ্বোধনী আসরটিকে গত কয়েক বছর থেকে জাতীয় স্তরের একটি অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ও মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার শেষের মুহূর্তটিও বাংলার সঙ্গে বহির্ভারত বা মুম্বইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সেতুবন্ধনের উপলক্ষ হয়ে উঠল। ক’দিন আগে উদ্বোধনী আসরে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, কমল হাসন, মিঠুন চক্রবর্তীদের ডেকে এনে টালিগঞ্জের তারকাদের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিল কলকাতার চলচ্চিত্র উৎসব। সমাপ্তি অনুষ্ঠানটি জুড়ে বাংলার ঘরের মেয়ে, মুম্বইবাসী চার কন্যাকে দেখা গেল মঞ্চের পুরোভাগে। মৌসুমী মুখোপাধ্যায়, রানি মুখোপাধ্যায়, সুস্মিতা সেন, বিপাশা বসুদের সঙ্গে কোয়েল মল্লিককেও সম্মানিত করে ফের মুম্বই ও বাংলাকে মিলিয়ে দিলেন উৎসব কর্তৃপক্ষ। |
চলচ্চিত্র উৎসব
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে
সম্মানিত পঞ্চকন্যা রানি মুখোপাধ্যায়, সুস্মিতা সেন, বিপাশা বসু, কোয়েল মল্লিক ও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়।
রবিবার, সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
মেয়ের ঘরে ফেরা নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠার পরম্পরা, বলা বাহুল্য বাংলার প্রাণের ঐতিহ্য। বাংলার সেই মেজাজটি অটুট রেখেই মুম্বইবাসী ঘরের মেয়েদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, “আপনারা যেখানেই থাকুন, মনে রাখবেন এই বাংলা আপনাদেরই ঘর। যখনই বাংলাকে মনে পড়বে, এখানে আসতে ভুলবেন না!” মুখ্যমন্ত্রীর এই আদরের ডাকের আগেই অবশ্য আবেগের ছোঁয়াচ গাঢ় হয়েছে পাঁচ কন্যের মননে। সুস্মিতা, রানি, বিপাশারা বিগলিত, প্রিয় মমতাদির এমন আদরের স্পর্শে। সুস্মিতা তো বলেই দিলেন, “জীবনে যখন যা-ই করি না, আমি এমন একটি পরিবারের অংশ
(বাংলা) এটা ভাবলেই ভেতরে শক্তি পাই!” মুম্বই বিমানবন্দরে বোমাতঙ্কের ঝাপটা পেরিয়ে কলকাতায় আসা রানি বললেন, মমতাদির লড়াই কী ভাবে তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে। মুখ্যমন্ত্রীর সাহস, আত্মবিশ্বাসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মুম্বইয়ের বাঙালি ললনারা।
এ বার উদ্বোধনী আসরে এসেই বদলে যাওয়া কলকাতার চেহারায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া। সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে একই কথা বললেন, রানি। বিমানবন্দর থেকে সায়েন্স সিটি আসার পথে কলকাতার ‘জগমগাতে হুয়ে’ রূপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বলিউডের সফল নায়িকা।
কলকাতা তথা বাংলার বাহ্যিক ভোলবদলের লক্ষ্য যে আদতে মুখ্যমন্ত্রীর ব্র্যান্ড বেঙ্গল গড়ার অঙ্গ, সেটাও বোঝানোর চেষ্টা করে গিয়েছে চলচ্চিত্র উৎসবের আসর। মমতার তৈরি ‘বিশ্ব বাংলা’র লোগোটিও মঞ্চে চোখে পড়ছিল। এই বিশ্ববাংলার লক্ষ্য হিসেবেই বাংলাকে সব-কিছুতে এক নম্বর করে তোলার অঙ্গীকারটি তাঁর বক্তৃতায় পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “সব-কিছুতে সোনার যুগ ফিরিয়ে আনতে হবে। সিনেমাতেও সেটা করে দেখাতে হবে।” |
বলিউডের তিন কৃতী বঙ্গতনয়া রানী-বিপাশা-সুস্মিতার সঙ্গে টলিউডের কোয়েল।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের অন্তিম লগ্নে রবিবার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। ছবি: পিটিআই। |
এ বারের উৎসবের বিশেষ পুরস্কার পেল, বাংলাদেশের মোস্তফা সারওয়ার ফারুখির ‘টেলিভিশন’। ছবির নায়িকা নুসরত ইমরোজ তিসাও বাঙালির প্রিয় পাঁচকন্যের সঙ্গে ফ্রেম-বন্দি হলেন। ২০১৪-য় চলচ্চিত্র উৎসবের পরবর্তী আসরটি হবে প্রতিযোগিতামূলক। ফলে, তা ভাল ছবি তৈরির খিদে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে, আশা উদ্যোক্তাদের। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ২০১৪-র আসরের লোগোটি ইতিমধ্যেই বাছাই করা হয়েছে। লোগোর রূপকারকে পুরস্কৃতও করা হল। সমাপ্তি মুহূর্তের চমক, লেজার শোয়ের মাধ্যমে আবার দেখা হওয়ার আশ্বাসের পরে মঞ্চে দেখা গেল উৎসবের নতুন লোগোটিকেও।
২০১৩-র সমাপ্তির আসরটি থেকেই উৎসব সটান ঢুকে পড়ল ২০১৪-র ফ্রেমে।
|
বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক মুম্বইয়ে, দেরি রানীরও |
একটি পরিত্যক্ত ব্যাগকে ঘিরে রবিবার দুপুরে মুম্বই বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বোমাতঙ্কের জেরে মুম্বই থেকে বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। কলকাতায় চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার পথে আটকে পড়েন অভিনেত্রী রানী মুখোপাধ্যায়। তবে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। জেট এয়ারওয়েজের বিমানে কলকাতায় আসার কথা ছিল তাঁর। পরিবারের অন্যদের নিয়ে তিনি মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি বিমানবন্দরে পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ খুঁজে পান নিরাপত্তারক্ষীরা। শুরু হয় তল্লাশি। সাময়িক ভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয় বিমান পরিষেবা। ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালানোর পরে চলাচল শুরু হয়। এই বিভ্রাটে এক ঘণ্টা দেরিতে, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছন অভিনেত্রী এবং তাঁর সঙ্গীরা। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মুম্বইয়ে বোমাতঙ্কের খবর পাওয়া মাত্র এখানেও তল্লাশি শুরু হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে এ দিনই যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান কলকাতায় জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বিমানটি ১৪৪ জন যাত্রী নিয়ে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আধ ঘণ্টার মধ্যে সেটি কলকাতায় ফিরে আসে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই যাত্রীদের নিয়ে অন্য একটি বিমান মুম্বই রওনা দেয়। |