ব্র্যান্ড-ডুয়ার্সকে পরিচয় করাতে উদ্যোগ উৎসবে
ন্তব্য যখন ডুয়ার্স। দার্জিলিং, সিকিম বা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটানে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনার লেজুড় হিসেবে নয়, স্রেফ ডুয়ার্সের জন্যই ডুয়ার্সে যাওয়া।
‘ডেস্টিনেশন ডুয়ার্স’। পর্যটন মানচিত্রে ডুয়ার্সের উপস্থিতি আরও নজরকাড়া করার কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া মাদারিহাটে শুরু হয়েছে ‘সেন্ট্রাল ডুয়ার্স ইকো-ফেস্ট’। জলদাপাড়া-সহ চিলাপাতা এবং বক্সাতে চলবে উৎসব। ছ’দিনের উৎসবে অরণ্য ছাড়াও ডুয়ার্সের সংস্কৃতি, জীবনযাপন এবং চা বাগানকেও তুলে ধরতে চান উদ্যোক্তারা। উদ্যোগটে স্বাগত জানালেও স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের আলোচনায় বারবারই আসছে, ‘ডুয়ার্সে পর্যটন-পরিকাঠামো এখনও সামগ্রিক ভাবে পর্যটক-বন্ধু হয়ে উঠল না কেন’? বন দফতর এবং পর্যটন দফতরের মধ্যে ‘সমন্বয়ের অভাব’কে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা।
রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী অবশ্য বলেন, “পর্যটন শিল্পের জন্য বন দফতরের কী ভূমিকা তা ওই দফতরের মন্ত্রী বলতে পারবেন। তবে আমার দফতরের থেকে উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য যা করণীয় তা করা হচ্ছে।” উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন আবার এ ধরনের কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পর্যটকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে বিষয়গুলি দেখা হবে।”
ডুয়ার্সের লাটাগুড়িতে বিদেশি পর্যটকেরা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গের পর্যটন নিয়ে বারবার জোর দেওয়ার কথা বললেও সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরই সে ভাবে বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের একটি বড় অংশের অভিযোগ। সরকারি তরফে উত্তরবঙ্গে পর্যটনের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষদের যোগদান বাড়াতে ‘হোম স্টে’ বা ‘রুরাল ট্যুরিজম’-এ জোর দেওয়া হলেও ডুয়ার্সের বহু গ্রামে এখনও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারাই। তাঁদের অভিযোগ, উন্নত যোগাযোগ-ব্যবস্থা বা পানীয় জলের মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় জয়ন্তী, বক্সা, চিলাপাতার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যটনের যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না।
এলাকাবাসীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলে, শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের জলদাপাড়া, গরুমারা বা বক্সায় যাওয়ার দীর্ঘ পথের ধারে পর্যটকদের জন্য একটিও সরকারি শৌচাগার নেই। দু’-তিন ঘণ্টার পথে যাওয়ার সময় চা-কফির পেয়ালা হাতে খানিক জিরিয়ে নেওয়ার জন্য নেই ক্যাফেটেরিয়াও। জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় বেসরকারি ভাবে থাকার বন্দোবস্ত থাকলেও, গহীন অরণ্যে বন-বাংলোতে রাত কাটাতে চাইলে সুযোগ মেলা ভার। পর্যটকদের একটা অংশের অভিজ্ঞতা, বন-বাংলো থাকলেও তাতে জায়গা মিলবে কি না, নির্ভর করে বন দফতরের কিছু কর্তার মর্জির উপরে।
উত্তরবঙ্গে একশৃঙ্গ গন্ডারের বাসভূমি জলদাপাড়ায় রয়েছে হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গলে ঘোরার সুবিধা। তবে, বন দফতরের বাংলোর অতিথিরাই সে ক্ষেত্রে বিশেষ প্রাধান্য পান। যাঁরা বাংলোয় জায়গা না পেয়ে বেসরকারি হোটেল-লজে থাকেন, সেই পর্যটকদের জন্য থাকে সীমিত সংখ্যক টিকিট। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সেই টিকিট মেলে না বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও পর্যটকদের সঙ্গে বনকর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহারের ঘটনাও শোনা যায় প্রায়ই। পর্যটন সংস্থার কর্ণধার সম্রাট সান্যালের কথায়, “দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের পক্ষেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে হাতির পিঠে চাপার টিকিট কাটা সম্ভব নয়। অসম কিংবা দেশের কোথাও এ ধরনের ঝক্কি পোয়াতে হয় না পর্যটকদের।”
ভ্রমণ-লেখক গৌরিশঙ্কর ভট্টাচার্যের মত, “ডুয়ার্সে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আরও উন্নত হওয়া দরকার। এখানকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাটই ভাল নয়। পর্যটনের বিকাশে যা বড় প্রতিবন্ধক। বন দফতরের ওয়াচ-টাওয়ারের সিঁড়ি, টিনের চাল চুরি যাচ্ছে গভীর জঙ্গল থেকে। প্রতিনিয়ত গাছ চুরি হওয়ায় ফলে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলও। এগুলো কি কেউ দেখবে না?”
‘ইকো ফেস্ট’-এর চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, “সারা পৃথিবীতেই এখন ইকো-ট্যুরিজমকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বনে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে গাছকাটা অনেকটা বন্ধ হবে বলেই মনে হয়, কারণ অন্যত্র তা হয়েওছে। পর্যটক আর তাঁদের সঙ্গে জড়িতেরা হলেন বন দফতরের চোখ ও কান। এই বিষয়টি বন দফতরের ভাবা দরকার।” তবে শুধু সমালোচনাকে সঙ্গী করে নয়, ‘ইকো-ফেস্ট’-এর আয়োজকেরা চান, যে সব বিষয়গুলো তুলে ধরলে পর্যটকদের কাছে ডুয়ার্সকে ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া যায়, সেগুলোরই সন্ধান দেওয়া। ডুয়ার্সের পরিচিত জঙ্গল ছাড়াও রাভা, কোচ, টোটো-সহ নানা জনজাতির গ্রাম, সংস্কৃতি, হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে উৎসবে। বেশ কয়েকটি বন-বস্তি ও রাভা, মেচ, টোটো উপজাতিদের গ্রামে ‘হোম ট্যুরিজম’ করার চেষ্টা হচ্ছে। পর্যটকদের আপ্যায়ন-সহ নানা বিষয় নিয়ে ওই গ্রামবাসীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। তা ছাড়া, চা বাগান এবং কী ভাবে কারখানায় চা তৈরি করা হয়, সে সমস্ত বিষয়গুলি পর্যটকদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেসরকারি ভাবে বক্সা পাহাড়ে ট্রেকিং, নদীর পাড়ে হাঁটা, জনজাতিদের গ্রামে ঘোরার মতো পর্যটন-ভাবনা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে।
সম্রাট সান্যাল, রাজ বসুদের বক্তব্য, “দার্জিলিং, সিকিম বা ভুটানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ কেবল দু’-এক দিনের জন্য ডুয়ার্সে আসেন। এই উৎসব ব্র্যান্ড-ডুয়ার্সকে পর্যটকদের কাছে হাজির করাতে চাইছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.