কলকাতায় বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন নামে একটি অনুষ্ঠান হত। পারিবারিক সূত্রে এই সম্মেলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এর কর্মীও হয়েছি। মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর সম্মেলন আবার শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। ’৮৯ সালে মান্না দে আবার গাইলেন। সে দিন প্রথম শিল্পী ছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তখন উনি সাধারণত মঞ্চে নজরুলগীতিই গাইতেন, আধুনিক গান গাইতেন না। সে দিন প্রথমার্ধ জমিয়ে দিলেন। পরে মঞ্চে আড়ালে বললেন, মান্নাবাবু গাইবেন তো। এ বারে তাই একটু চার্জড ছিলাম।
এর পর প্রবল হাততালির মধ্য দিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করলেন মান্না দে। তখন ফাল্গুন মাস। মান্না দে গান শুরু করলেন। মাত্র দুটি গান গেয়েছেন, শুরু হল ঝড়, বৃষ্টি। সারা প্যান্ডেল জুড়ে তার তাণ্ডব। ত্রিপল ভেদ করে মঞ্চের উপর বৃষ্টি পড়ছে অঝোর ধারায়। গান গাওয়া সম্ভব নয়। মান্না দে গান গাওয়া বন্ধ করলেন। বৃষ্টি থামল প্রায় ঘণ্টাখানেকক বাদে। দর্শকদের বসার জায়গায় তখন জল দাঁড়িয়ে গেছে। মাটিতে বসার আসন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। মান্না দে শ্রোতাদের জিজ্ঞাসা করলেন, গান হবে কি না? সবাই হই হই করে উঠলেন। মান্না দে মাইকে বললেন, মা বোনেরা কষ্ট করে এসে স্টেজের উপর বসে পড়ুন। ভাইয়েরা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে শুনুন। এর পর প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা গেয়ে গেলেন মান্না দে। একের পর এক কালজয়ী সুপার হিট বাংলা গান। দর্শকরা জলে ভিজে, জলের উপর দাঁড়িয়ে সম্মোহিত হয়ে শুনলেন সেই গান।
এ এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা, যা আজও স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-৫৫ |