রাজ্যে পর্যটনের মানচিত্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে কোনও রকম ঢিলেমিতে নারাজ রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে, তা দ্রুত শেষ করতে চায় পর্যটন দফতর। সম্প্রতি কলকাতা শহরের দর্শনীয় এবং ঐতিহ্যশালী কয়েকটি ভবনের সৌন্দর্যায়ন করতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা। এই প্রকল্পের কাজে তাঁদের পাশে রয়েছে রাজ্যের পর্যটন দফতর।
প্রসঙ্গত, গত ২০০৫-’০৬ সালে ওই খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ সময়মতো ব্যয় না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছিল পর্যটন দফতর। তার কারণে প্রায় দু’বছর যাবৎ ওই খাতে আর্থিক সহায়তা বন্ধ ছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নে নেমেছে তৃণমূল সরকার। পর্যটন দফতরের এক কর্তার কথায়, “রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ইচ্ছা রূপায়ণ করতেই শহরের একাধিক ভবন ও প্রতিষ্ঠানের শ্রী বৃদ্ধি করার কাজ শুরু হচ্ছে।”
শহরের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য ও মান বাড়াতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর অন্যতম অঙ্গ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে আলো ও ধ্বনির প্রকল্প। কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই জমজমাট অনুষ্ঠান ফের দেখতে পাবেন শহরবাসী ও পর্যটকেরা। খুব শীঘ্রই কলকাতা পুরসভা ওই প্রকল্প রূপায়ণের কাজে হাত দেবে। এর জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তার অংশটুকু রাজ্যের পর্যটন দফতরের হাতে চলে এসেছে। নতুন কলেবরে কী ভাবে গড়ে উঠবে ওই প্রকল্প, তার নকশাও ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলেছে রাইট্স সংস্থা। রাজ্য সরকারের তৈরি সেই তালিকায় রয়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, টাউন হল, সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল এবং নাখোদা মসজিদও।
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় এ নিয়ে এক বৈঠক হয়। হাজির ছিলেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ এবং রাজ্য পর্যটন দফতরের অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায়-সহ পুরসভা ও পর্যটন দফতরের একাধিক আধিকারিক। পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, টাউন হল, সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রাল ও নাখোদা মসজিদকে আলোয় সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে কলকাতা পুর-প্রশাসন। কলকাতার ঐতিহ্যশালী এই তিন ভবনকে সাজাতে লাগবে দেড় কোটি টাকার কিছু বেশি। এই খাতে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। খুব শীঘ্রই সেই টাকা কলকাতা পুরসভাকে বরাদ্দ করবে পর্যটন দফতর।
কী ভাবে এই তিন ঐতিহ্যবাহী ভবন আলোকিত করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। ওই তিনটি ভবনের প্রাথমিক সমীক্ষা-পর্বও শেষ। পুরসভা সূত্রের খবর, এ বছর টাউন হলের ২০০ বছর পূর্ণ হল। ওই হলকে সাজানোর জন্য প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ৪৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে সেন্ট পল্স গির্জার জন্য। আর চিৎপুরের নাখোদা মসজিদ আলোকিত করে তুলতে খরচ করা হবে ৩৮ লক্ষ টাকা।
দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরের দর্শনীয় স্থানগুলিকে আলোয় সাজাতে ক’বছর ধরেই অর্থ বরাদ্দ করছে কেন্দ্রীয় সরকার। বছর কয়েক আগেই কলকাতা শহরের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই খাতে ৮০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্র। বাকিটা দেয় রাজ্য। ইতিমধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ ভবন আলোকিত করতে খরচ হয়েছে যথাক্রমে ৪০ লক্ষ, ৫৪ লক্ষ ৪১ হাজার এবং প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। আলোকিত করা হয়েছে এপিসি রোডের পুলিশ-জাদুঘর। প্রায় এক-কোটি টাকায় শহিদ মিনারও আলোকিত করেছে পূর্ত দফতর। দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি আলোকিত করার প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ। ওই মন্দিরের আশপাশ আলো দিয়ে আরও সাজানো হবে।
রাজ্যের পর্যটন-অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আলো-ধ্বনির অনুষ্ঠানটি ফের চালু করার লক্ষ্যে রাইট্স একটি সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষায় তাতে দেখা যাচ্ছে, দু’টি ভাষায় ওই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে খরচ হবে ২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। তিনটি ভাষায় করতে খরচ হবে ৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। আর কেন্দ্র এর জন্য বরাদ্দ করেছে ১ কোটি ৪ লক্ষ।
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, বাকি টাকার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হবে।
ওই সব কাজের পাশাপাশি নিমতলা, গড়িয়া, কাশীপুর, গড়িয়া এবং রামকৃষ্ণ মহাশ্মশানের পরিকাঠামো আরও বাড়ানো হবে। আলোকিত করা হবে ওই সব এলাকা। পার্ক স্ট্রিট গোরস্থানেও আলোর কাজ করার ভাবনা চলছে।
|