মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪ লক্ষ টাকা ফি নিয়ে ছাত্রভর্তির নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্র হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে বিষয়টি নিষ্পত্তির ভার দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডব্লিউবিইউটি) উপাচার্যকে। দু’পক্ষকে ডেকে শুনানির পরে সম্প্রতি উপাচার্য ওই ছাত্রের থেকে নেওয়া টাকা সুদ-সহ ফেরতের পরামর্শ দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। শুধু তাই নয়, ক্ষতিপূরণ বাবদ ছাত্রটিকে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ডব্লিউবিইউটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে বি ফার্ম পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন সৈয়দ বরকত আলি নামে ওই ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন না করলেও তাঁর কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল। নানা কলেজে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পৌঁছন কাঁকসার পানাগড়ের ওই ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজে। ওই ছাত্র অভিযোগ করেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে আশ্বাস দেয়, ওই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে কোনও অসুবিধা হবে না। সে জন্য তাঁর বাবার কাছে ‘ক্যাপিটেশন ফি’ বাবদ ৪ লক্ষ টাকা নেওয়া হয় বলে বরকতের অভিযোগ। ডব্লিউবিইউটি সূত্রে আরও জানা যায়, বরকত প্রথম ও দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষায় বসে কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর বা কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াই। জানা গিয়েছে, রেজিস্ট্রেশনের জন্য বরকতের নাম ডব্লিউবিইউটি-র কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা অর্জন না করায় তাঁর নাম বাতিল হয়ে যায়।
|
২০০৯ সালে বরকতের পরিবার হাইকোর্টে ডব্লিউবিইউটি-র উপাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। গত বছর ১০ ডিসেম্বর আদালত কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। উপাচার্য রঞ্জন ভট্টাচার্য ১ নভেম্বর তাঁর কার্যালয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং ওই পড়ুয়া, দু’পক্ষকেই শুনানিতে ডাকেন। কলেজের তরফে ছিলেন ডিরেক্টর আর কে সিংহ। ডব্লিউবিইউটি সূত্রে জানা যায়, সেখানে ডিরেক্টর লিখিত ভাবে জানান, বরকত আলির ভর্তির বিষয়টি ভুল ছিল। এই ধরনের ঘটনায় তাঁরা অনুতপ্ত। বরকতও লিখিত ভাবে জানান, অন্য নানা কলেজ তাঁকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি নেওয়া যাবে না বলে জানায়। কিন্তু কাঁকসার কলেজটি তাঁকে নিশ্চয়তা দেয়, তাঁর এই কোর্স করতে কোনও অসুবিধা নেই। উপাচার্য রঞ্জনবাবু জানান, ওই ছাত্র ভেবেছিলেন ‘ক্যাপিটেশন ফি’ দিলে তাঁর ভর্তি বৈধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয় না। তিনি বলেন, “কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের বেআইনি কাজ কাম্য নয়।”
উপাচার্য রঞ্জনবাবু কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানান, ঘটনার জন্য ওই ছাত্র এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ, দু’পক্ষই দায়ী। তবে কলেজ এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে। তাই ওই ছাত্রের কেরিয়ারের কথা ভেবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, ভর্তির সময়ে নেওয়া চার লক্ষ টাকা বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ ফেরত দিতে হবে। আরও পরামর্শ দেওয়া হয়, ওই পড়ুয়াকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুক কলেজ। এ ছাড়া, ওই কলেজের কাজকর্ম বিভাগীয় ভাবেও খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য।
কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই পরামর্শ মানতে রাজি নয়। কলেজের চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার অগস্তির দাবি, ক্ষতিপূরণ ঠিক করার এক্তিয়ার উপাচার্যের নেই। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে দাবি প্রদীপবাবুর। উপাচার্য রঞ্জনবাবু অবশ্য বলেন, “আমি যা করেছি, তা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতির নির্দেশ মেনেই।” |