আজকালকার মেয়েরা তো চোখ মারে
বাবার পানের দোকান ছিল ঢাকা কালীবাড়ির মোড়ে।
দাদু এক সময় পরিচারকের ভূমিকায় একটা ছোট্ট রোল করেছিলেন দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে।
সে সব প্রায় দু’ দশক আগের কথা।
বাবার সেই ছোট্ট পানের দোকানটা আর নেই। একুশে পা দিয়ে সায়নী এখন বেশ কয়েকটি সিরিয়াল আর সিনেমা করে ফেলেছেন।
সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর নতুন ছবি। পরিচালক বিজয় মিত্রের ‘অন্তরাল’। যে ছবিতে তিনি এক টিন এজারের ভূমিকায়। যিনি হঠাৎ অন্তঃসত্ত্বা। ভুল বোঝার পরেও যে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারে যে, হঠাৎ কোনও মুহূর্তের অসতর্কতায় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাওয়া মানে এই নয় যে তাঁকে বিয়ে করে ফেলতে হবে। কাউকে না ভালবেসে বিয়ে করাটা অসম্ভব। তাতে অবিবাহিতা মায়ের তকমাটা লেগে গেলেও ক্ষতি নেই। আর এই সবই সায়নী বলেন ‘অন্তরাল’-এর ডাক্তার আন্টি দেবশ্রীকে। “সত্যি বলতে কী, আমার বাড়িতে এটা একটা বিশাল ব্যাপার যে আজকে আমি একটা ছবিতে দেবশ্রীদির সঙ্গে কাজ করেছি এমন এক চরিত্রে, যে কিনা কিছু কিছু দৃশ্যে দিদির চরিত্রের চিন্তাভাবনাকে একদম তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে তার নিজস্ব যুক্তি দিয়ে। আরও ভাল লাগছে যে এই রকমের একটা চরিত্রের প্রযোজক রাজ শান্তনু মৈত্র আমাকে নিয়ে করার কথা ভেবেছিলেন,” বলেন অভিনেত্রী।
সায়নী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের ছাত্রী। কিছু সিরিয়াল আর তার পর অমিত সেনের ‘নটবর নট আউট’য়ে অভিনয় সূত্রে আর পড়াশোনা চালাতে পারেননি। রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর দেখা ‘নটবর নট আউট’য়ের প্রিমিয়ারে। “আমি সত্যি সত্যি রাজদার সিনেমা দেখিনি। প্রথম দেখাতেই সেটা ওঁকে বলি। তার পরে এ-ও জানাই যে ওঁর সিনেমার তিনটে গান আমার ভাল লাগে। পরে বুঝতে পারি যে যে-তিনটে গানের উল্লেখ করেছিলাম তার মধ্যে একটা মাত্র গান রাজদার ছবিতে ছিল,” বলেই মুচকি হাসেন সায়নী।
তবু ডাক আসে রাজের সঙ্গে কাজ করার। ‘শত্রু’, ‘প্রলয়’, ‘জোশ’, ‘কানামাছি’ এই সব ক’টাতেই সায়নী কাজ করেন। “পরে শুনেছিলাম যে, রাজদা ‘শত্রু’তে নিয়েছিলেন আমার টমবয় ব্যাপারটা ওঁর পছন্দ হয়েছিল বলে। আমি রাজদার ‘বোঝে না সে বোঝে না’তে ‘কঠিন তোমাকে ছাড়া’ বলে একটা গানও গেয়েছি।”
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
কথা প্রসঙ্গে আবার উঠে আসে ‘অন্তরাল’-এর বিষয়। “আমি এমনও মেয়েদের জানি যারা কিনা পাঁচবার পর্যন্ত অ্যাবরশন করিয়েছে। পার্টিতে গিয়ে মদ খেয়ে টাল সামলাতে পারেনি। তার পর কী হয়েছে মনে নেই...এটা বাস্তবে ঘটে। আর এই বাস্তবটা সিনেমাতে দেখানোটা খুব জরুরি। শুধু মাত্র বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলে একটা চিত্রনাট্য লিখলেই তো হল না। বাস্তবে তো অনেক কিছু অন্য রকমও হচ্ছে। তবে একটা প্রাইভেট স্ক্রিনিংয়ে বাবা যখন আমার এই সিনেমায় অভিনয় দেখেছিলেন বেশ অদ্ভুতই লেগেছিল। আমার বয়স একুশ। ওই বিশাল একটা ‘প্রেগন্যান্ট বেলি’ নিয়ে অভিনয় করছি আর বাবা সেটা হলে বসে দেখছেন,” বলে চলেন তিনি।
আর এক বার অস্বস্তি হয়েছিল ‘অলীক সুখ’য়ের স্ক্রিনিংয়ের সময়। সেই ছবিতে তিনি সোহিনি সেনগুপ্তের বোনের ভূমিকায়। “ওখানেও আমাকে বিশ্বনাথের সঙ্গে পেয়ার করা হয়েছিল। জামাইবাবুর সঙ্গে প্রেম। কিন্তু এমন ভাবে দেখানো হয়েছিল যে মনে হয়নি কোনও অবৈধ কিছু হচ্ছে। গামছা পরে একটা খোলা পিঠের দৃশ্যও ছিল ওখানে। স্ক্রিনিংয়ে বাড়ির লোকের সামনে একটু লজ্জা হয়েছিল। তবে অভিনয় করার সময় কোনও অসুবিধেই হয়নি,” বলছেন সায়নী।
ঠিক সে ভাবেই অসুবিধে হয়নি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়-এর ‘আগুন’য়ে বার ডান্সারের চরিত্রে অভিনয় করতে। ওখানে সায়নী একটা আইটেম নম্বরও করেছেন। এ ছাড়াও আসছে বীরসা দাশগুপ্তের ‘গল্প হলেও সত্যি’ আর শৌভিক মিত্রের ‘পুনশ্চ’। তবে সায়নীর ইচ্ছে, টলিউডের মেয়েদের জন্য অন্য ধরনের চরিত্র লেখা হোক। “এক সময় তো বাংলা চলচ্চিত্রে বেশ জোরালো চরিত্র লেখা হত মেয়েদের জন্য। কিন্তু কই, আজকাল সেটা তো দেখি না। কেন টলিউড ‘কহানি’র মতো একটা সিনেমা তৈরি করল না? সোনাক্ষী সিংহকে তো দেখি কমার্শিয়াল ছবিতে বেশ চোখ মেরে সিটি দিয়ে অভিনয় করতে। সমসাময়িক বাংলা সিনেমাতে তো ওই ধরনের মেয়েদের দেখতে পাই না? কলকাতার ইয়ং মেয়েরা কি চোখ মারে না? দরকার পড়লে কি একটা কিক মারতে পারে না? পারে। আমিও পারি। কিন্তু পর্দাতে তা হয় না।” তাঁর মতে বাণিজ্যিক সিনেমাতে হিরোইন মানেই সেই হলুদ সালোয়ার, গলায় চেন আর ছোট্ট লাল টিপ পরে দূরে দাঁড়িয়ে দেখবে হিরোকে গুন্ডাদের পেটাতে। “আর আঁতেল সিনেমা হলে পাট পাট করে শাড়ি আর চোখে চশমা পরে হিরোইন রবীন্দ্রনাথ পড়বে। এই দুটোর মাঝে এক ধরনের মেয়ের দল আছে যারা অন্য রকম ভাবতে পারে। এ নিয়ে সিনেমা হওয়ার সময় এসেছে,” বলেই হেসে ফেলেন সায়নী।
গল্ফ গ্রিনের যে ফ্ল্যাটে এক সময় শুভশ্রী থাকতেন, সেটাই সায়নীর বর্তমান ঠিকানা। “আমাদের যাকে বলে ‘র্যাগস টু রিচেস স্টোরি।’ আমার মা সরকারি চাকরি করেন। দাদা আমার প্রেরণা। সেই পানের দোকানটা নেই। বাবার গলায় আজ বাপি লাহিড়ির মতো সোনার চেন....” বলেন সায়নী।
তাঁর পৃথিবীটা অবশ্য অন্য রকম। ভাড়াবাড়িতে একলা থাকেন। কলার টিউনে গালিবের গজল। সকালে উঠে নিজের পছন্দের গান শোনা। তার পর এক কাপ চা। আর এর মাঝে সিগারেটে একটা সুখটান।
আর তার পর অন্য রকমের কাজে অভিনয় করা। বা তা করার অপেক্ষা...।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.