|
|
|
|
দিল্লি থেকে হাতি-মৃত্যুর তদন্তে কেন্দ্রীয় বনকর্তা
নিজস্ব প্রতিবেদন |
উত্তরবঙ্গের রেলপথে ক্রমান্বয়ে হাতি-মৃত্যুর ঘটনায় রেল ও রাজ্য সরকারের চাপানউতোরে বিরক্তি প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক।
বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। বনমন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “উদ্বেগ নয়, বরং রেল ও
রাজ্য সরকারের বন বিভাগ দায় এড়াতেই ব্যস্ত।”
দিল্লিতে এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ, শুক্রবার সরজেমিন তদন্তে দুর্ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর জেনারেল চৈতন্য মূর্তি। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বন দফতরের পাশাপাশি রেলের কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। বনমন্ত্রকের এক যুগ্ম সচিব বলেন, “বনকর্তা, রেল কর্তৃপক্ষ এমনকী যে সব জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে সেখানকার স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলা হবে। এ ব্যাপারে একটা স্থায়ী সমাধান সূত্র বের করার সময় হয়েছে।” না হলে উত্তরবঙ্গে হাতির অস্তিত্ব নিয়েই সঙ্কট দেখা দেবে বলে ওই কর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বন দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ১১ মাসে ট্রেনের ধাক্কায় মরেছে অন্তত ১৮টি হাতি। দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রামেও গত অক্টোবর মাসে রেলের বলি হয়েছে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতি। এ ছাড়াও গত কয়েক মাসে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় চোরাশিকারিদের হাতে মারা গিয়েছে অন্তত ৫টি হাতি। হানি-হননের এই ধারাবাহিক ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রোজেক্ট এলিফ্যান্টের কর্তারাও। অচিরেই তাঁরাও উত্তরবঙ্গে একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। |
 |
ট্রেনের ধাক্কায় একদল হাতির মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়তে বুধবার রাত থেকে চাপরামারি
জঙ্গল ঘেরা নাগরাকাটার জলঢাকা সেতু এলাকায় ভিড়। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক। |
তবে, ঘন ঘন বৈঠক, বিশেষজ্ঞদের আনাগোনা সত্ত্বেও এ সমস্যার স্থায়ী কোনও সমাধানের উপায় দেখছেন না দেশের পরিচিত হস্তি বিশেষজ্ঞ ধৃতিকান্ত লাহিড়ি চৌধুরী। তিনি বলেন, “ওই রেলপথে যত দিন দ্রুত গতির ট্রেন চলাচল থাকবে, তত দিন উত্তরবঙ্গে হাতি মৃত্যুর ঘটনা হ্রাস পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না।” তাঁর এই হতাশার মধ্যেই পশুপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে আশঙ্কা উস্কে দিয়েছে রংপো-সেবক রেলপথের সম্ভাবনা।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে ২০০৯-এর ৩০ অক্টোবর শিলিগুড়ির অদূরে সেবক ও সিকিমের রংপোর রেলপথ তৈরির শিলান্যাস হয়েছিল। ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রেলপথ হলে তার একটা বড় অংশই যাবে মহানন্দা জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে। উত্তরবঙ্গের হস্তিকুলের একটা বড় অংশ বছরের বেশির ভাগ সময়েই থাকে ওই বনাঞ্চলে। এক পদস্থ বনকর্তা বলেন, “চল্লিশ থেকে ষাটটি হাতির একটি দল সারা বছরই ওই জঙ্গলে থাকে। মহানন্দা ফুঁড়ে রেলপথ বসলে হাতি-মৃত্যুর ঘটনা নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।” স্থানীয় বেশ কয়েকটি পশুপ্রেমী সংগঠন অবশ্য দাবি করেছে রেলপথ বসার আগে সেবক এলাকার মাটি পরীক্ষা করে নেতিবাচক ফল মিলেছে। এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ওই পথে ট্রেন চালানো আদৌ সমীচীন কি না তা প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়কে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিষয়টি আপাতত তাই সম্পূর্ণই পিএমও-র এক্তিয়ারে।
এ দিন, বিকেলে চাপড়ামারি বন বাংলোতে রেল কর্তাদের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনায় বসেন রাজ্যের বনকর্তারা। সেখানে ট্রেনের গতি বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও তা না মানার অভিযোগ করেন তাঁরা। যা শুনে রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম বীরেন্দ্র কুমারের জবাব, “রাতে এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো বন্ধ করা সম্ভব নয়।” সেই সঙ্গে নাগরাকাটার জলঢাকা সেতু সংলগ্ন ওই এলাকা ‘হাতির করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত নয় বলেও দাবি করেন তিনি। বন দফতরের তরফে এ দিন অবশ্য ট্রেন চালক বিশ্বজিৎ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে নাগরাকাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ট্রেনটি যে প্রবল বেগে আসছিল তার প্রমাণ মিলেছে হাতিগুলির ছিন্নভিন্ন দেহ দেখে। ইঞ্জিনের ধাক্কায় একটি হাতির দেহ সেতুর উপর ঝুলে ছিল এ দিনও। পরে গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে দেহটি নামানো হয়। লাইনের প্রায় একশো মিটার এলাকা জুড়ে এ দিনও ছড়িয়ে ছিল হাতির দেহাংশ, রক্ত আর ইঞ্জিনের ভাঙা যন্ত্রাংশ।
বনকর্মীরা এ দিন পাঁচটি হাতির দেহ খুঁজে পেয়েছেন। তার মধ্যে দু’টি হস্তিনী গর্ভবতী ছিল বলেও ময়না তদন্তে জানা গিয়েছে। জঙ্গলের গভীরে কুনকি হাতি নিয়ে খোঁজও শুরু করেছেন বনকর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, বেশ কয়েকটি আহত হাতি জঙ্গলের গভীরে ঢুকে গিয়েছে। হয়তো, দিন কয়েক পরে তাদের দেহ মিলবে।
|
পুরনো খবর: ট্রেনের ধাক্কা, এ বার মৃত অন্তত সাতটি হাতি |
|
|
 |
|
|