বরাদ্দ ছাঁটতে গিয়ে প্রায় বিদ্রোহের মুখে চিদম্বরম
লোকসভা ভোটের পাঁচ মাসও বাকি নেই। এই অবস্থায় আর্থিক ঘাটতি কমাতে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের দাওয়াই দিতে গিয়ে সরকারের মধ্যেই ভয়ঙ্কর বিরোধিতার মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অর্থ মন্ত্রকের এই পদক্ষেপে আপত্তি করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী। জয়রাম রমেশ, গুলাম নবি আজাদ, কে ভি টমাসের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এ ব্যাপারে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বলেও জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রে। তাঁদের বক্তব্য, এমনিতেই সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ রয়েছে মানুষের। তার ওপর ভোট মরসুমে সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই হলে ভরাডুবি হতে পারে কংগ্রেসের। দলীয় সূত্রের খবর, জয়রামরা এ কারণে দলের নেতাদেরও এখন চিদম্বরমের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে চাইছেন।
আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে গড় জাতীয় উৎপাদনের ৪.৮ শতাংশে সীমিত রাখার ব্যাপারে গত বাজেটে ঘোষণা করেছিলেন চিদম্বরম। সেই কারণে বিভিন্ন মন্ত্রকের ব্যয়ের ওপর ধারাবাহিক ভাবেই কড়া নজর রেখে চলেছেন তিনি। আর্থিক ঘাটতি যাতে সীমা না ছাড়ায় সে জন্য গত কাল অর্থ মন্ত্রকের তরফে সব মন্ত্রকের কাছে ফের একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প ধরে ধরে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রকগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, মার্চের মধ্যে তারা কতটা খরচ করতে পারবে। যাতে বরাদ্দের বাকি টাকা ছাঁটাই করা যায়। এই চিঠি পেয়েই বেজায় চটেছেন মন্ত্রীরা।
চিঠিটি হাতে পাওয়ার পর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখে চিদম্বরমের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম। কারণ, শুধু তাঁর মন্ত্রকেরই বিভিন্ন প্রকল্পের খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন চিদম্বরম। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা এবং ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনা ও গ্রামীণ জীবিকা কর্মসূচি খাতে ২ হাজার কোটি টাকা করে ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, জয়রাম আজ বলেন, “অর্থ মন্ত্রকের কাজ কেবল হিসেব রক্ষকের মতো হতে পারে না। সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলির জন্য রাজনৈতিক সংবেদনশীল হওয়াটাও জরুরি।” সূত্রের খবর, এ বিষয়ে জয়রাম ক্ষোভ জানিয়েছেন সনিয়া-রাহুলের কাছেও। রাহুলকে তিনি জানিয়েছেন, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির খাতে কখন অর্থ বরাদ্দ করতে হয় আসলে সেটাই জানেন না চিদম্বরম। কারণ, তিনি কখনও স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা গ্রামোন্নয়নের মতো মন্ত্রকে কাজ করেননি। উদাহরণ দিয়ে তিনি রাহুলকে জানান, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ অর্থ খরচ হয়নি বলে টাকা ছাঁটতে চাইছে অর্থ মন্ত্রক। অথচ অর্থ মন্ত্রক জানেই না বর্ষার কারণে ইন্দিরা আবাস যোজনায় জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টাকা দেওয়া হয় না। কারণ, ওই সময় টাকা দিলে বাড়ি না বানিয়ে মানুষ অন্য খাতে তা খরচ করে ফেলবেন। তা ছাড়া একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ভোটের আগে বরাদ্দ ছাঁটাই আত্মহত্যার সমতুল হবে বলে রাহুলকে জানিয়েছেন জয়রাম।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, শুধু গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক নয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও খাদ্য মন্ত্রককে পাঠানো চিঠিতেও বিপুল বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। এর মধ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন এবং উচ্চতর শিক্ষা মিশনেও বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের কথা বলা হয়েছে।
যদিও রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির এই দ্বৈরথে চিদম্বরমেরও পাল্টা যুক্তি রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আর্থিক ঘাটতি, মুদ্রাস্ফীতির হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষমতা ইত্যাদির মতো কিছু বিষয় একেবারে পাথরে খোদাই করে রাখার মতো হওয়ার উচিত। সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী তা পরিবর্তন করা উচিত নয়।”
অর্থ মন্ত্রকের তরফে এ-ও বলা হচ্ছে, গত অগস্টে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ সীমিত রাখতে সচেষ্ট হন চিদম্বরম। কেননা, আর্থিক ঘাটতি বাড়ার জন্য তখন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের রেটিং এজেন্সিগুলি ভারতকে ‘ডাউনগ্রেড’ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল। অর্থমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই আর্থিক ঘাটতি ৫.১ শতাংশে বেঁধে রাখা সম্ভব হয়েছিল।
জয়রাম-আজাদদের অবশ্য বক্তব্য, এটা করতে গিয়ে যদি সরকারেরই রেটিং কমে যায় তা হলে চিদম্বরমের গদি বাঁচবে কি? চিদম্বরমের ওপর তাঁরা এতটাই চটেছেন যে এক মন্ত্রী আজ মন্তব্য করেন, “চিদম্বরম দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক পরিস্থিতি যে শুধরোয়নি তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। ফলে এখন ইগো সমস্যায় ভুগছেন তিনি। আর্থিক ঘাটতি ৪.৮ শতাংশের বদলে যদি ৪.৯ শতাংশ হয়, তা হলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?”
সরকারি সূত্রে খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরেও জয়রাম, কে ভি টমাসরা আজ প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ঘিরে ধরেন। তবে ঘরোয়া মহলে তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর থেকে তাঁরা খুব বেশি সুরাহার আশাও করছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, মনমোহনও অর্থনীতির স্বার্থ রক্ষার জন্যই সওয়াল করতে পারেন। তাই এ ব্যাপারে এখন সনিয়া-রাহুলই ভরসা এখন কংগ্রেসের মন্ত্রীদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.