পেঁয়াজ উৎপাদনে এই রাজ্যকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্য আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই নানা জেলায় পেঁয়াজ চাষের জমি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে উদ্যান পালন দফতর। রাজ্য সরকার কোচবিহারে পেঁয়াজ চাষের এলাকা ৫৫০ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ হেক্টর করতে চাইছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলায় পেঁয়াজ চাষের এলাকা প্রায় দ্বিগুণ করে তোলা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে চাষিদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
চাষিদের ওই প্রশ্ন তোলার কারণ কী? জেলায় খোলা বাজারে ভাল বীজের অভাব রয়েছে। ৫৫০ হেক্টর এলাকায় পেঁয়াজ চাষেই জেলায় প্রায় ২০ কুইন্টাল বীজ দরকার হয়। এলাকা বাড়লে বীজের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি বাড়তি বীজ মজুত করার ঝুঁকি নিতে নারাজ। ফলে কী ভাবে বীজের চাহিদা মেটানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোচবিহার জেলা সার ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সম্পাদক রবিরঞ্জন ভাদুড়ি বলেন, “কয়েক বছর আগেও পর্যাপ্ত পেয়াজ বীজ আনা হত। কিন্তু চাহিদা না থাকায় পরপর ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই পেঁয়াজ বীজ তোলেন না। সরকারের পরিকল্পনায় চাষি কতটা সাড়া দেবেন তা নিশ্চিত না হয়ে আবার লোকসানের চিন্তা বাড়াতে চাই না।” ব্যবসায়ীদের অনীহা দেখে আগ্রহী চাষিদের মধ্যে ২ কুইন্টাল পেঁয়াজ বীজ বিলির পরিকল্পনা করেছেন দফতরের কর্তারা। নাসিক থেকে আনা বীজ ৭৫০ জন আগ্রহী চাষির মধ্যে বিলির পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ওই পরিমাণ বীজে যে সমস্যা মিটবে না তা স্পষ্ট।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের পরিকাঠামো না থাকাও চাষিদের চিন্তা বাড়িয়েছে। চাষিরা জানান, জেলায় ১২টি হিমঘর থাকলেও তার একটিতেই পেঁয়াজ সংরক্ষণের পরিকাঠামো নেই। শীতের মরসুমে জেলার খেত থেকে তোলা পেঁয়াজ সরাসরি বাজারে বিক্রির জন্য পৌঁছে যায়। উৎপাদন বেড়ে গেলে কী ভাবে কোথায় তা মজুত রাখা হবে তার পরিকাঠামো নেই। ভিন রাজ্যে প্রাকৃতিক উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও, কোচবিহারে তা হয়নি। কোচবিহারের মরা নাওতারা গ্রামের কৃষক অমেশ বর্মন বলেন, “বছর পাঁচেক আগে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। একেবারে ছোট আকারের ফলন হয়েছিল। ফলে আশানুরূপ দাম পাইনি। তার পর থেকেই পেঁয়াজের ভাবনা মাথায় রাখি না।” চকচকার গৌতম পণ্ডিত বলেন, “ভাল বীজের সমস্যা শুধু নয়। গোটা জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের হিমঘর নেই। স্রেফ মুখের কথায় অহেতুক ধান আর আলুর চাষ বদলে পেঁয়াজ চাষের প্রশ্নই নেই।”
উদ্যান পালন দফতর জানিয়েছে, কোচবিহারে বছরে গড়ে ১৩ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে আট হাজার টন পেঁয়াজ। ফলে ভিন রাজ্যের উৎপাদিত পেঁয়াজ কোচবিহারের বড় ভরসা। নাসিকের পেঁয়াজ ক্রেতার পচ্ছন্দের শীর্ষে। রাজ্য জুড়ে পেঁয়াজের বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলার বাজারেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিকোচ্ছে। সমস্যা মেটাতে দুই দিনে উদ্যান পালন দফতর কেজি প্রতি ২৪ টাকা ভর্তুকি দিয়ে মোট ৮০০ কেজি পেঁয়াজ ৩৬ টাকা কেজি দামে বিক্রি করেছে। তাতে বাজার দরে কোনও প্রভাব পড়েনি। জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “সিতাইয়ে বহুমুখী হিমঘর তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে খড়ের ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ নিয়েও চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অনেকেই বীজের বদলে কন্দ লাগিয়ে পেঁয়াজের চাষ করেন। তবু আগ্রহীদের বীজ ও নতুন চাষিদের অনুদান দেওয়া হবে।” দিনহাটার আনোয়ার হোসেন এই প্রসঙ্গে বলেন, “ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ লাগানো হয়। নভেম্বর অর্ধেক পেরিয়েছে। সরকারি বীজ আসেনি, জোগানও কম। সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেই। এ সব হলে তার পর ভাবা যাবে।” |