এক সময় মুর্শিদাবাদ জেলা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পীঠস্থান ছিল। ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুগত কারণে এখানে প্রচুর লতাপাতা জন্মাত। তার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ‘ভেষজ’ গাছগাছড়া মুর্শিদাবাদ জেলায় পাওয়া যেত। এ কারণে এক সময় এ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বহু বৈদ্য ও কবিরাজ সুনামের সঙ্গে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা চালিয়ে গিয়েছেন। বহরমপুর শহরের সৈয়দাবাদ এলাকার গঙ্গাধর কবিরাজের খ্যাতি দূর বিস্তৃত ছিল। কিন্তু এই কবিরাজদের মৃত্যুর পর আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ভাটা আসে।
তাই প্রচারের অভাবে ভেষজগুলি অবহেলায় পড়ে থাকতে শুরু করে। ইসলামপুর, ভগবানগেলা, নওদা এলাকায় প্রচুর পরিমানে আলকুশী, সর্পগন্ধা, অশ্বগন্ধা, গাব, যষ্টিমধু অনন্তমূল, গুলঞ্চ, কন্টিকারী, কালমেঘ পাওয়া যেত। সর্বাঙ্গপুর, আমতলা, হরিহরপাড়া এলাকায় পাথরকুচি অর্থাৎ লোহাচুর, গনিয়ারী, পিপুল, আমআদা, কুড়ছি, নিশিন্দা, আশশ্যাওড়া গাছ দেখা যায়। জঙ্গিপুর থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত এলাকায় কুল, অর্জুন, চিরতা, পিয়াল, বাঁদর লাঠি (অমলতমাস), আকন্দ, শালপর্ণী, শ্যামলতা, আমরুল, কুকুরশোঁকা, তেলাকুচা চোখে পড়ে। দৌলতাবাদ, লালবাগ, জিয়াগঞ্জ এলাকায় সোনাছাল, রামবাসক, জয়ন্তী, পানছিটকি, সোমরাজ, ঘৃতকুমারী, বা ঘৃতকাঞ্চন দেখা যায়। কিন্তু নাগরিক সমাজের চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। সঙ্গে ভেষজের উপকারিতা নিয়ে মানুষের আগ্রহও কমে গিয়েছে। পারুল, নিশিন্দা, গনিয়ারী, লোধ এখন আর চোখে পড়ে না বললেই চলে। যকৃৎ ও কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য বেতো শাক, আমাশার জন্য থানকুনি, বদহজমের জন্য পুদিনা শাক, ঘুমের জন্য সুষনি শাক, ত্বকের পরিচর্যার জন্য ঘৃতকুমারী, রক্তাল্পতার জন্য কুলেখাড়াশাক মুর্শিদাবাদ জেলায় জলা বা নীচু জায়গায় আর আগের মতো দেখা যায় না দুর্মূল্য দুষ্প্রপ্য ভেষজ গাছগুলি রক্ষা করার জন্য সরকারি, বা বেসরকারি কোনও উদ্যোগ নেই। এখনও জেলার কোথাও গড়ে উঠল না ভেষজ বাগান। মূল্যবান লতাপাতা ও গাছগাছড়াগুলি যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মশালা ও সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা জরুরি।
সাধন দাস, ভৈরবটোলা
|
জয়নগরের মোয়া বাঁচাতে মোয়া শিল্পী, মোয়া ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় বিধায়ক পর্যন্ত সবাই জোটবদ্ধ হয়েছেন। কৃষ্ণনগরও একত্রিত হয়েছে বিখ্যাত সরভাজা, সরপুরিয়া ও মৃৎ শিল্পের জন্য। ওই শিল্পগুলির সঙ্গে কৃষ্ণনগর, ঘুর্ণি ও লাগোয়া এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম ওই বিখ্যাত শিল্পের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকছে। ফলে ওই শিল্পগুলিও অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে। ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী, ব্যবসায়ী, স্থানীয় বিধায়ক, পুরপ্রধান থেকে শুরু করে কৃষ্ণনগারিক পর্যন্ত সবাই জয়নগরের মতো জোটবদ্ধ হলে কি ওই শিল্পগুলি বাঁচাতে পারি না?
নিরঞ্জন পাল, কৃষ্ণনগর |