হালদার + হালদার
বার বছর ছয় পর। মঞ্চে একসঙ্গে ফিরছেন গৌতম হালদার আর দেবশঙ্কর হালদার। ফিরে আসছেন দুই বন্ধু ব্রাত্য বসু আর দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাটকে।
গৌতম আর দেবেশ শেষ বার কাজ করেছিলেন ‘মিসড্ কল’-এ। সেই নাটকটি লিখেছিলেন দেবশঙ্কর নিজেই। একই সময় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘জাল’ উপন্যাস অবলম্বনে একটি নাটক করেছিলেন দু’জনে। তার পর আর কোনও নতুন প্রযোজনায় একসঙ্গে কাজ করেননি। ব্রাত্যর ‘আলতাফ গোমস্’ নাটকে মঞ্চে আবার একসঙ্গে দুজনেই। নির্দেশনায় দেবেশ। কানাঘুসো শোনা যাচ্ছে যে নাটকের বিষয় বিস্ফোরক। কিন্তু তা নিয়ে আপাতত মুখ খুলবেন না ওঁদের কেউই। বোমা যা ফাটার, তা ফাটবে মঞ্চেই! এই মুহূর্তে চলছে সলতে পাকানোর পালা।
কে এই আলতাফ গোমস্? না, কোনও একজন চরিত্র নন তিনি। দু’টি চরিত্র। আলতাফ হুসেন আর পিটার গোমস্। আলতাফ এক ডাকসাইটে পুলিশ অফিসার। পিটার এক মিডিয়া হাউসের মালিক। আলতাফ আর পিটারকে নিয়েই লেখা এই নাটক। দু’জন দুই ভিন্ন শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। দেবশঙ্কর থাকছেন আলতাফের ভূমিকায়। পিটারের চরিত্রে অভিনয় করছেন গৌতম। নাটকের বক্তব্য নিয়ে ব্রাত্যকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, “চার দিনে লিখেছিলাম ‘আলতাফ দারোগা’ নামে একটা ফিকশনাল নাটক। সেটাকে ভেঙে ‘আলতাফ গোমস্’ তৈরি হচ্ছে। নাটকের মধ্য দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার কিছু সত্য বেরিয়ে আসবে।”
গৌতম হালদার ও দেবশঙ্কর হালদার।
নিজে যখন নাটকটা লিখলেন, তখন তা পরিচালনা করার লোভ সামলালেন কী করে? “আমি জানতাম এই নাটকটা দেবেশের হাতে পড়লে একটা অন্য চেহারা নেবে। আমি মনে করি যে সুমন (মুখোপাধ্যায়) আর দেবেশ আমার নাটকের প্রতি সত্যিকারের সুবিচার করেছে। আমি অনেকের জন্যই লিখেছি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ, এখন বুঝতে পারি, পরিচালকই নন। বছরে আমি তিন থেকে চারটে নাটক লিখি। তার মধ্যে একটা-দু’টো নিজে পরিচালনা করি,” বলছেন ব্রাত্য। সাম্প্রতিক কালে দেবশঙ্কর, গৌতম আর সুপ্রিয় দত্ত-র অভিনয় ব্রাত্যর ভাল লাগে। “এই নাটকের জন্য দেবশঙ্কর আর গৌতমের জুটিটা দেবেশ পছন্দ করেছিল। আমি তাতে মত দিই,” জানালেন নাট্যকার।
নাটকের সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেবেশ জানাচ্ছেন, “‘উইঙ্কল-টুইঙ্কল’ যেমন দু’টো সময়ের সংঘাত ছিল, এখানেও একটা সংঘাত রয়েছে। সেই সংঘাতের মধ্যে কোথাও একটা অবচেতনের জেহাদ আছে কোনও ক্ষমতার বিরুদ্ধে... এই নাটকে আমরা সরাসরি কিছু কথা বলব যাতে মানুষ তাঁদের মতো করে বুঝে নিতে পারবেন এই সময়টাকে। হয়তো নিজেদের সঙ্গে মেলাতেও পারবেন কিছু চরিত্রকে। মিলিয়ে মজা পাবেন কারণ নাটকটি মূলত মজা করেই করা। আবার রেগেও যেতে পারেন। খুব নির্মম, নির্মোহে বাংলার দর্শক এ নাটক দেখবেন না বলেই বিশ্বাস করি।”
নাটকের মূল বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও দেবেশ বলছেন যে তাঁর অভিধানে বিতর্কিত বলে কোনও বিষয় নেই। “শিল্পকে সবাই ভাল বললে সেখানে কোনও গণ্ডগোল থাকে। যদি প্রথাগত গতে ভেসে যেতাম, তা হলে ‘শান্তি কল্যাণ’ হয়ে থাকত। কিন্তু সেটা হয়নি। থিয়েটারের ভাষা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছি।”
দেবেশ অবশ্য প্রথমে পিটার গোমসের চরিত্রটা ব্রাত্যকেই করতে বলেছিলেন। “কিন্তু আমি জানতাম যে ওই চরিত্রে গৌতমের কোনও বিকল্প হয় না,” বলছেন নাট্যকার। ব্রাত্য যখন নাটকটি পড়ে শোনান, তখন তা শুনে অত্যন্ত নাটকীয় মনে হয় গৌতমের। “শেষে ব্রাত্য বলে যে পিটারের চরিত্রটি যদি আমি না করি, তা হলে ও নাটকটি করবে না। ব্রাত্যর লেখা বাংলা নাটকের চলতি ধরন থেকে আলাদা। কোনও রাখঢাক থাকে না,” জানান গৌতম। আরও বলেন, “দেবেশ খুব ইন্টারেস্টিং এক পরিচালক। ভাঙচুর করার প্রবণতা রয়েছে ওর মধ্যে। সেট-মিউজিক-প্রেজেন্টেশন সব কিছুতেই ও কোনও অর্থেই প্রথাগত নয়।”
ব্রাত্যর নাটক পড়াটা দেবশঙ্করের অভ্যেসের মধ্যেই পড়ে। “যে নাটক আমি করিনি, সেটাও আমি পড়েছি। ওর লেখার ভঙ্গিমাটা বেশ আকর্ষণীয়,” বলছেন দেবশঙ্কর। তার পর মজা করেই বলেন যে ব্রাত্যর লেখা স্ক্রিপ্ট পড়ে সেটা করতে সাহস করার অভিজ্ঞতাটা অনেক ক্ষেত্রে হঠাৎ বাইকে চেপে বসার মতো। “প্রায় বছর পঁচিশ আগে একবার গৌতম আমাকে একটা বাইকে চাপিয়ে বলেছিল ‘তুই চালাবি’। কেন যে চেপে বসেছিলাম তা জানি না। গতির সওয়ার হওয়ার জন্য একটা টান অনুভব করে? পড়ে যাব, অ্যাক্সিডেন্ট করব, আনন্দ পাব - বাইকে সওয়ার হয়ে এই সব চিন্তা মাঝেমধ্যে মাথায় আসে যায়। ব্রাত্যর স্ক্রিপ্ট পড়ে অভিনয় করার অনুভূতিটাও একই রকম,” জানান দেবশঙ্কর।
একসঙ্গে মঞ্চে নতুন প্রযোজনাতে ফিরে আসতে এত সময় লাগল কেন? “দেবশঙ্কর অনেকগুলো দলে অভিনয় করে। তাই সব সময় ডেট মিলিয়ে শো-টা করা যায় না। তাই হয়তো...,” বলছেন গৌতম।
তবে একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাই আলাদা। “ও চোখের পাতা ফেললে আমি মঞ্চে টের পাই। দেবশঙ্কর খুব বড় অভিনেতা,” জানাচ্ছেন গৌতম। দেবশঙ্কর তো বলছেন যে গৌতম এক অর্থে তাঁর শিক্ষকও। “নান্দীকারে ও থাকাকালীন কত কাজ করেছি একসঙ্গে! আমাদের দু’জনের মনন আর মেধার মধ্যে মিল রয়েছে।”
ব্রাত্য বসু
আমি অনেকের জন্যই লিখেছি। এখন বুঝতে পারি
তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডিরেক্টর-ই নয়।
সুমন আর দেবেশ ব্যতিক্রম।
 
দেবেশ চট্টোপাধ্যায় শিলাজিৎ
শিল্পকে সবাই ভাল বললে, সেখানে
গন্ডগোল থাকে... ‘আলতাফ গোমস্’
দেখে দেখে কেউ মজা পাবেন, কেউ
রেগেও যেতে পারেন।


আর কম্পিটিশন? সেটা হয় না? দু’জন তুখড় অভিনেতার মধ্যে টক্কর?
এ প্রশ্নের জবাবে গৌতম বলেন, “প্রথম দিন থেকে জানি যে মুহূর্তে আমি কম্পিটিশনে নামব তখন আমার অভিনয় ক্ষমতা মরে যাবে। ইন্টার্যাকশনটা জরুরি। সিরিয়াস ফুটবল খেললে কি কেউ নিজের দলের মধ্যে কম্পিটিশন করে? তখন একটাই চিন্তা মাথায় ঘোরে কী করে বলটা নিয়ে খেলব।”
পরিচালক বলছেন কম্পিটিশন নয়, এই দুই অভিনেতা মঞ্চে একসঙ্গে থাকা মানে দু’টো শক্তির আদানপ্রদান ঘটবে। “স্টেজে থাকলে দু’জনেই এনার্জি নিয়ে আসেন তাদের অভিনয়ের মাধ্যমে। সেটার রিঅ্যাকশনে একটা বেশ ইন্টারেস্টিং জায়গা তৈরি হয়,” বলছেন পরিচালক। ব্রাত্যর চোখে দেবশঙ্কর হলেন প্যাশনেট অভিনেতা। “ওর মতো প্যাশন, বুদ্ধি আর স্কিলের কম্বিনেশন খুব কম অভিনেতার মধ্যে আছে। আর গৌতম আনপ্রেডিক্টেবল অ্যাক্টর। ও স্টেজে ম্যাজিক ঘটাতে পারে,” বলছেন নাট্যকার।
এই নাটকে আরও দু’টো চমক আছে। এই প্রথম শিলাজিৎ কোনও নাটকে গান গাইবেন। এর আগে দেবেশের নাটকেই সুর করেছিলেন। বলছেন শিলাজিৎ, “নাটকে সাধারণত যশ এবং অর্থ দু’টোই পাওয়া যায় না। এখানে দু’টোই পাব। গানগুলো ব্রাত্য আমাকে দিয়ে গাওয়ানো হবে বলেই লিখেছিল। সুর দিয়ে নিজেই তিনটে গাইতে চাইনি। কিন্তু দেবেশ আর ব্রাত্য ঠিক করে যে আমাকেই তিনটে গান গাইতে হবে।”
শেষ চমকটা আবার অভিনেতাদের নিয়েই। বলছেন দেবেশ, “নান্দীকারে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকাকালীন যখন প্রথম ‘ফুটবল’ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়, তখন ওই নাটকে হরির চরিত্রে অভিনয় করতেন রণজিৎ চক্রবর্তী। পরবর্তী কালে ওই একই চরিত্রে অভিনয় করেন গৌতম। দুই হরি এ বার আমাদের এই নাটকে একসঙ্গে। তার সঙ্গে আছে সুজন মুখোপাধ্যায়।”
৩ ডিসেম্বর প্রথম শো। অকাদেমির মঞ্চে কি আবার বিস্ফোরণ ঘটবে?

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.