|
|
|
|
অটোর দৌরাত্ম্য লাগামহীন, ঝুঁকির যাত্রা রেলনগরীতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
প্রতিদিনের যাতায়াতে অন্যতম ভরসা অটো। অথচ বিধি ভেঙে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে সেই অটোই হয়ে উঠেছে পথের ত্রাস। শুধু বাড়তি যাত্রী নয়, রেলশহর খড়্গপুরে বেশিরভাগ অটোর গতিও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। তা থেকে অবশ্য শিক্ষা নেন না অটো চালকেরা। অভিযোগ, সব জেনে নির্বিকার পুলিশ। আর অটো সংগঠনগুলি এর দায় চাপিয়েছে প্রশাসনের উপরে।
রেলনগরী খড়্গপুরে সত্তরের দশকে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ছিল টাউন বাস। সে সময় শহরে কোনও সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড ছিল না। পরে রেল স্টেশনের মালগুদাম সংলগ্ন এলাকায় বাসস্ট্যান্ড গড়ে ওঠে। ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় টাউন বাসের পরিষেবা। সেই সময় রিকশাই ছিল শহরবাসীর ভরসা। বিকল্প যানের দাবিও উঠছিল। সেই অনুযায়ী ২০০০ সালের পর থেকে একের পর এক অটোর রুট পারমিট দিতে শুরু করে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। এই মুহূর্তে খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন রুটে ৩৫০টির বেশি অটো চলাচল করে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র বাসস্ট্যান্ড থেকে মালঞ্চ ও সালুয়া রুটে অটো চললেও এখন নিমপুরা, আরামবাটি, জকপুর, চৌরঙ্গি, কলাইকুণ্ডা-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা অটোর রুটে আবদ্ধ। এর মধ্যে মালঞ্চ ও সালুয়া সব থেকে লাভজনক রুট বলে পরিচিত।
অভিযোগ, প্রায় সব রুটেই প্রশাসনিক নিয়ম না মেনেই অটো চলছে। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা থেকে বেসামাল গতি, কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলস্বরূপ বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত ১৮ অক্টোবর অতিরিক্ত লোক তোলার মাসুল প্রাণ দিয়ে গুনতে হয়েছিল অটোর এক প্রৌঢ় যাত্রীকে। জখম হয়েছিলেন চার জন। মাস পাঁচেক আগেও পুরাতনবাজারের কাছে অটো উল্টে গুরুতর জখম হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। |
 |
বিধি ভেঙে যাত্রী বোঝাই অটোয়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এছাড়া ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। তবু হুঁশ ফেরেনি অটো চালকদের। পুলিশ-প্রশাসনও অটোচালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে সে ভাবে উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ। আরামবাটির কলেজ ছাত্রী ফাল্গুনী সরেন, তালবাগিচার বাসিন্দা নিতুন দে বলেন, “অতিরিক্ত লাভের আশায় মাঝরাস্তা থেকে নিয়ম না মেনেই যাত্রী তোলে অটোচালকেরা। কিছু বলতে গেলে ভেতরে বসে থাকা যাত্রীদের নেমে যেতেও বলেন কেউ কেউ। পুলিশকে কখনও ধরপাকড় করতেও দেখিনা। ঝুঁকি নিয়েই অটোয় যাতায়াত করতে হয়।”
নিয়ম অনুযায়ী, একটি অটোয় ১০ জনের বেশি ওঠার কথা নয়। এ ছাড়া চালকের ডান দিকে যাত্রী বসার নিয়ম নেই। কোনও নিয়মই মানা হয় না। অভিযোগ, বেশির ভাগ অটোতেই ১৩ থেকে ১৪ জন যাত্রী ওঠেন। সালুয়া ও মালঞ্চ রুটে এই প্রবণতা সব থেকে বেশি। সমস্যা মানছে অটো সংগঠনগুলিও। সিটু পরিচালিত অটো রিকশা সংগঠনের সভাপতি অনিল দাস বলেন, “আমাদের ইউনিয়নের তরফে একাধিকবার ডানদিকে যাত্রী না নেওয়া বা অতিরিক্ত যাত্রী না নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে চালকেরা অনেকেই তা মানেন না। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।” একই সঙ্গে অনিলবাবু বলেন, “আমরাও অনেক সময় ইউনিয়নের তরফে অভিযান চালাই। এ বার আবার সেটা শুরু করব।”
প্রশাসন আবার যাত্রী সচেতনতার কথা বলছে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, অনেক সময়ই যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অটো চালকেরা বাড়তি লোক তোলেন। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের বক্তব্য, চাহিদার তুলনায় অটোর সংখ্যা কম হওয়াতেই যাবতীয় সমস্যা। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, গত বছরই বেশ কিছু অটো রুটের ছাড়পত্র দিয়েছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। তবে অটো রিকশা সংগঠনের সভাপতি অনিলবাবুর দাবি, “জকপুরের মতো অলাভজনক রুটে অটো বেড়েছে। কিন্তু মালঞ্চ বা সালুয়ার মতো রুটে সে ভাবে গাড়ি বাড়েনি।” কী বলছে প্রশাসন?
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাস, রাস্তার পরিস্থিতি সব খতিয়ে দেখে আবেদন অনুযায়ী নতুন অটো রুটের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে আরটিও যে অভিযান চালায়, তাতে কর্মীর অভাব থাকায় সমস্যা বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা দায় চাপিয়েছেন পুলিশের উপর। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর অবশ্য বলেন, “আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও অভিযোগ নেই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তবে আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
 |
|
|