পড়ুয়া নেই, ৫০টি স্কুল বন্ধের ভাবনা সংসদের
স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিকাঠামোই রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব ভবন, নিয়মিত মেলে সরকারি অনুদানও। কিন্তু যাঁদের জন্য স্কুল অভাব রয়েছে সেই কচিকাচাদেরই।
জেলা প্রাথমিক সংসদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা জুড়ে বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুল রয়েছে যেখানে শিক্ষকের অনুপাতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম। ধুঁকতে থাকা স্কুলগুলিকে তাই তুলে দেওয়ার কথা ভাবছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। ওই সমস্ত স্কুলের পড়ুয়াদের কাছাকাছি অন্য স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারেও কথাবার্তা চলছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ বলেন, “জেলায় এই ধরণের প্রাথমিক স্কুল রয়েছে প্রায় ৫০টি। স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হলেও সেখানকার পরিকাঠামো ব্যবহার করা হবে। শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাঠানো হবে অন্যান্য স্কুলে।” এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে এক জন শিক্ষক রয়েছেন এমন বহু স্কুলের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে বলেও তাঁর দাবি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষকের ঘাটতি তিন হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রতি মাসে জেলা থেকে গড়ে ৭০ জন শিক্ষক অবসর নিচ্ছেন। মাসখানেক আগে সংসদের নজরে আসে, জেলার ১০৫টি স্কুলে এক জন করে শিক্ষক রয়েছেন। ঘাটতি মেটানোর জন্য অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, পড়ুয়ার অনুপাতে যে সব স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা বেশি, সেই সমস্ত স্কুল থেকে শিক্ষকদের অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দেশ মানার ফলে বর্তমানে আর ৬০টি এমন স্কুল রয়েছে যেখানে একজন শিক্ষক আছেন।
তালা বন্ধ পড়ে রয়েছে কালনার কাটিগঙ্গা প্রাথমিক স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব চক্রের অন্তর্ভূক্ত কালনা শহরের কাটিগঙ্গা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেমন পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ১৮। রয়েছেন দু’জন শিক্ষক। ওই স্কুলটিকেও বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে। ঠিক হয়েছে, এই স্কুলের পড়ুয়াদের কাছাকাছি মহিষমর্দিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। মহিষমর্দিনী স্কুলে প্রায় ৭০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। আছেন তিন শিক্ষক। বছর দেড়েক আগে শহরের জনকল্যাণ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছাত্রসংখ্যা মাত্র ৫ হয়ে যাওয়ায় স্কুলটিকে তুলে দেওয়া হয়।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দাবি, পড়ুয়া সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে এরকম যে ৫০টি স্কুল চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগই শহরাঞ্চলে। কিন্তু শহরের প্রাথমিক স্কুলগুলোয় পড়ুয়াদের অভাব কেন? অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের মতে, গ্রামের তুলনায় শহরে একই এলাকায় একাধিক প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। তাছাড়া অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করার প্রবণতা রয়েছে এবং অনেকক্ষেত্রেই এলাকার বিশেষ কোনও সরকারি স্কুল অভিভাবকদের পছন্দের তালিকায় থাকে। ফলে অনেকেই ঘরের কাছে প্রাথমিক স্কুল থাকলেও সেখানে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করান না। এছাড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলে এখনও ভাল মতো ইংরেজি পড়ানো হয় না, এ ধারণাও রয়েছে অনেকের।
পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়া বেশিরভাগ স্কুলই শহর বা শহর লাগোয়া এলাকার। আমরা পূর্ব চক্রের তরফে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শককে একটি লিখিত প্রস্তাব দিতে চলেছি। তাতে জানানো হবে ছাত্র অনুপাতে স্কুলগুলিতে শিক্ষকের বণ্টন কী ভাবে করা হয়। আরও জানানো হবে, এলাকার স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করার নিয়মের ব্যাপারে। সে ক্ষেত্রে পুরসভা, চক্রসম্পদ কেন্দ্রের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথমে ফর্ম দেওয়া হতে পারে। ওই ফর্ম দেখে এলাকার স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের ভর্তি করা যেতে পারে। মৌখিক ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই লিখিত আকারে বিষয়টি জানানো হবে।” এই ব্যাপারে সংসদ চেয়ারম্যান বলেন, “কাছাকাছি স্কুলে এলাকার পড়ুয়াদের ভর্তি করার বিষয়টি ভাবনায় রয়েছে। প্রস্তাবটি লিখিত আকারে এলে আলোচনা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.