তোয়াক্কা নেই কোনও নিয়মের। নেই পর্যাপ্ত পুলিশ। গোটা রাস্তা জুড়েই ঠেলা আর পথচলতি মানুষের ভিড়। বাস, ট্যাক্সি ও বিভিন্ন যানবাহনের ধীর গতি। সঙ্গে হর্নের লাগাতার আওয়াজ আর তীব্র যানজট। এই চিত্র কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোড থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি দিন বিকেলের পর অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই যানজটে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকতে হয় তাঁদের।
কলকাতার ফেয়ারলি ঘাট পার হওয়ার পর থেকেই স্ট্র্যান্ড রোডের যানজট শুরু হয়। তবে তা বেশি হয় চক্ররেলের বিবাদী বাগ স্টেশনের কাছ থেকে। এখানেই রয়েছে একটি ক্রসিং। রয়েছেন হাতে গোনা দু’জন ট্রাফিক পুলিশকর্মী। আর এই অংশ থেকেই শুরু হয় নিয়ম ভাঙার পালা।
চিত্রটি ঠিক কেমন? |
যেখান থেকে খুশি যাত্রীরা বাসে উঠছেন। বাসে যাত্রী কম হলে চালক বাস থামিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষাও করছেন। তখনই পিছনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন যানবাহন। পিছনের গাড়ির তীব্র হর্নের আওয়াজেও কোনও হেলদোল নেই। নিয়ম ভাঙা সত্ত্বেও পুলিশ কার্যত কিছুই করছে না বলে অভিযোগ।
কিছুটা দূরেই এনসি দত্ত সরণি, ক্যানিং স্ট্রিট মোড় ও বড়বাজারের মোড়ে রয়েছেন এক জন করে পুলিশকর্মী। তাঁরা গাড়ি এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু তত ক্ষণে গাড়ির লম্বা লাইন পড়েছে। যে সমস্ত বাস ভিড়ে ঠাসা সেগুলি আবার ‘ওভারটেক’ করতে ব্যস্ত। এতে আরও বিপত্তি। কোনও কোনও গাড়ি প্রায় আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছে। ফল আরও চরম যানজট। পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় বাসের কনডাক্টররাই জট ছাড়ানোর দায়িত্ব পালন করতে পথে
নেমে পড়েছেন।
এক যাত্রী শুভঙ্কর মান্নার অভিযোগ, “যাত্রী কম থাকলেই বাস যেখানে ইচ্ছা দাঁড়িয়ে পড়ে। যাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলাও হয়। তবুও কিছুই পাল্টায় না। পুলিশও প্রায় দর্শকের ভূমিকায় থাকে।” |
পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, সাধারণ মানুষও যেমন ভাবে খুশি রাস্তা পার হন। যে কারণে আরও যানজট হয়। ব্রেবোর্ন রোডের ব্রিজের নীচের পথ পার হওয়ার পরেই ঠেলাগাড়ির দাপট। হাওড়া সেতুতে ওঠার মুখেও যানজট। রাস্তার বেশির ভাগ অংশই ঠেলার দখলে। হাওড়া সেতুর ফুটপাথ দোকানদারের দখলে থাকায় পথচলতি মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হন। সেতুর উপরেই সারি দিয়ে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ঠেলা। ফলে সেতুতেও যানজট হয়।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে হাওড়া স্টেশনের দিকে আসা বাস থেকে যাত্রী নামার সময়ে বিপর্যস্ত হয় গোটা ট্রাফিক ব্যবস্থা। ময়দান, সালকিয়া, বেলুড় ও বালিগামী বাসগুলি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। যাত্রীরা দীর্ঘ ক্ষণ ওঠানামা করায় শুরু হয় যানজট। সে সময় রেল মিউজিয়াম বা হাওড়া স্টেশনের দিকে আসা ট্যাক্সি বা গাড়িও আটকে পড়ে। সেই যানজটের ফলে হাওড়া সেতুতেও যানজট তৈরি হয়। বিকেল ৫টার পর থেকেই যাত্রী ও বাসের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় অন্য সময়ের তুলনায় এই সময়ে ভোগান্তি বাড়ে।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বলেন, “রোজকার এই যানজটের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। যানজট না হওয়ার
জন্য পুলিশ সব রকমের ব্যবস্থা
নেবে।” পাশাপাশি, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডেরও বক্তব্য, “যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ
ব্যবস্থা নেবে।” |