মধ্যপ্রদেশ দ্বিখণ্ডিত করিয়া ২০০০ সালে যখন ছত্তীসগঢ় রাজ্যটি তৈরি হইয়াছিল, তাহার পশ্চাতে মূল দাবিটি ছিল দেশের দরিদ্রতম জনবসতির অঞ্চলে সরাসরি উন্নয়ন ও স্বক্ষমতার স্বাদ পৌঁছাইয়া দেওয়া। মহানদী, গোদাবরী, নর্মদা দিয়া তাহার পর অনেক জল বহিয়া গিয়াছে। জনজাতি-অধ্যুষিত দরিদ্র রাজ্যটিতে মাওবাদী হিংসার স্রোতও তীব্র গতিতে বহিয়াছে। ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচন প্রমাণ করিল, সেখানে ইত্যবসরে অন্য একটি স্রোতও তৈরি হইয়াছে, নিজের সমাজ-রাজনীতিতে নিজে আসিয়া অংশ লইবার স্রোত। দলে দলে গরিব মানুষ গ্রামগঞ্জ হইতে বাধাসঙ্কুল দুর্গম পথ পার হইয়া আসিয়া দলে দলে ভোট দিলেন, মাওবাদী হুমকি অগ্রাহ্য করিয়া গণতন্ত্রের পথে তাঁহাদের আস্থা জানাইলেন। নির্বাচন কমিশন নিশ্চয়ই তাঁহাদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ ব্যবস্থা পরিচালনার ব্যবস্থা করিয়াছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল কৃতিত্ব ছত্তীসগঢ়ের মানুষেরই, যাঁহারা প্রাণভয় তুচ্ছ করিয়া ভোটের লাইনে দাঁড়াইবার সাহস দেখাইলেন। মূল কৃতিত্ব কাহার, তাহার পাশাপাশি মূল গৌরব কাহার তাহাও বলিতে হয়। মূল গৌরব অবশ্যই দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার। মাওবাদের ধ্বংসাত্মক নৈরাজ্য ও হিংসার পথে নহে, বরং গণতন্ত্র-ব্যবস্থার মধ্যেই যে পরিবর্তনের আশা, দিনবদলের ভরসা, তাহা আরও এক বার প্রমাণিত হইল। মানুষ যতই পশ্চাৎপদ হউন, সাধারণ বুদ্ধি দিয়াই যে এই মৌলিক সত্যটি কখনও না কখনও জানা যায়, প্রমাণিত হইল তাহাও।
কৃতিত্ব ও গৌরবের ভাগিদার রাজ্য সরকারও। গত কয়েক বৎসরে বিভিন্ন কৃতিত্বের কারণে ছত্তীসগঢ়ের সরকারের প্রসঙ্গ সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠিয়া আসিয়াছে। দেশের যে যে রাজ্যে গণবণ্টন ব্যবস্থা প্রশংসার্হ সাফল্য অর্জন করিয়াছে, তাহার মধ্যে ছত্তীসগঢ় অগ্রণী। দেশের মধ্যে যে রাজ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার সর্বাপেক্ষা বাড়িয়াছে, তাহা ছত্তীসগঢ়। এমনকী বিরোধী দল কংগ্রেসও স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেছে যে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারে ২ টাকা কেজি দরে চাল পৌঁছাইয়া দেওয়ায় বর্তমান সরকার বিশেষ সফল। বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়াছে, ন্যায্য দরে ফসল বিক্রির সুযোগ বাড়িয়াছে। কেবল জনজাতি-প্রধান অঞ্চলগুলিতেই ১৭০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি হইয়াছে। বিশেষ কোচিং-এর ফলে বাস্তার অঞ্চলের দেড় শতাধিক জনজাতীয় ছাত্রছাত্রী সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হইয়াছে, যাহা এই রাজ্যে অদৃষ্টপূর্ব। সরকারি উদ্যোগ ও প্রয়াস দিয়া যে প্রতিকূলতম পরিস্থিতিতেও মানুষকে সুস্থ রাজনীতির অঙ্গনে টানিয়া আনা যায়, দেখাইয়া দিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বহু প্রার্থী অংশ লইয়াছিলেন, যাহাও সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ। সুস্থ রাজনীতি দেখা গেল নির্বাচনী প্রচারেও। সব দলই সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে প্রখর নজর দিতে বাধ্য থাকিল। বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস বিনামূল্যে চাল ও বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি কিংবা উন্নততর শিক্ষা-পরিকাঠামো, বেকার-সমস্যার দ্রুততর সমাধান ইত্যাদি আলোচনার বাহিরে পা রাখিতে পারিল না। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের প্রশাসনিক সাফল্য কেবল তাহাদের নিজেদের দলীয় ভাগ্যই উজ্জ্বল করে নাই, সুস্থ জনমুখী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজেও সদর্থক ভূমিকা পালন করিয়াছে। পারস্পরিক খেয়োখেয়ি ও ব্যক্তিগত কুৎসার বাহিরে, সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতিযোগিতাতেই নির্বাচন-পর্ব নিবদ্ধ থাকিয়াছে। |