বধূ অপহরণের চেষ্টা, বিচারক ধৃত ডোমজুড়ে
তিনি এক জন বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। কাজ করেন বিহারের মোতিহারি জেলা আদালতে। দল বেঁধে পারিবারিক বন্ধুর বৌমাকে ডোমজুড়ের বাপের বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে এসে গ্রেফতার হলেন হাওড়া পুলিশের হাতে। পুলিশ জানায়, ধৃত বিচারকের নাম বিজয়কিশোর চৌধুরী। ভয় দেখানো, খুনের হুমকি এবং অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আরও ন’জনকে গ্রেফতার করা হয় একই অভিযোগে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ডোমজুড়ের নিবড়া পঞ্চাননতলায়। ধৃতদের মধ্যে অভিযোগকারিণী গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িও আছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, শুক্রবার ধৃতদের হাওড়া জেলা আদালতে তোলা হয়। আদালত ওই বিচারক-সহ ন’জনকে জামিনে মুক্তি দেয়। জামিন হয়নি শুধু অভিযোগকারিণীর স্বামীর।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ জানায়, বছর সাতেক আগে নিবড়া পঞ্চাননতলার বাসিন্দা, পেশায় নিরাপত্তারক্ষী বিশ্বনাথ মাহাতোর একমাত্র মেয়ে মনীষার বিয়ে হয় ঝাড়খণ্ড বিকাশনগরের বাসিন্দা রাজীব মণ্ডলের সঙ্গে। রাজীবের বাবা কেন্দ্রীয় সরকারের পদস্থ অফিসার। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য শ্বশুরবাড়িতে মনীষার উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু হয়। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মনীষার বাপের বাড়ি থেকে জামাইয়ের হাতে কোনও বার ২০ হাজার, কোনও বার ২৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। একটি ছেলে এবং একটি মেয়েও হয় মনীষার। অভিযোগ, তার পরেও অত্যাচার বন্ধ হয়নি। বরং আর্থিক চাহিদার সঙ্গে অত্যাচার উত্তরোত্তর বেড়েই গিয়েছে।
মনীষার বাবা বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমার এক বোন ঝাড়খণ্ড থেকে এই বিয়ের সম্বন্ধ করেছিল। আমাকে জানানো হয়েছিল, ছেলে রেলে চাকরি করে। মাসে অনেক টাকা আয়। পরে জানতে পারি, জামাই কিছুই করে না। বেকার। বাবার টাকায় খায়।” বিশ্বনাথবাবু জানান, দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করতে না-পেরে মাস সাতেক আগে মনীষা ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁদের কাছে চলে আসেন।
মনীষার দাদা ধীরাজ মাহাতো জানান, তাঁরা বোনকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে চাইছিলেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার হঠাৎই একটি গাড়ি করে মনীষার স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি এক দল লোক নিয়ে নিবড়ার বাড়িতে চড়াও হন। গোটা দলটির নেতৃত্ব দেন বিজয়কিশোর। তিনি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) বা মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বলে নিজের পরিচয় দেন। পরে জানা যায়, তিনি মনীষার শ্বশুর ফুলেনা মণ্ডলের পারিবারিক বন্ধু। ধীরাজবাবু বলেন, “নিজের পদাধিকারের কথা বলে ওই বিচারক আমাদের জেল খাটানোর ভয় দেখান। খুনের হুমকি দেন। আমরা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও এলাকার লোকজন রুখে দাঁড়ান। সকলে থানায় গিয়ে মীমাংসা করার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওঁরা থানায় যেতে চাননি।”
এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিজয়কিশোরকে থানায় গিয়ে মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়ায় ওই বিচারক বলতে থাকেন, তিনি থানায় যান না। থানাই তাঁর কাছে আসে। কারণ, তিনি বিচারক। তাঁর হম্বিতম্বি শুনে লোকজন মারমুখী হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। মনীষার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ ওই বিচারক-সহ ১০ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে গৃহবধূ নির্যাতন, খুনের চেষ্টা এবং অপহরণের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” হাওড়া আদালতের সহকারী সরকারি আইনজীবী মিন্টু প্রামাণিক বলেন, “আদালত অভিযুক্ত বিচারক-সহ ন’জনকে অন্তর্বর্তিকালীন জামিনে মুক্তি দিয়েছে। শুধু অভিযোগকারিণীর স্বামীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তাঁকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.